পরিপার্শ্ব
রায়হান আহমেদ তপাদার
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৫৬ পিএম
আমাদের শতভাগ
শিশু বিদ্যালয়ে এলেও ২০ শতাংশের বেশি প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্ত করতে পারে না। এরপর যারা
মাধ্যমিক পর্যায়ে যায়, তাদেরও ৪০ শতাংশের বেশি শিক্ষা সমাপনের আগেই ঝরে যায়। অর্থাৎ
এসএসসি পাস করার আগেই ঝরে যায় অর্ধেকের বেশি। সরকারি হিসাবেই এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
শিশুর সাক্ষরতার প্রথম ধাপ হিসেবে প্রাথমিক বিদ্যালয় মুখ্য ভূমিকা পালন করে। সরকার
উন্নত জাতি গঠনের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের
উপবৃত্তিও দিচ্ছে। এসব সুবিধা দেওয়ার পরও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা
কমছে। শিক্ষার্থী ঝরে পড়া শুধু নির্দিষ্ট কোনো পর্যায়ে নয়, বরং প্রাথমিক শিক্ষা শেষ
না করতেই ঝরে পড়ার সংখ্যা শুরু হয়। সবচেয়ে বেশি ঝরে পড়ে মূলত অষ্টম শ্রেণি থেকে এসএসসি
পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে না পেরে। এরপর উচ্চমাধ্যমিকে যারা পাস করতে ব্যর্থ হয়, ঝরে পড়ার
তালিকায় রয়েছে তাদের নামও। আবার অনেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের সুযোগের অভাবে ঝরে পড়ছে।
প্রশ্ন হলো, কেন এতসংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে? এ ক্ষেত্রে প্রধানতম কারণ দরিদ্রতা।
বেশির ভাগ সময়ই দেখা যায়, আর্থিক অভাব-অনটনের কারণে সাধারণত শিক্ষার্থী বেশি ঝরে পড়ে।
আমাদের দেশে শিক্ষার্থী
ঝরে পড়ার প্রধান কারণগুলো হলো অভিভাবকের অসচেতনতা, দারিদ্র্য, মেয়েশিশুর প্রতি অবহেলা,
বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রম, বিদ্যালয়ের সময়সূচি, ভৌত সুবিধাদি; সর্বোপরি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা।
এ ক্ষেত্রে ঝরে পড়া রোধ করার জন্য সবার আগে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। পাশাপাশি স্থানীয়
জনসমাজের সম্পৃক্ততাও জরুরি। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের
সুযোগ বৃদ্ধি করা, বিদ্যালয়ে খেলাধুলাসহ নিয়মিত সহপাঠক্রমিক কার্যক্রমের ব্যবস্থা করা,
বিদ্যালয়ের যাতায়াতব্যবস্থা নিরাপদ রাখা, বাল্যবিবাহ বন্ধ করা সম্ভব হলে অনেকাংশে রোধ
করা যাবে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা। শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার আরও একটি বড় কারণ মানসম্মত
শিক্ষা নিশ্চিত করতে না পারা। তাই এ বিষয়ে আলাদা গুরুত্ব দিতে হবে। এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা
নিতে হবে। তবে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। বিশেষ করে
বিনামূল্যে বই দেওয়া থেকে শুরু করে উপবৃত্তি, স্কুলে মিড ডে মিল। এর জন্য সরকারকে প্রতি
বছর মোটা অঙ্কের টাকাও খরচ করতে হচ্ছে। এত কিছুর পরও শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ করা সম্ভব
হচ্ছে না। তবে এ ক্ষেত্রে যেসব জায়গায় সমস্যা রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে সমাধানের জন্য
সরকারকে আরও বেশি উদ্যোগী হওয়া প্রয়োজন। সরকারের পক্ষ থেকে এত সুযোগসুবিধা দেওয়ার পরও
শিক্ষার্থী কমে যাওয়া প্রত্যাশিত নয়। এজন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসের ভূমিকা প্রয়োজন। বিশেষ
করে শিক্ষকরা যেন পাঠদানে মনোযোগ দেন, তা কঠোরভাবে তদারকি করতে হবে। অভিভাবকরা যেখানে
মানসম্মত শিক্ষা পাবেন, সেখানেই সন্তানকে ভর্তি করাতে চাইবেন। তাই সরকারি প্রাথমিক
বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই।
প্রথম শ্রেণিতে
যে-সংখ্যক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়, তার মাত্র ৫৫ শতাংশ এসএসসি পাস করে। বাকিরা দ্বিতীয়
থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে লেখাপড়া থেকে ছিটকে পড়ে। বিষয়টি উদ্বেগজনক।
ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। প্রাথমিক-মাধ্যমিকসহ বিভিন্ন
পর্যায়ে শিক্ষার্থী ঝরে পড়া রোধ করতে হলে নাগরিকের জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষা
খাতের অব্যবস্থাপনা, অদূরদর্শিতা, দুর্নীতিÑ এসবও দূর করতে হবে।