× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

তখন বাউবির বিকল্প খুঁজে পাইনি

মুন্নী সাহা

প্রকাশ : ২১ অক্টোবর ২০২৩ ১০:৩৯ এএম

মুন্নী সাহা

মুন্নী সাহা

তাড়াহুড়া করে অফিস থেকে নেমেই গাড়িতে উঠলাম। ল্যাপটপ খুলতেই বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাঠানো ইমেইল পেলাম। বাউবির ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আমার মতামত ও স্মৃতিচারণামূলক একটা লেখা চাওয়া হয়েছে। হাতে সময় মাত্র তিন-চার দিন। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রসঙ্গ এলেই টেলিভিশন সাংবাদিকতার প্রথম দিনগুলোর কথা মনে পড়ে।

কারণ টেলিভিশন ক্যারিয়ারের কার্যকর প্রশিক্ষণ পেয়েছি বাউবি মিডিয়া সেন্টার থেকে। গাড়ি যেতে যেতে পান্থপথের সিগন্যালে আটকে গেল। বিশাল এক জ্যাম। বাইরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি। মাঝে মাঝে বৃষ্টির ঝাপটা জানালার সামান্য ফাঁক দিয়ে প্রবেশ করে মুখে এসে পড়ছে। হ্যাঁ, এমন একটি সময়েই তো আমরা দীর্ঘ জ্যাম ঠেলে বনানী থেকে বাসে চেপে যেতাম গাজীপুর বোর্ডবাজারের উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। দীর্ঘ পথের যাত্রা বেশ মজাই হতো। একই সঙ্গে প্রশিক্ষণ এবং ভ্রমণ দুটোই দারুণ উপভোগ করতাম। আর বাউবির ক্যাম্পাস তখন থেকেই অসাধারণ। সবকিছু সাজানো-গোছানো। শান্ত একটি পরিবেশ। যেন স্বর্গীয়।

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, বোর্ডবাজার, গাজীপুর

সময়টা ১৯৯৯। বেশ ঘটা করে একুশে টেলিভিশন নিউজের জন্য মাঠে নামার ঘোষণা দিয়েছে। সাংবাদিকতার নতুন, অভিনব একটি ধাপ বেসরকারি টেলিভিশন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়াকালে আমার সাংবাদিকতা শুরু। সময়ের পরিক্রমায় আজকের কাগজসহ বেশ কয়েকটি পত্রিকায় কাজ করা।

তখন বাংলাদেশ টেলিভিশনের রমরমা অবস্থা। সেখানে এতই কাজের চাপ যে, আমাদের প্রশিক্ষণের জন্য সুযোগ বা সময় কোনোটিই বের করা সম্ভব হলো না। তখন জানা গেল, ‘একই সেটআপ আছে উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডিয়া সেন্টারে। বাউবির মিডিয়া সেন্টারে যা আছে, আমাদের ২৪ ঘণ্টার স্টেশনেও এত আপডেট যন্ত্রপাতি কিংবা মেশিন নেই। আমাদের দ্বিগুণসংখ্যক দক্ষ লোকবলও রয়েছে বাউবির মিডিয়ায়।’ এ কথা জেনে আমাদের প্রশিক্ষকরা ভাবলেন, বিটিভিতে যেহেতু হলো না তাই বাংলাদেশে এ মুহূর্তে বাউবির বিকল্প আর নেই। চলো এবার অনুমতির জন্য বাউবিতে। যেই কথা সেই কাজ।

নগরজীবনের কোলাহল থেকে বিচ্ছিন্ন একটি গ্রামীণ পরিবেশ বাউবি। অসম্ভব সুন্দর একটি ক্যাম্পাস। বিশাল মাঠ, গাছপালা আর সবুজে ভরপুর বাউবি। একটি নির্দিষ্ট শেপ নিয়ে দাঁড়িয়ে ক্যাম্পাসের দ্বিতল ভবনগুলো। আমাদের চেয়ে সাইমন ড্রিং আরও বেশি বিস্মিত হলেন বাউবি মিডিয়া সেন্টারের যন্ত্রপাতি ও ভিজ্যুয়াল সেটআপ দেখে। কী নেই এখানে? প্রফেশনাল ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, এডিট প্যানেল, স্টুডিও, প্রাইমারি কন্ট্রোল রুম (পিসিআর), আর্কাইভ, অ্যান্টেনাসহ যাবতীয় সরঞ্জাম ও আধুনিক ডেকোরেশনসমৃদ্ধ সেন্টার। দুই তলা বিশিষ্ট বিশাল একটি ভবন। ভারী যন্ত্রপাতি নিয়ে সরাসরি ট্রাক প্রবেশের জন্য বিশাল ব্যাক গেটও রয়েছে। আছে প্রশিক্ষিত দক্ষ সেট ডিজাইনার, আর্টিস্ট, ইঞ্জিনিয়ার সব। সব এখানে একসঙ্গে। আমরা অনেক নতুন নতুন যন্ত্রপাতি ও সরাসরি কাজের সুযোগ পাই বাউবিতেই। আমি এখনও অনুভব করি আক্ষরিক অর্থেই যেন টেলিভিশন ভবন এমন হওয়া প্রয়োজন।

সে সময় এডিট প্যানেল ছিল দুটি। ফুটেজ কেটে কেটে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ভয়েস দিয়ে কীভাবে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরি হয় সেটা বাউবিতেই শিখি। সেখানেই শুরু হয় আমাদের ড্রাই রান। অর্থাৎ বাস্তব জীবনে রিপোর্টাররা কীভাবে সবকিছু হাতে কলমে শিক্ষা নেবে তারই একটি ছক বা ধাঁচ সেখানে বাস্তবিকভাবে শেখানো হয়। এ ছাড়া সংবাদ উপস্থাপনা কীভাবে করব, কখন, কোন মুড, অঙ্গভঙ্গি সবকিছু সেখানে দুই মাসে শিখি আমরা। এটা কিন্তু বাইরের কেউ দেখেনি। দেখেছি আমরা নিজেরা নিজেরাই। প্রশিক্ষণ শেষে আমাদের জমকালো একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।

তখন একুশে টেলিভিশনের অস্থায়ী কার্যালয় বনানীর ইরেকটর হাউসের ১১ তলায়। কারওয়ান বাজারে একুশে টিভির ভবনটিতে যন্ত্রপাতি আনা হলেও সেটআপ হয়নি তখনও। তাই চলমান যন্ত্রপাতি ও মেশিন সম্পর্কে ধারণা নিতে বাউবির এ প্রশিক্ষণ যেন রক্ষাকবচ আমাদের। এ সময়টিতে আমরা প্রায় ২৪ জন হইহই-রইরই করতে করতে যেতাম বাউবির মিডিয়া সেন্টারে। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাংবাদিক সাইমন ড্রিং বিবিসি থেকে নিয়ে এসেছেন বেন কোহেন, রাসেল ট্রট ও পিসগুডকে। তবে ক্লাসরুম বক্তৃতা শুধু নয়, সাংবাদিকদের একদম হাতে কলমে শিক্ষা দিতেন তারা। প্রথম প্রথম আমাদের জন্য বেশ কষ্টকর ছিল। তারাই শেখালেন, টিভি সাংবাদিকতায় প্রযুক্তির ভূমিকা প্রায় ৮৫ ভাগ। সুতরাং প্রযুক্তি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা চাই। সঙ্গে পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের ২৪ ঘণ্টা সচলতা, শরীরে স্টামিনা ও অসীম ধৈর্য থাকতে হবে। এরপর পেরিয়ে গেছে প্রায় দুই যুগ। কাজের তাগিদে পরিবর্তন হয়েছে আমার একাধিক প্রতিষ্ঠান।

বাউবিও পার করেছে তিন দশক। ৩১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জানাই অভিনন্দন। তবে এত আধুনিকমানের ব্যয়বহুল সরঞ্জামসমৃদ্ধ একটি মিডিয়া সেন্টার মুখ থুবড়ে পড়ে আছে, এখনও প্রতিযোগিতায় বা বলার মতো উল্লেখযোগ্য অবস্থান তৈরি করতে পারেনি; এটা ভাবলে কষ্ট হয়। অথচ দূরশিক্ষণসহ অসংখ্য সম্ভাবনার দুয়ার হতে পারত মিডিয়া সেন্টারটি। অনেক বেসরকারি টেলিভিশন প্রতিষ্ঠান এর অর্ধেকের কম ব্যয় করে ব্যবসা করছে। লক্ষ্য অর্জনে সফলও হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটিতে আমাদের প্রশিক্ষণের সময়ে যারা ছিলেন, তাদের অনেকেই এখন অবসরে। বেশ কজনকে কেড়ে নিয়েছে মৃত্যু।

উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের খোলা মাঠ, দিঘি, সারিবদ্ধ আমবাগান, ক্লান্ত দুপুরে ঘুঘু বা সন্ধ্যায় ঝিঁঝি পোকার ডাক প্রতিটি বিষয়ই এখনও মনে দাগ কাটে। বাউবি ছাড়া অন্য কোথাও এত উচ্ছল, উন্মুক্তভাবে কাজ করার সুযোগ আমরা পেতাম না। তখন আমরা বাউবির মিডিয়া সেন্টারের ঐশ্বর্য দেখেছি, স্পর্শ করেছি তার যৌবন। সময়ের পরিক্রমায় অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বেড়েছে বয়স, ভারিক্কি এসেছে। কিন্তু প্রথম কোনো কিছুই ভুলবার নয়। বাউবির মিডিয়া সেন্টারের প্রশিক্ষণ যেমন!

  • সাংবাদিক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা