× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সাঁওতাল পল্লীতে বিচারের বাণী যেন না কাঁদে

সম্পাদক

প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৩ ০৯:৪৮ এএম

সাঁওতাল পল্লীতে বিচারের বাণী যেন না কাঁদে

বিলম্বিত বিচারকে শুধু আমাদের দেশেই নয়, অনেক দেশেই বলা হয় অবিচারের শামিল। বিচারপ্রক্রিয়া যত বিলম্বিত হয়, ন্যায়বিচারের সম্ভাবনা ততই হ্রাস পায়। এর বিস্তর নজির আছে। ৮ নভেম্বর প্রতিদিনের বাংলাদেশে ‘বিচারহীন এক হত্যাযজ্ঞ’ শিরোনামে আগুনমুখা ফিচার পাতায় যে প্রতিবেদন উপস্থাপিত হয়েছে, তা ফের আমাদের বিচারপ্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার বিষয়টি সামনে এনেছে। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লীতে হামলা-মামলা, ভাঙচুর-লুটপাট, অগ্নিসংযোগ ও তিন সাঁওতালকে হত্যার সাত বছরেও বিচারকাজ শুরু না হওয়ার অন্তর্নিহিত কারণগুলোও ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লীর সেই দুঃসহতা এখনও তাড়া করে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ওই সদস্যদের।

ওই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার বিচারপ্রক্রিয়া গতিশীলতা পায়নি। তদন্তকাজ থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহলের আইনানুগ যথাযথ প্রক্রিয়াগুলো স্বাভাবিক গতিতে না চলার কারণে ন্যায়বিচারের বাণী নিভৃতে যেন কাঁদছে। পিবিআইয়ের তদন্তের নারাজির পর সিআইডির তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হলেও সাত বছর কেটে গেছে কিন্তু মামলাটির নেই কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি! ২০১৬ সালে গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতাল পল্লীতে মর্মস্পর্শী ঘটনার পর বহুবার সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে মূলত খুন ও উচ্ছেদের পেছনে ইক্ষু খামারের জায়গা দখল। গোবিন্দগঞ্জের বিরোধপূর্ণ ওই জমিতেই অর্থনৈতিক অঞ্চল করার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সেখানে সাঁওতালরা ধান ও মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করলেও তাদের খামারের সিংহভাগ জায়গা দখলের বিষয়ে প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নীরবতা অনেক প্রশ্নেরই জন্ম দেয়। আমাদের স্মরণে আছে, নওগাঁর আলফ্রেড সরেনের কথা। সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, আলফ্রেড সরেনকেও হত্যা করা হয় জায়গা দখলকেন্দ্রিক কারণেই! তিনি ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর ভূমির অধিকারের ব্যাপারে আন্দোলন করছিলেন। ইতোমধ্যে কেটে গেছে প্রায় দুই যুগ, কিন্তু আলফ্রেড সরেন হত্যার বিচারকাজও শেষ হয়নি! এ রকম নজির আরও আছে। ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের নানা রকম প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে জীবনযাপন করতে হয়, এমন বার্তা সংবাদমাধ্যমে প্রায়ই উঠে আসে। অথচ দেশের সংবিধান তাদের নাগরিক অধিকারের ক্ষেত্রে বৈষম্যজালে জড়ায়নি। তাহলে সংগত কারণেই প্রশ্ন দাঁড়ায়, ক্ষুদ্র জাতি গোষ্ঠীর সদস্যরা কেন তাদের অধিকার বঞ্চিত থাকবেন।

বিলম্বিত বিচারের বিষয়টি শুধু তাদের ক্ষেত্রেই নয়, এর ভুক্তভোগীর সংখ্যা অনেক স্ফীত। ‘স্পর্শকাতর মামলা’ শব্দযুগল আমাদের সমাজের প্রেক্ষাপটে আইনাঙ্গন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রেই নানান প্রেক্ষাপটে উচ্চারিত হয়। কিন্তু আমরা দেখছি, ‘স্পর্শকাতর’ বহু মামলাও দীর্ঘসূত্রতার ছায়ায় ঢেকে আছে। সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের মামলাটিও এ থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্মে এবং সাঁওতাল জনগোষ্ঠীর কাছে বছরের পর বছর ৬ নভেম্বর ফিরে আসে কিন্তু তারা যে নির্মমতা-নিষ্ঠুরতার শিকার হয়েছিল এর প্রতিবিধানের আলো দৃশ্যমান হয় না! আমাদের এ-ও স্মরণে আছে, সাঁওতাল পল্লীতে হামলা-বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা দেশব্যাপী তখন তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল। ঘৃণ্য হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের দাবিতে নাগরিক সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আন্দোলনেও নেমেছিল। দীর্ঘদিন পরও এর বিচার না হওয়ায় বিচারপ্রার্থী তো বটেই প্রতিবাদকারীদের মনেও আশা জাগায়নি, উপরন্তু হতাশা ও প্রশ্নের ছায়া ক্রমবিস্তৃত হচ্ছে।

যেকোনো মামলার ক্ষেত্রে সুষ্ঠু তদন্ত সর্বাগ্রে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, অনেক ঘটনার ক্ষেত্রেই তদন্তকালে সত্য আড়ালের অপচেষ্টা হয়ে থাকে। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তদন্ত কার্যক্রমে যদি অস্বচ্ছতা থাকে, তাহলে অভিযোগপত্র পক্ষপাতমূলক হবে; এটিই তো স্বাভাবিক। এমন নজিরও আমাদের সামনে কম নয়। এই কুনজির যেমন ন্যায়বিচারের পরিপন্থি তেমনি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অবসান তো নয়ই, উপরন্তু অপরাধের হোতাদের নানাভাবে উৎসাহিত করে। গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লীর ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ প্রযুক্তির কল্যাণে ভাইরাল হয়েছিল। সেই দুঃসহ স্মৃতিও অনেকেরই বিস্তৃত না হওয়ারই কথা। গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতাল পল্লীর ওই ঘটনার দীর্ঘদিন পরও সাঁওতাল ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠরি পরিবারগুলোর সদস্যদের খোলা আকাশের নিচে জীবনযাপনের যে চিত্র প্রতিদিনের বাংলাদেশে প্রকাশিত যে প্রতিবেদনে উঠে আসা চিত্র কোনো মানবিক সমাজে কাঙ্ক্ষিত হতে পারে না। ওই নৃগোষ্ঠী পরিবারগুলো এখনও ভুগছে উচ্ছেদ আতঙ্কে। তাদের জীবন যেন অবরুদ্ধ। সাঁওতাল পরিবারের ওই সদস্যদের জন্মভূমি যেমন চিহ্নিত তেমনি তাদের জন্মদাগও মুছে ফেলার যেকোনো কারোর পক্ষেই দুরূহ যুগপৎ চরম অমানবিক অপচেষ্টা। আমরা এক্ষেত্রে রাষ্ট্রশক্তিকে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির পাশাপাশি দ্রুত ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানাই। আমরা এ-ও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, রাষ্ট্র তার কোনো নাগরিককেই অধিকার বঞ্চিত করার এখতিয়ার রাখে না। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা