মো. এনামুছ ছাঈদ
প্রকাশ : ১২ অক্টোবর ২০২৩ ১৩:১৬ পিএম
বিগত দশকে দেশের আর্থসামাজিক উন্নতিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির পরিবর্তন সমাজেও ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। ছোঁয়া লেগেছে শিক্ষা খাতেও। সন্তানের লেখাপড়ার জন্য বাবা-মাকে অনেক সময় ত্যাগ স্বীকার করে হলেও শিক্ষার উপকরণ জোগাড় করে দিতে হয়। করোনা মহামারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। পরে বাড়িতেই শিক্ষাকার্যক্রম চালু রাখার সিদ্ধান্ত হয়। স্থবির যোগাযোগে অ্যান্ড্রয়েড ফোন কেনার প্রতিযোগিতা তখনই বেড়েছে। ন্যানোটেকনোলজির উৎকর্ষে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন এমন অনেক কিছু করতে পারে, যা এককালে ভাবাও যেত না। কম্পিউটার ডিভাইসের অনেক কাজই আজ মোবাইলে করা যায়।
স্মার্টফোনের এ সক্ষমতার পালে বাতাস দিয়েছে ইন্টারনেট সেবা। বিশেষত
ফেসবুক নামক সামাজিক মাধ্যম এখন সবকিছু সহজ করে তুলেছে। শুধু কি ফেসবুক? ডিজিটালাইজেশনের
অংশ হিসেবে ই-নথির ব্যবহার বাড়ছে। ফলে হার্ড কপি ফাইল, নথি টানাটানির পরিবর্তে তাৎক্ষণিক
চিঠিপত্র আদানপ্রদান করে নাগরিক সেবা বৃদ্ধি পেয়েছে। কর্মে এসেছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি।
পেশাগত কারণে প্রত্যেককে স্ব স্ব ক্ষেত্রে আপডেটেড তথ্য বিনিময় করতে হয়। সাধারণ নাগরিকের
সুবিধা, চাকরিপ্রার্থী, শিক্ষার্থীর ভর্তি সবই ই-তথ্যের আওতায়। ফলে শিক্ষাব্যবস্থায়
শিক্ষাক্রমে আইসিটি বিষয় বাধ্যতামূলক হয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে ফেসবুকের ব্যবহার বাড়ায়
এখন খুব সহজেই বিদ্যালয়ের হোমওয়ার্ক, সিলেবাস, পরদিনের ক্লাসরুটিন, স্কুল নোটিস ইত্যাদি
জানা যায়। গুগল পরিষেবা, ডিজিটাল ব্যাংকিং, এমএফএস ইত্যাদির ব্যবহারে এখন সহজেই বিল
বা অন্যান্য খরচ দেওয়া যায়। অর্থাৎ শিক্ষাজীবন সহজ করার জন্য যা যা প্রয়োজনীয় সবই ফেসবুক
বা ইন্টারনেটের কল্যাণে আজ সম্ভব। কিন্তু এ পরিষেবার কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে। এখন
শিক্ষার্থীদের মনোযোগ কমেছে। পড়ালেখার জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন থাকা
সত্ত্বেও শিক্ষার্থীরা তাদের মনোযোগ অন্যদিকে নিয়ে যাচ্ছে।
স্মার্টফোনে লেখাপড়া বাদে আরও অনেক কিছু করা যায়। বিশেষত মাল্টিমিডিয়া উপভোগ এবং গেমস খেলার মতো সক্ষমতা থাকায় এখন স্মার্টফোনেই শিক্ষার্থীরা সময় ব্যয় করে বেশি। এভাবে সময় ব্যয় করতে গিয়ে তার প্রতিদিনের পাঠ ঠিকমতো করে না। চাপ বাড়ে পরীক্ষার আগের রাতে। ফলে অনেকে নিশ্চিত ভালো ফলপ্রত্যাশী হয়েও সামান্যের জন্য মিস করে। মূলত ডিজিটাল পণ্যের ওপর আমাদের অভিভাবকদের এখনও নজরদারির অভাব রয়েছে। ডিজিটাল যেকোনো অ্যাপ এখন মনিটর করা যায়। সন্তানকে যেমন দেখভাল করে রাখতে হয়, তেমন সন্তানের মোবাইল ফোনের ওপরও নজরদারি রাখা জরুরি। পশ্চিমা বিশ্বেও আমরা সম্প্রতি এ নিরাপত্তা বিষয়গুলো দেখতে পাই। শিক্ষার্থীদের করণীয় এবং স্মার্টফোন ব্যবহারে সচেতনতার বিষয়টি নিয়ে পারিবারিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে উপযুক্ত ধারণা দেওয়া জরুরি।