সাধারণ্যে
প্রবা
প্রকাশ : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:১৮ এএম
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী পৌরসভার রামকৃষ্ণবাড়ি গণিপুরের মজিবর
রহমান। বয়স ৬৬। ছেলেবেলায় আক্রান্ত হন প্যারালাইসিসে। সুস্থ হলেও হারিয়ে ফেলেন
পায়ের স্বাভাবিক শক্তি। স্বাধীনতার পর যখন তার বয়স চৌদ্দ বছর, তখনই পত্রিকা
বিক্রির মাধ্যমে উপার্জন শুরু করেন। আজও রয়েছেন একই পেশায়। ধনবাড়ী পৌরসভা ও
জামালপুর সদর উপজেলার দিগপাইত, ছোনটিয়া বাজার এবং জামালপুরে সদ্যনির্মিত
ইকোনমিক্যাল জোন (ইপিজেড) এলাকার পরিচিত মুখ হকার মজিবর। তার সঙ্গে আলাপনের কিছু
অংশ।
পত্রিকা বিক্রির ব্যবসা কেমন চলছে?
ভালো না। আগের ব্যবসা নাই। পত্রিকা বেইচা এহন সংসার চলে না। টাইনাটুইনা
যাও চলতো, করোনার সময় সেই যে পত্রিকা বেচা কমছে, আর ফিরাইতে পারি নাই। করোনার আগে
দিনে আড়াইশ কপির ওপরে বেচলেও এখন একশ কপি চালানোই জুলুম। এদিকে বাজারে সব জিনিসেরই
দর বেশি।
কতদিন ধরে পত্রিকা বিক্রি করেন?
দেশ স্বাধীনের পর, যখন আমার বয়স ১৪ বছর তখন থেকেই পেপার
বেচি। চার আনা দরে পেপার বেচছি। এত কমে বেইচাও আমার লাভ হতো। তহন কাস্টমারও আছিল।
এখন বারো টাকাতেও পেপার বেচি। কিন্তু আজকের অবস্থা স্বপ্নেও কল্পনা করি নাই।
আপনার বাড়িতে কে কে আছেন, কতজনের সংসার?
বাড়িতে তিন মেয়ে, এক ছেলে আর আমরা দুজন মোট ছয়জনের সংসার।
ছেলেটি হাফিজিয়া মাদ্রাসায় আর একটা মেয়ে জামালপুর নার্সিংয়ে পড়ে। ছেলেমেয়েদের
বিয়ে দেওয়া লাগব বড় হইয়া গেছে। মেলা টাহার দরকার কিন্তু আমি এত টাহা কই পামু?
যা দুই চার পয়সা আয় করছি তা দিয়ে ছেলেমেয়ে মানুষ করার চেষ্টা করছি, জমা করতে
পারি নাই।
পায়ে কী হয়েছিল?
কী কমু বাবা! আমি তখন ছোট। বাতাস লাগার কথা কয় মাইনষে?
জায়গাজমি বিক্রি কইরা অনেক চিকিৎসা করছি, মেলা বড় বড় ডাক্তার কবিরাজ দেখাইছি
কিন্তু ভালো হয় নাই। বেশি হাঁটতে পারি না, বয়স হয়েছে দাঁড়িয়েও থাকতে পারি না।
বাম পা একটু বাঁকা আর শক্তি পাই না। এই পা নিয়ে অন্য কাজ করাও সম্ভব না। হেই জন্যে
ছোটবালা থেকে পেপার বেচি।
কোন এলাকায় পত্রিকা বিক্রি করেন?
এহন বয়স বেড়েছে, বেশিদূর সাইকেল চালাতে পারি না তাই আগের মতো
বেশি এলাকা ঘুরতেও পারি না। ধনবাড়ী পৌরসভার কিছু অংশ। জামালপুর সদরের দিগপাইত,
ছোনটিয়া বাজার, আদর্শবটতলা, ইপিজেড এলাকায় পেপার বেচি।
আপনার পায়ে যে সমস্যা এজন্য প্রতিবন্ধী ভাতা বা অন্য কোনো সরকারি সুবিধা পান?
না বাবা। আমি কোনো ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা কিছু পাই নাই। আমার
এগুলোর কার্ড নাই।
আপনাকে ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
¾ আলাপন : ভূইয়া শফি