× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জাতীয় স্বার্থেই পোশাক শিল্পের অচলাবস্থা নিরসন জরুরি

সম্পাদক

প্রকাশ : ০৫ নভেম্বর ২০২৩ ১০:২০ এএম

জাতীয় স্বার্থেই পোশাক শিল্পের অচলাবস্থা নিরসন জরুরি

শিল্প এগিয়েছে, পিছিয়ে পড়েছে তার ‘শিল্পী’Ñ শিরোনামে ৪ নভেম্বর প্রতিদিনের বাংলাদেশে প্রকাশিত শীর্ষ প্রতিবেদনে তৈরি পোশাক শিল্প খাতের মজুরি বৃদ্ধির চলমান আন্দোলন নিয়ে যেসব তথ্য রয়েছে তা অবশ্যই আমলযোগ্য। একই সঙ্গে এও বলতে হয়, উল্লিখিত শিরোনামটির যথার্থতা নতুন করে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নিষ্প্রয়োজন। তৈরি পোশাক শিল্প খাত এখন আর বিকাশমান উৎপাদন ক্ষেত্রই শুধু নয়, আমাদের অর্থনীতির অন্যতম জোগানদারও বটে। এই শিল্প খাতের মূল শক্তি পোশাকশ্রমিকদের অবদান অনস্বীকার্য। পোশাক শিল্প খাত দেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে এবং শ্রমিকদের শ্রমে-ঘামে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির বিষয়টিও কোনোভাবেই এড়ানোর অবকাশ নেই। এই প্রেক্ষাপটে শ্রমিক-মালিক-অর্থনীতিসহ বহুপক্ষীয় স্বার্থের বিষয়টিও সামনে আসে। কিন্তু বিগত কয়েক দিন মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে পোশাককর্মীদের আন্দোলনে থাকার কারণে বহুমুখী ক্ষতির চিত্র স্ফীত হয়ে উঠেছে।

তৈরি পোশাক শিল্প খাতের অন্যতম শক্তি শ্রমিকদের বিদ্যমান বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে মজুরি বাড়ানোর দাবি অবশ্যই যৌক্তিক বটে, কিন্তু দাবি আদায়ের লক্ষ্যে আন্দোলনে দৃশ্যমান সহিংসতা কোনোভাবেই কাম্য নয়। যদি শিল্পের ক্ষতি হয়, তাহলে লাভের আলো কারও ঘরেই পড়বে নাÑ এই বাস্তবতা অস্বীকারেরও জো নেই। কিন্তু আমরা উদ্বিগ্নÑ পোশাকশ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলনে সৃষ্ট অচলাবস্থা নিরসনে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কোনো পক্ষেরই বিচক্ষণ ও আন্তরিক উদ্যোগ দেখতে না পেয়ে। উলটো আমরা দেখছি, সব পক্ষই যার যার ক্ষেত্রে চরম অবস্থান নেওয়ায় সহিংসতার ছায়া বিস্তৃত হচ্ছে এবং কর্মজীবন তো বটেই অর্থনীতিও নেতিবাচকতার গ্রাসে পড়েছে। চলমান আন্দোলনে ইতোমধ্যে হতাহতের ঘটনায়ও আমরা মর্মাহত। তা ছাড়া যানবাহন, বিভিন্ন স্থাপনায় অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষেরই দায়িত্বহীনতার পরিচায়ক। এমন পরিস্থিতি কারও জন্যই আখেরে ভালো ফল বয়ে আনবে না। প্রতিদিনের বাংলাদেশে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের তুলনায় ভারত ও ভিয়েতনামের পোশাকশ্রমিকদের বেতন আড়াই গুণ, চীনে চারগুণ বেশি। আরও বলা হয়েছে, বিশ্বে সবচেয়ে কম মজুরি পান আমাদের পোশাকশ্রমিকরা। যে শিল্প খাতটি জাতীয় অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখছে, শিল্পমালিকদের ব্যবসার প্রসার ঘটিয়েছে তার সঙ্গে যুক্ত শ্রমিকরা বাস্তবতার নিরিখে উপযুক্ত প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত হওয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে দুঃখজনক। তৈরি পোশাক শিল্প খাতের বিকাশ থামিয়ে দিতে নানারকম অপকৌশলের খবর আমরা অতীতে সংবাদমাধ্যমে উঠে আসতে দেখেছি। তা ছাড়া ন্যায্য মজুরির দাবিতে শ্রমিকরা ইতঃপূর্বেও বহুবার আন্দোলন করেছেন।

আমরা জানি, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে পোশাকশ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে সরকার মজুরি বোর্ড গঠন করে। গত অক্টোবরের শেষদিকে মজুরি বোর্ডের চতুর্থ বৈঠকে শ্রমিকপক্ষের প্রতিনিধিরা বিশ হাজার তিনশ তিরানব্বই টাকা ন্যূনতম মজুরির প্রস্তাব দেন। অন্যদিকে মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরা এর প্রায় অর্ধেক টাকা মজুরির প্রস্তাব দেন। লক্ষণীয়, এরপরই প্রথমে গাজীপুরে পোশাকশ্রমিকরা মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন শুরু করেন এবং পর্যায়ক্রমে আন্দোলন আশুলিয়া, সাভার, ঢাকার মিরপুরসহ কয়েকটি এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। পোশাকশ্রমিকদের চলমান আন্দোলনে একদিকে পরিলক্ষিত হচ্ছে আন্দোলনকারীদের সহিংসতা, অন্যদিকে পুলিশের দমন-পীড়ন। এর কোনোটিই সমর্থনযোগ্য নয়। আমরা মনে করি, আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিক মজুরি নির্ধারণ করেই বিদ্যমান অচলাবস্থা নিরসন সম্ভব। অনস্বীকার্য, বিদ্যমান বাস্তবতায় দশ হাজার টাকা মজুরি দিয়ে একজন শ্রমিকের জীবনযাপন অত্যন্ত কঠিন। শ্রমিক অসন্তোষ ও সহিংসতা চলাকালে পোশাকমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সংবাদ সম্মেলন করে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে জানায়, মালিকরা চাইলে তাদের কারখানা বন্ধ রাখতে পারবেন। আমরা দেখেছি, বিজিএমইএর এই ঘোষণার পর গাজীপুর, আশুলিয়া, ঢাকার মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েকশ কারখানা বন্ধ রয়েছে। ইতোমধ্যে শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন বিষয়ে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের সঙ্গে সম্প্রতি বৈঠক হয়। আগামী ৭ নভেম্বর মজুরি বোর্ডের পরবর্তী সভা হওয়ার কথা রয়েছে এবং ওই সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না হলে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হবেÑ এ কথা জানিয়েছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী।

যেকোনো প্রক্রিয়ায় আমরা আন্দোলন নিরসন করে কারখানার দরজা খুলে দিয়ে উৎপাদনের চাকা সচল করার ওপর গুরুত্বারোপ করি। তা না হলে বহুপক্ষীয় ক্ষতি আরও স্ফীত হয়ে উঠবে। আমরা জানি, উচ্চমূল্যস্ফীতি স্বাভাবিক জীবনযাপনে বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যয়ভার বেড়েছে সব ক্ষেত্রে।

পোশাকশ্রমিকদের সর্বশেষ ন্যূনতম মজুরি আট হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৮ সালে। ২০১৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আমরা যদি ডলার কিংবা টাকার মান অথবা বিনিময় হার পর্যালোচনা করি তাহলে যে চিত্র উঠে আসে তাতে একজন শ্রমিকের জীবনযাপন অচিন্তনীয়। পোশাকশ্রমিকদের আমরা সহিংসতা বন্ধ করে দাবি আদায়ের জন্য আলোচনার ওপর জোর দেওয়ার আহ্বান জানাই। একই সঙ্গে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও মালিকপক্ষকে বাস্তবতার নিরিখে যৌক্তিক পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদও দিই। জাতীয় স্বার্থেই বিদ্যমান অচলাবস্থার আশু নিরসন করতে হবে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা