× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস

সচেতনতাতেই মুক্তি

ডা. মো. ফারুক পাঠান

প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৩ ০০:২৯ এএম

সচেতনতাতেই মুক্তি

১৪ নভেম্বর বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস। প্রতি বছর এ দিবসে একটি প্রতিপাদ্য বিষয় থাকে। এবারের প্রতিপাদ্য, ‘ডায়াবেটিসের ঝুঁকি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন’। সারা বিশ্বে বহুমূত্ররোগ মহামারি হিসেবে চিহ্নিত। দ্রুতহারে এ রোগের রোগী বাড়ছে। অদূর ভবিষ্যতে এ রোগের জন্য পারিবারিক ও আর্থসামাজিক বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে এবং জনজীবন হুমকির মুখে দাঁড়াবে। বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল ডায়াবেটিস ফেডারেশনের মতে, বিশ্বে ৫৩৭ মিলিয়ন মানুষ বহুমূত্র রোগে আক্রান্ত। যে হারে এ প্রকোপ বাড়ছে তাতে ধারণা করা হয়, ২০৪৫ সালে এর সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ৭৮৩ মিলিয়নে। প্রতি ১০ জনের একজন বর্তমানে এ রোগে আক্রান্ত। প্রতি বছর ৭-১০ মিলিয়ন নতুন রোগী চিহ্নিত হচ্ছে। বর্তমানে বাংলাদেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ। ২০৪৫ সালে এ সংখ্যা দাঁড়াতে পারে ২ কোটি ২০ লাখের ওপর। আক্রান্তের সংখ্যা হিসেবে প্রথম ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অষ্টম স্থানে।

২০৪৫ সালে রোগীর সংখ্যা হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান হবে সপ্তম। উদ্বিগ্ন হওয়ার আরেকটি কারণ, শতকরা ৫০-৬০ জনই জানেন না তারা এ রোগে আক্রান্ত। যেহেতু লক্ষণ থাকে না ফলে আক্রান্তের অনেকেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন না। যখন ডায়াবেটিস রোগ নির্ণয় হয়, দেখা যায় তার বড় অংশই ডায়াবেটিসজনিত বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ১০ বছরের ওপরে যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত, তার ৩০-৪০ শতাংশ হার্ট, প্রায় ৩৫ শতাংশ কিডনি, একই হারে চোখ ও স্নায়ুর সমস্যায় ভুগছে। এর বড় অংশ একসঙ্গে দু-তিনটি জটিলতায় ভোগে। অকালমৃত্যু বরণ করায় আয়ুষ্কালও কমে যাচ্ছে।

২০০৬ সালে জাতিসংঘে ডায়াবেটিসকে মহামারি রোগ চিহ্নিত করে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আইডিএফ যৌথ উদ্যোগে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ১৪ নভেম্বরকে (ইনসুলিন আবিষ্কারক ফ্রেডরিক ব্যানটিংয়ের জম্মদিন) বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। যেহেতু ডায়াবেটিসের প্রকোপ প্রতিরোধ করাই মুখ্য উদ্দেশ্য তাই কী কী কারণে এ রোগের ঝুঁকি বাড়ছে তা জানা দরকার। জন্মগত, বংশগত, জাতিগত অন্তর্নিহিত যে কারণই থাকুক না কেন, পারিপার্শ্বিক অবস্থার পরিবর্তন না হলে এ রোগের বহিঃপ্রকাশ হয় না। বর্তমানে দ্রুত অর্থনৈতিক পরিবর্তনের ফলে আমাদের জীবনযাত্রার বিরাট পরিবর্তন হচ্ছে। অতিরিক্ত চর্বি, ক্যালরিযুক্ত খাবার ও কায়িক পরিশ্রমের অভাব এ দুই মিলে শরীরের ওজন ও মেদ বৃদ্ধি পায়। বহুমূত্ররোগীর সংখ্যা বাড়ার এটি একটি মুখ্য কারণ। আক্রান্তের শতকরা ৯৫ ভাগই টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগী। বিভিন্ন সমীক্ষার মাধ্যমে বলা সম্ভব হচ্ছে, সুস্থজীবন যাপনের মধ্যে এ রোগের প্রকোপ শতকরা ৬০-৭০ ভাগ ক্ষেত্রে প্রতিরোধ করা সম্ভব। এ রোগের ঝুঁকি আমরা যত আগে জানতে পারব ততই সুস্বাস্থ্যকর-জীবন যাপনের মাধ্যমে এর তীব্রতা কমিয়ে আনতে পারব। বিশ্বে বিভিন্ন দেশ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি নির্ণয়ে নিজস্ব স্কোরিং সিস্টেম চালু করেছে। বাংলাদেশেও এ ঝুঁকির স্কোরিং সিস্টেম তৈরি হয়েছে; যাতে ঝুঁকি জেনে ও দ্রুত সতর্কতা অবলম্বন করা সম্ভব হয়। আপনার ডায়াবেটিস আছে কি না নিকটস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পরীক্ষা করুন এবং চিকিৎসকের শরণাপন্ন হোন। যদি ডায়াবেটিস না থাকে, ঝুঁকি কমানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করুন। যেমন সুষম খাদ্যভ্যাস, প্রতিদিন কায়িক পরিশ্রম ও ব্যায়াম এবং ওজনের দিকে লক্ষ রাখুন।

আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে ‘ন্যাশনাল গাইডলাইন অব ডায়াবেটিস’ প্রতি বছর একবার ডায়াবেটিস নির্ণয়ে পরামর্শ দিয়েছে। ডায়াবেটিস ধরা পড়লে নিকটস্থ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে শর্করা সুনিয়ন্ত্রিত রাখুন এবং ডায়াবেটিসজনিত জটিলতা থেকে নিজেকে রক্ষা করুন। তাই সরকারি-বেসরকারি যে পর্যায়েই হোক না কেন মানুষের দোরগোড়ায় প্রশিক্ষিত জনবল দিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্র গড়ে তোলা দরকার, যাতে সহজেই এ রোগের সেবা জনগণ নিতে পারে। এ লক্ষ্য মাথায় রেখে অ্যাক্সেস টু ডায়াবেটিক কেয়ার সহজলভ্য করার ক্ষেত্রে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে পলিসি মেকারদের অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি ডায়াবেটিস প্রতিরোধে বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ ও টেকসই কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানোর জন্য ‘গর্ভধারণ-পূর্ব সেবা’ নামে একটি বিশেষ প্রকল্প রয়েছে। এ লক্ষ্যে ৪০০ কাজিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তারা পরিকল্পিত গর্ভধারণের ব্যাপারে নবদম্পতিদের পরামর্শ দিচ্ছেন। সারা দেশে স্থাপিত ৫৪টি ‘গর্ভধারণ-পূর্ব সেবা’ থেকে মহিলারা স্বল্পমূল্যে গর্ভধারণসংক্রান্ত সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। মহিলাসহ আগামী প্রজন্মকেও ডায়াবেটিসের ভয়াবহ প্রকোপ থেকে অনেকটাই রক্ষা করা সম্ভব হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর উদ্‌যাপন উপলক্ষে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নন-কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রামের সার্বিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি ‘কান্ট্রি চেঞ্জিং ডায়াবেটিস : মোবাইল ডায়াবেটিস কেয়ার সেন্টার’ নামক কর্মসূচি গ্রহণ করে। ডায়াবেটিস-সেবা তৃণমূল পর্যন্ত পৌঁছে দিতে এবং ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সচেতনতা বাড়াতে আমরা ধর্মীয় নেতাদেরও সম্পৃক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছি। মসজিদে খুতবার মাধ্যমে এবং অন্যান্য ধর্মশালায় ধর্মীয় নেতাদের মাধ্যমে ডায়াবেটিস প্রতিরোধের বাণী আমরা ছড়িয়ে দিতে শুরু করেছি। এর মধ্যে ১০০ মসজিদে ডায়াবেটিস কর্নার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সারা দেশে এ উদ্যোগ নেওয়া হবে। অন্য ধর্মের উপাসনালয় বিশেষ করে মন্দির ও গির্জায়ও একই ধরনের উদ্যোগ আমরা নিতে যাচ্ছি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন উপলক্ষে সরকার টাইপ-১ রোগীদের বিনামূল্যে ইনসুলিন দেওয়ার ঘোষণা করে। বাডাসের সর্ববৃহৎ প্রকল্প ‘বাডাস কমপ্রিহেনসিভ ডিজিটাল হেলথ কেয়ার’-এর মাধ্যমে মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি ডায়াবেটিক রিস্ক স্কোর কাজে লাগিয়ে সরকারের এনসিডিসি, জাইকা, বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতি, আইএফআইসি ব্যাংকের সহায়তা ১ কোটি মানুষের ওপর ডায়াবেটিক স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে সর্বাবস্থায় এ রোগ প্রতিরোধে জরুরি সচেতনতা। 


  • অধ্যাপক ও একাডেমিক পরিচালক, এন্ডোক্রাইন বিভাগ, বারডেম জেনারেল হাসপাতাল
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা