চলমান সংকট
অজয় দাশগুপ্ত
প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৩ ১২:৫৩ পিএম
অজয় দাশগুপ্ত
নিন্দা ও সমালোচনা প্রিয় বাঙালির অনেকেই কাকে ছাড় দিয়েছে?
রামমোহন, বিদ্যাসাগর, বেগম রোকেয়া, বঙ্গবন্ধু, প্রীতিলতা, রবীন্দ্রনাথ বা নজরুলÑ
সে যে-ই হোন, সবাইকে আঁচড়িয়ে রক্তাক্ত করতেই যেন আমাদের অনেকের সুখ। একবার চোখ
বন্ধ করে ভাবুন তো, দেশ ও সরকারের নিন্দুক বা সমালোচকরা কী করেছেন দেশের জন্য? এই
যে চ্যানেল খুলে ইউটিউবে সামাজিক মিডিয়া ও আড্ডায় তার নিন্দা বা গুজব মুখর সমালোচনা
না করলে ভাত হজম হয় না, এসব মিডিয়া মানুষের কাছে ঘরে ঘরে কীভাবে কখন পৌঁছেছে? কে
পৌঁছে দেওয়া নিশ্চিত করেছেন? একের পর এক অগণতান্ত্রিক শাসক, মৌলবাদ ছিল ঘাড়ের ওপর।
দেশের ভাবমূর্তি ছিল নিম্নগামী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ শাসনে এসে এক এক করে
ইতিহাস শুদ্ধ করেছেন। এরপর জনকল্যাণের চেষ্টায় দিনরাত পরিশ্রম করছেন। ইতিহাস ঘাটু্ন,
তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা করুন কোনো কিছুই অস্পষ্ট থাকবে না। তাছাড়া প্রযুক্তির
বিকাশের এই যুগে তা তো আরও সহজ।
এই যে তার সমালোচনা করেন, একবার বলেন তো তিনি হাত না দেওয়া পর্যন্ত
কেন কোনো সমস্যার সমাধান হয় না? বাজারদর থেকে ক্রিকেট সব বিষয়ে তার হস্তক্ষেপ
লাগে। না লাগলে কী হয়? সবকিছু জট পাকিয়ে তালগোল পাকিয়ে যায়। হাজার কোটি টাকার
গালগল্প শুনে মনে হয়, এর আগে দেশ শাসন করতেন কোনো অশরীরি শক্তিধারী কেউ। টানা তিন
মেয়াদের ধারাবাহিক সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কি দেননি দেশ-জাতিকে? দূর
থেকে দেখি কারা তার ব্যর্থ নিন্দুক, যারা কোনো সুবিধা চেয়ে পায়নি, যারা কথিত পণ্ডিত,
যারা জন্মলগ্ন থেকে বাংলাদেশ ও তার উজ্জ্বলতার বিরুদ্ধে এবং দালাল তারাই মূলত
সমালোচক। এখন চলছে ব্যর্থ রাজনৈতিক নেতাদের যূথবদ্ধ হয়ে অপচেষ্টা। এর বাইরে যারা
তারা সমালোচনা করে্ন। তারা দল ও নেতাদের সমালোচনা করলেও জানেন শেখ হাসিনাই ভরসা।
তাকেই ভালোবাসে জনগণ।
বাংলাদেশকে সমীহ ও সম্মান করার মতো একটি জায়গায় নিয়ে গেছেন
তিনি। অদম্য ও সাহসী বলেই সোজাসাপটা মুখের ওপর বলে দেন যা সত্য তা-ই। তার কাছে,
তার ইমেজের কাছে খোদ যুক্তরাষ্ট্রও কুতুকুতু। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যখন এগিয়ে
চলেছে, তখন দেশবিদেশে একটি চক্র সক্রিয়। এদের কাজ ঘোঁট পাকানো। মাঝেমধ্যে নখ-দাঁত
বেরিয়ে পড়ে এদের। এদের কাজ হলো দেশের অমঙ্গল ও অহিত করা। উৎসব তাদের ভালো লাগে না।
বাঙালিয়ানা ভালো লাগে না। ঐক্য অপছন্দ। তারা চায় বিভেদ ও বিভাজন। এ বিভেদ
লাগানো গোষ্ঠী দেশে তেমন সুবিধা করতে না পারলেও বিদেশে এরা জাঁকিয়ে বসেছে। এদের
কাজ অপপ্রচার। অপপ্রচারের ধরনও আত্মঘাতী। পৃথিবীতে এমন দ্বিতীয় কোনো জাতি নেই যারা
নিজেরাই নিজেদের ভালো দেখতে পারে না। পাকিস্তানের অবস্থা মোটেও ভালো নয়। নেপালের
অর্থনীতি সংকটে, শ্রীলঙ্কা ঘুরে দাঁড়ালেও ভিত মজবুত করতে আরও সময় লাগবে অনেক। সেই
দৃষ্টিকোণে প্রতিবেশি ভারতের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এগোচ্ছে বাংলাদেশ। কিছু ক্ষেত্রে
ভারতকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়া দেশটি এদের অপছন্দ।
গণতন্ত্র, অসাম্প্রদায়িকতা, মুক্তিযুদ্ধের যে শক্তি তার প্রতি
বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা না থাকা মানুষজনের গণতন্ত্রের নামে মায়াকান্না
দেখে তাই হাসি পায়। তারা বেশ কিছুদিন চুপ থাকায় দেশের মানুষ শান্তিতেই ছিল। কিন্তু
তারা চুপ থাকার পাত্র নন। হঠাৎ রাজপথ উত্তপ্ত করে তোলা এদের নেশা। ঘাপটি মেরে
বসে থাকা দেশবিরোধী এ অপশক্তি ভুলে যায় তাদের পেয়ারা দেশ পাকিস্তান নিজেই ধুঁকছে।
বিশ্ববাস্তবতায় এখন অগণতান্ত্রিক শাসন বা জবরদস্তির জায়গা নেই। অথচ তারা এ দুই
শক্তির ওপর ভর করে গদি চান। জনগণের প্রতি বিশ্বাস বা আস্থা থাকলে কোনো বাড়তি শক্তির
দরকার পড়ে না। কে শোনে কার কথা? বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্যই খারাপ। দেশ স্বাধীন হওয়ার
পর থেকে এখন পর্যন্ত যতবার তারা ভাগ্যবদলের মুখ দেখেছিল বা দেখতে শুরু করেছিল
ততবারই তাদের প্রত্যাশায় আঘাত করেছে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তি।
তারা কী চায়, কেন চায় সচেতন সবাই বোঝে। তিল তিল করে নির্মাণ
আর মুহূর্তে বিনষ্ট এটাই প্রকৃতির নিয়ম। দুর্ভাগ্যজনকভাবে এর শিকার রাজনীতি। ঠিক
বোঝাও দায় কেন এ আত্মঘাতী প্রবণতা। গদির জন্য মানুষ খুন এ দেশের পুরোনো হিসাব।
যারা দেশে-বিদেশে বাঙালির স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ নষ্ট করার জন্য মরিয়া তাদের চেহারা
অপরিচিত নয়। এরা বাইরে বাঙালি ভেতরে পাকিস্তানি। মধ্যবিত্ত নামে পরিচিত এদের
অনেককেই চিনি।
বিদেশের মাটিতে বসে তারা শেখ হাসিনার সরকারের বিরোধিতা করার নামে মূলত দেশের জন্ম, বঙ্গবন্ধু, ইতিহাস ও ভবিষ্যতের বিরোধিতায় লিপ্ত। সমস্ত ধরনের সুযোগসুবিধা নেওয়ার পরও তারা আওয়ামী লীগবিরোধী। তাদের কথা শুনলে মনে হয় অবরুদ্ধ দেশ, অবরুদ্ধ সমাজই বাঙালির চাওয়া। গণতান্ত্রিক দেশে, উদার সমাজে বসবাস করে ভেতরে মৌলবাদ লালন করা স্ববিরোধীদের মুখে ভোট ও গণতন্ত্রের কথা শুনে বোঝা যায় কাকে বলে হিপোক্রেসি। সময় এসেছে দেশবিদেশে তাদের বিরুদ্ধে সমবেত শক্তিতে ঐক্য গড়ে দেশ ও জাতিকে নিরাপদ রাখার। নয়তো সময় ছেড়ে কথা বলবে না।