সাধারণ্যে
প্রবা
প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৩ ১১:০৭ এএম
মো. মুনির হোসেন।
বয়স ৪৪। দৃষ্টিশক্তিরহিত মুনির জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ ১৯ বছর ব্যবসা করছেন।
চোখে না দেখলেও হাতের স্পর্শে আন্দাজ করে নেন কত টাকার নোট, কয়েন। ভিক্ষা নয়। কাজেই
জীবন। এ ভাবনা থেকেই তার এ জীবনসংগ্রাম। প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর সঙ্গে আলাপনের খণ্ডিত
অংশ পাঠকের জন্য তুলে ধরা হলো।
আপনি কি জন্মের পর থেকেই দেখতে পান না?
না। সাত বছর পর্যন্ত অন্য সবার মতো আমিও ভালোমতো দেখতে পেতাম। ঘুমোচ্ছিলাম। চকি মানে খাট এমনিতেই অনেক উঁচু হয়। এমন চকির কোনা থেকে মাটিতে পড়ে যাওয়ার অনেক রিস্ক থাকে। ঘুমের মধ্যেই হুট করে পড়ে গেলাম। মাথায় প্রচণ্ড ব্যথা পাই। নাক-মুখ দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল। শুরুতে বোঝা যায়নি। গ্রামের ডাক্তার চিকিৎসা করলেন। ১০-১২ বছর বয়সে বোঝা গেল আমার চোখে সমস্যা দেখা দিয়েছে। পরে ডাক্তার দেখানো হলো। তিনি জানালেন ভিটামিনের ঘাটতি আর মাথায় আঘাতের কারণে মস্তিষ্কে সমস্যা হয়েছে। আর এজন্য চোখে সমস্যা হচ্ছে।
মো. মুনির হোসেন
জাহাঙ্গীরনগরে এসে থিতু হলেন কীভাবে?
এখানে প্রথম ২০০৪
সালে আসি। শুরুতে কলম বিক্রি করতাম। মরহুম সেলিম আল দীন স্যার আমাকে বসার একটা ব্যবস্থা
করে দেন। ছোট একটা টেবিল বসিয়ে কলম গুছিয়ে রাখতাম। আর মাথার ওপর একটা ছাতা রোদ থেকে
আড়াল করত। এভাবেই শুরু। ভার্সিটির অনেক স্যার-ম্যাডাম প্রথমে দেখে অবাক হতেন। অন্ধ
কেউ ব্যবসা করছে দেখে অনেকে সহানুভূতিও দেখাতেন। পরে আইবিএ বিভাগের তাহেরা ম্যাম আল
বেরুনী হলের সামনে আমার জন্য একটা দোকানের ব্যবস্থা করে দেন। এরপর থেকে চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে সবার সঙ্গে সম্পর্ক কেমন?
এত দিনে সবার
সঙ্গে আত্মীয়ের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। চোখে দেখতে পাই না। তাই হাত আর কানই আমার সম্পদ।
কয়েক দিন কারও কণ্ঠ শুনলে আন্দাজ করতে পারি। আস্তে আস্তে চিনে নিই। আর ভার্সিটিতে কেউ
আমার কাছে বকেয়া রেখে দেন না। যদি কেউ বাকি নেনও ঠিক টাইমে দিয়ে দেন। অন্ধ বলে সহানুভূতি
এমনটা কিন্তু নয়। সবার সঙ্গে এমনই একটা সম্পর্ক আছে। মুনির ভাই বলেই ক্যাম্পাসে এখন
আমি পরিচিত। তা ছাড়া করোনার সময় তো আমাদের ব্যবসার সুযোগ ছিল কম। তখন অনেকে আমার খোঁজ
নিয়েছেন। তখন অনেকে বাকির টাকা নিজে খুঁজে দিয়ে গেছেন। জাহাঙ্গীরনগরের ছাত্রদের ফেসবুক
গ্রুপে আমার খোঁজখবর অনেকে এখনও নেন। সহযোগিতা করেন। ভালোবাসা থেকেই তারা এমনটি করেন।
সামনে কী করার ইচ্ছা?
যত দিন এখানে
আছি থাকব। কাজ করব। সারা জীবন অন্ধ বলে কারও সহানুভূতি চাইনি। নিজের পরিশ্রমেই সব জোগাড়
করতে চেয়েছি। সামনেও তাই করব। আমার তো ভবিষ্যৎ বলে কিছু ছিল না। অন্ধ। কিন্তু অনেক
দূর করলাম। সামনে কী হবে এখন এত ভেবে লাভ নেই।
আলাপনে : আমিরুল আবেদিন