দিবস
তানভীর হাসান তপু
প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২৩ ১১:০৯ এএম
সাম্প্রতিক দশকে
মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পাওয়ায় বিশ্বব্যাপী উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে প্রবীণ জনসংখ্যা।
সমীক্ষা অনুসারে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বে প্রবীণ ব্যক্তির সংখ্যা ১ দশমিক ৫ বিলিয়নে
উন্নীত হবে। জনসংখ্যা বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ ইতোমধ্যে বিশ্বদরবারে প্রশংসিত
হয়েছে। সামাজিক সূচকেও নানা বিষয়ে সাফল্য অর্জিত হয়েছে। দেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২.৪
বছরে উন্নীত হয়েছে। ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা অনুসারে দেশে বর্তমানে প্রবীণ ব্যক্তির সংখ্যা
১ কোটি ৫৩ লাখ ২৬ হাজার ৭১৯, যা মোট জনসংখ্যার ৯ দশমিক ২৮ শতাংশ। ইউএনএফপির প্রাক্কলন
অনুসারে ২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ৬০ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সির সংখ্যা হবে মোট জনসংখ্যার
২২ শতাংশ। ১৯৯০ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ১ অক্টোবরকে আন্তর্জাতিক প্রবীণ
দিবস ঘোষণা করা হয়। এরপর ১৯৯১ সাল থেকে আজকের দিনটি বিশ্বের প্রতিটি দেশে প্রবীণ দিবস
হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি পালনে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও সমাজসেবা অধিদপ্তর র্যালি,
আলোচনা সভা, জাতীয় পত্রিকায় বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ, মোবাইল অপারেটরের মাধ্যমে খুদেবার্তা
পাঠানো, ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় স্ক্রল প্রচারের উদ্যোগসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করে।
আমাদের সাংস্কৃতিক-সামাজিক
পর্যায়ে প্রবীণদের সচরাচর বোঝা হিসেবে দেখা হয়। প্রবীণরা সমাজের বোঝা নন। আদিম সমাজে
প্রবীণদের ছিল আলাদা গুরুত্ব। তাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা মানবগোষ্ঠীকে উৎসাহ-উদ্দীপনা
জোগাত। তা ছাড়া প্রবীণরা অস্ত্র তৈরি করতেন। ফলে আদিম সমাজে প্রবীণদের আলাদা ভূমিকা
ছিল। আধুনিক সমাজে প্রযুক্তি ও নগরায়ণের ফলে জনজীবনে এসেছে পরিবর্তন। এ পরিবর্তনের
ফলে বিচ্ছিন্ন পরিবারকাঠামো প্রবীণদের ভূমিকা অনেকাংশেই খাটো করে দেখে। তবে সরকারের
সমাজকল্যাণমুখী নানা পরিকল্পনা ও কর্মসূচির মাধ্যমে সামাজিক পর্যায়ে অনেক পরিবর্তন
এসেছে। সরকার ২০১৪ সালে প্রবীণ ব্যক্তিদের সিনিয়র সিটিজেন হিসেবে ঘোষণা করেছে এবং জাতীয়
প্রবীণ নীতিমালা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা ২০১৫ প্রণয়ন করেছে। প্রবীণদের
জীবনে অর্থপূর্ণ পরিবর্তনের জন্য অর্থনৈতিক, স্বাস্থ্য, সামাজিক, সাংস্কৃতিক প্রতিটি
ক্ষেত্রেই প্রতিকূল ও বিরূপতা সহ্য ও উত্তীর্ণ হওয়ার সক্ষমতা প্রয়োজন। এ সক্ষমতা অর্জনে
নীতিগত, কৌশলগত ও কর্মসূচিগত সহায়তা অত্যন্ত জরুরি। অর্থনৈতিক সহনশীলতা, স্বাস্থ্য
সহনশীলতা, চলাফেরার সহনশীলতা, অংশগ্রহণ সহনশীলতা, আন্তঃপ্রজন্মগত সম্পর্ক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক
সমাজ সহনশীলতা প্রবীণ জনগোষ্ঠীর জন্য ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে বিশেষ সহায়ক ভূমিকা রাখতে
পারে। বাংলাদেশে প্রবীণদের সহনশীলতা বাড়াতে পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ
গ্রহণ করা জরুরি।
আমাদের নিজস্ব
সংস্কৃতি ও সমাজকাঠামো অনুসারে প্রবীণদের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে। সামাজিক পর্যায়ে এ ভারসাম্য
বজায় রাখার স্বার্থে প্রবীণদের গুরুত্ব দেওয়া জরুরি। সারা বিশ্বেই প্রবীণদের এখন আলাদা
গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবসে বিষয়টিকে দিতে হবে আলাদা গুরুত্ব।