সম্পাদকীয়
সম্পাদক
প্রকাশ : ১৫ নভেম্বর ২০২৩ ০০:৪৭ এএম
ছবি: প্রবা
বন্দরনগরীতে সম্ভাবনার
আরেক দুয়ার খুলে দিল মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ে। প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করেছেন সাড়ে ষোল কিলোমিটার
দীর্ঘ নবনির্মিত এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি। একই সঙ্গে তিনি ১৪ নভেম্বর ‘শেখ হাসিনা
সরণি’ (পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে)সহ ১৫৭ উন্নয়ন প্রকল্পের অধীন ১০ হাজার ৪১টি স্থাপনার
উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন। এর আগে ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনসহ ১৪টি প্রকল্পের উদ্বোধন এবং চারটি নতুন প্রকল্পের
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। এর মাত্র কয়েক দিন আগেই তিনি উদ্বোধন করেছিলেন চট্টগ্রামের
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। অর্থাৎ মাত্র তিন
সপ্তাহেরও কম সময়ের ব্যবধানে বন্দরনগরীর যোগাযোগব্যবস্থায় কয়েকটি মাইলফলক উন্মোচিত
হয়েছে। যোগাযোগব্যবস্থাসহ দেশের নানা ক্ষেত্রের অবকাঠামোগত উন্নয়নে এই যে নতুন নতুন
দুয়ার খুলে দেওয়াÑ এজন্য বর্তমান সরকার সর্বার্থেই সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। দেশের যোগাযোগব্যবস্থাকে
আধুনিক ও গতিশীল করার জন্য সরকারের এই ধারাবাহিক উন্নয়নযজ্ঞ প্রশংসনীয়।
ত্রিশ লাখ শহীদের
রক্ত ও অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ ৫২ বছর পেরিয়ে হাঁটছে ৫৩-এর দিকে।
অথচ যুদ্ধবিধ্বস্ত এই দেশের যাত্রাপথ মসৃণ ছিল না। সেই অমসৃণ পথটি ধরেই বাংলাদেশকে
বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড় করানোর অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বাধীন
সরকার। কিন্তু স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে চার বছরের মাথায় আমাদের সেই উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায়
বাধা সৃষ্টির জন্য নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমানকে। উন্নয়নের ধারাবাহিকতার সেই ছেদ কাটিয়ে উঠতে আমাদের সময় লাগে কয়েক দশক। মাঝে
দেশের মানুষকে অগণতান্ত্রিক শক্তির শাসনের জাঁতাকলেও পিষ্ট হতে হয়। দুর্নীতিসহ নানান
সূচকে আমাদের অবস্থান ক্রমশ নামতে থাকে। সেই অবস্থা থেকে দেশকে বের করে আনতে কাজ শুরু
করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। ধারাবাহিক তিন মেয়াদে
দলটির শাসনামলে উন্নয়ন-অগ্রগতিতে আমাদের ঈর্ষণীয় সাফল্যের দেখা মেলে। বিশ্বের নানা
সূচকেই আজ বাংলাদেশের অবস্থান দৃষ্টান্ততুল্য। ফলে নিজেদের তো বটেই আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও
অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
দেশের মানুষের জীবনযাত্রায় গতি-স্বাচ্ছন্দ্য আনতেই সরকারের নানামুখী
উন্নয়ন প্রকল্প। যার মাধ্যমে আমরা প্রবেশ করেছি নতুন যুগে। স্বপ্নের গণ্ডি ভেদ করে
সব প্রকল্পই এখন দৃশ্যমান বাস্তবতা। বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছানোর
স্বপ্ন দেখাচ্ছে বর্তমান সরকার। সেই স্বপ্নের পথ ধরেই দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা পেয়েছে
কাঙ্ক্ষিত মাত্রা।
আমরা জানি, প্রতিটি সরকারেরই রাজনৈতিক কিছু প্রতিশ্রুতি থাকে। জনগণের
সামনে নির্বাচনের আগে দেওয়া হয় প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি। কিন্তু অধিকাংশ সময়ে রাজনৈতিক
বক্তৃতা-বিবৃতির মঞ্চে দেওয়া প্রতিশ্রুতি আটকে থাকে প্রতিশ্রুতির জালেই। বর্তমান সরকার
উন্নয়নের যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল তার অধিকাংশই সম্পন্ন করার কাজটি সফলভাবে সমাপ্ত
করছে। ফলে একে ভোটের জন্য চমক বলে দাবি করারও সুযোগ নেই। কারণ, একটি প্রকল্প সমাপ্ত
হতে স্বাভাবিকভাবেই দীর্ঘ সময় লাগে। সঠিক ও দূরদর্শী পরিকল্পনা ছাড়া প্রকল্প আটকে থাকে
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্যেই। বর্তমান সরকার শুধু ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের মধ্যে নিজেদের
আটকে না রেখে জনবান্ধব ও জনগুরুত্বপূর্ণ উন্নয়নকাজগুলো যথাসময়ে সমাপ্তের যে উদ্যোগ
নিয়েছে, তা জনমনের জন্যও স্বস্তির।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সন্ধিক্ষণে ভোটারদের মন পেতে এই উন্নয়নমুখী
কাজগুলো ভূমিকা রাখলেও সাধারণ মানুষ সার্বিক উন্নয়ন-অগ্রগতির সবই দেখছেন। গত পাঁচ বছরে
পাওয়া না-পাওয়া নিয়েও সকলেরই রয়েছে স্বচ্ছ ধারণা। তাই এসব উন্নয়নকে শেষ মুহূর্তে বাজিমাত
বলার সুযোগ নেই। বরং উন্নত বাংলাদেশের যে ভিত উন্নয়নের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে, যার মাধ্যমে
নিম্ন আয়ের দেশ থেকে আমরা মধ্যম আয়ের দেশের কাতারে এসেছি, উন্নয়নের ধারাবাহিকতার মধ্য
দিয়ে সেভাবেই পৌঁছে যাব উন্নত দেশের কাতারে। আমরা মনে করি, আগামী নির্বাচনে যারাই ক্ষমতায়
আসুক, পূর্বসূরি সরকারের উন্নয়নের ধারবাহিকতা বজায় রাখবে। উন্নয়নের মৌলিক শর্ত সম্বন্ধে
ঐকমত্যে উপনীত হবে। সাধারণ মানুষের কাছে অর্থনৈতিক নিশ্চয়তার সুফল পৌঁছে দিতে সচেষ্ট
হবে। মানুষের স্বার্থে, দেশের স্বার্থে সাধারণের নিরুদ্বিগ্ন জীবন নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক
সংঘাত-অস্থিতিশীলতাকে প্রশ্রয় না দিয়ে জনজীবনের স্বস্তির ছায়া আনতে কাজ করবে। দুর্নীতি প্রতিরোধ, সুষ্ঠু নির্বাচন,
অর্থপাচার রোধসহ মানবাধিকার নিশ্চিত করতে ভূমিকা রাখবে। সেই সঙ্গে আমাদের আগামী প্রজন্মের
ভবিষ্যৎ যেন অবিবেচক রাজনীতির শিকার না হয় সেদিকেও নজর দেবে।