× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রাজপথে সশস্ত্র মহড়ায় প্রশ্নবিদ্ধ জননিরাপত্তা

সম্পাদক

প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:০৪ পিএম

রাজপথে সশস্ত্র মহড়ায় প্রশ্নবিদ্ধ জননিরাপত্তা

বিরোধ কী নিয়ে, এ ব্যাপারে সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনগুলোয় পুরোপুরি স্পষ্ট হওয়া না গেলেও বিষয়টি যে গুরুতর এবং সন্ত্রাসী চক্রের এমন দৌরাত্ম্য গভীর সামাজিক দুর্যোগের পূর্বাভাস, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ১৮ সেপ্টেম্বর রাত প্রায় ৯টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁও সাতরাস্তা এলাকায় একটি প্রাইভেট কারের আরোহীদের ওপর দুর্বৃত্তদের হামলে পড়া এবং মুহুর্মুহু গুলি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চিত্রও বটে। ২০ সেপ্টেম্বর প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ ‘জনাকীর্ণ সড়কে এলোপাতাড়ি গুলি, আহত ৩’ শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যে তথ্য উঠে এসেছে তাতে প্রতীয়মান হয়, দুটি সন্ত্রাসী গ্রুপের বিবদমান দ্বন্দ্ব থেকেই ওই ত্রাসের সৃষ্টি। ঘটনাটি যখন ঘটে তখন পুরো এলাকা যানজটে প্রায় স্থবির ছিল। এরই মধ্যে একটি প্রাইভেট কারের ওপর গুলি ছোড়ার পাশাপাশি কয়েকজনকে কুপিয়ে জখম করার ঘটনা এবং প্রাণভয়ে পথচারীদের ছোটাছুটির আতঙ্কজনক চিত্র জননিরাপত্তার প্রশ্নটিকেই মুখ্য করে তুলেছে। পুলিশের বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০ বছর সাজা খেটে কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়া এক শীর্ষ সন্ত্রাসীকে হত্যার উদ্দেশ্যেই আগ্নেয়াস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া আচরণ মানুষকে প্রত্যক্ষ করতে হলো।

তেজগাঁওয়ে যানজটে আটকে থাকা প্রাইভেট কারের যাত্রী ছিলেন একসময়ের শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে তালিকাভুক্ত তারিক সাঈদ ওরফে মামুন। বহুল আলোচিত চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী ও সাবেক সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের ভাই শহীদ সাঈদ আহমেদ টিপু হত্যা মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি মামুন, যিনি সম্প্রতি ২০ বছর সাজা ভোগ করে কারাগার থেকে বের হন। পুলিশের ভাষ্য, সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা মোটরসাইকেলে এসে ওই কারের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে থাকে। হামলার পরিপ্রেক্ষিতে গাড়ি থেকে নেমে সদ্যকারামুক্ত মামুন ও তার দুই সহযাত্রী পালানোর চেষ্টা করলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে তাদের জখম করা হয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনারের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে এও বলা হয়েছে, ঘটনাটি তারা গুরুত্বসহকারে তদন্ত করছেন। প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছেন, কারামুক্ত মামুনকে হত্যার উদ্দেশ্যে আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী সানজিদুল ইসলাম ইমনের নেতৃত্বে হামলা হয়। কারাবন্দি থাকার সময়ই মামুনকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল ইমনÑ এ তথ্যও জানা যায় তার জবানিতেই। কিন্তু ঘটনার রহস্য এখনও উন্মোচিত হয়নি। শুধু রাজধানীতেই নয়, অতীতে দেশের বিভিন্ন স্থানে মূলত প্রাধান্য বিস্তারের দ্বন্দ্বে এরকম ঘটনা ঘটেছে। সন্ত্রাসী চক্রের এমন পারস্পরিক সশস্ত্র ‘যুদ্ধে’ সাধারণ মানুষ আক্রান্ত হওয়ার মর্মস্পর্শী নজিরও আছে। এই ঘটনাতে একজন নিরপরাধ আইনজীবী গুরুতর আহত হয়েছেন। যে প্রেক্ষাপটেই এমন নৈরাজ্যিক ঘটনা ঘটুক না কেন, তা কোনোভাবেই স্বস্তির নয়। আমরা এও দেখছি, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, রাজনৈতিক পরিস্থিতিও ততই অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে। আর বরাবরের মতো এরই সুযোগ নিচ্ছে সমাজবিরোধীরা। বিগত কয়েক দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে খুনখারাবিসহ দ্বন্দ্বসংঘাতে সৃষ্ট পরিস্থিতি এ থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়।

আমাদের অভিজ্ঞতায় এও আছে, নির্বাচনকালে বিশেষ করে জাতীয় নির্বাচনের আগে সমাজবিরোধীরা অধিকতর সক্রিয় হয়ে ওঠে এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়ার অভিযোগও পুরোনো। উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জননিরাপত্তার বিষয়টি যখন নানা মহলে আলোচনার অগ্রভাগে রয়েছে, তখন তেজগাঁওয়ে সংঘটিত ঘটনাটি জননিরাপত্তার বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ রাজনৈতিক দলগুলোকেও অগ্রাধিকার দিতে হবে। তেজগাঁওয়ের ঘটনায় অপরাধীদের চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করার ব্যাপারে পুলিশের দায়িত্বশীলদের তরফে অঙ্গীকার ব্যক্ত হলেও এসব ক্ষেত্রে আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা অনেকাংশেই সুখকর নয়। আমরা দেখছি, সন্ত্রাসীরা কৌশল ও ধরন পাল্টে তাদের অপকাণ্ড চালাচ্ছে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো তাদের অপকৌশল যেন বুঝে উঠতে পারছে না। এমন প্রেক্ষাপটে সমাজের জন্য তা বাড়তি হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। সমাজে অভয়ের পরিবেশ গড়ে তোলার পাশাপাশি সমাজবিরোধীদের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক ও কার্যকর অভিযান জরুরি। আমরা মনে করি, রাষ্ট্র ও সমাজের সর্বস্তরে শুভবোধ-শুভচিন্তা এবং উন্নত সংস্কৃতির প্রসার ঘটানোর জোরালো উদ্যোগভিন্ন এ থেকে নিস্তার পাওয়া কঠিন।

আমরা অবশ্যই আস্থা রাখতে চাই, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর কার্যক্রম জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরিচালিত হবে এবং সন্ত্রাসী যে বা যারাই হোক, নির্মোহ অবস্থান নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তযোগ্য আইনি ব্যবস্থা নিশ্চিত হবে। আমরা দেখতে চাই, তাদের খুঁটির জোর যত শক্তই হোক, লোমশ হাত যত লম্বাই হোক; আইনের হাত এর চেয়েও লম্বা। একই সঙ্গে আইনের খুঁটিও এর চেয়ে অনেক শক্ত। সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের প্রতি আমাদের আহ্বানÑ তাদের কঠোর হাতে দমন করতে অনমনীয় থাকুন। সন্ত্রাসীদের কর্মকাণ্ডের পথ রুদ্ধ করতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার জরুরি। রাজনৈতিক হীনস্বার্থ চরিতার্থকরণের জন্য যারা বাহুবল-অস্ত্রবলের ওপর নির্ভর করতে চান, তারাও কোনোভাবেই দেশ-জাতির মিত্র হতে পারেন না।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা