× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

শিক্ষা

অগ্রগতির পাশে রয়েছে গলদও

এএন রাশেদা

প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:১০ এএম

এএন রাশেদা

এএন রাশেদা

কোনো দেশের অগ্রগতি নানাজন নানাভাবে দেখতে পারেন। কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দালানকোঠা, বাইরের চাকচিক্য, কেনাকাটায় কী পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ; একে ভিত্তি করে অগ্রগতি বলতে পারেন। আবার কেউ শিক্ষার মান, মানবিক মূল্যবোধ, সততা, সাহিত্য, বিজ্ঞান, বিজ্ঞান শিক্ষার অনুকূল পরিবেশ, শিক্ষকের মর্যাদা, সম্মান, যোগ্যতা, দায়িত্ববোধ, শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ; লাইব্রেরি, ল্যাবরেটরি, খেলার মাঠ, খেলাধুলার মান, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড; সবকিছু মিলিয়ে শিক্ষাব্যবস্থার সামগ্রিক চিত্র ও অগ্রগতি দেখেন। এ অগ্রগতি শিক্ষা, শিক্ষাব্যবস্থা ও সমাজব্যবস্থার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গি জড়িত। শেষোক্ত এই দেখার সঙ্গে দ্বিমতের কিছু নেই। অনেক দেশ আমাদের দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রণালয় রূপে দেখে।

আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় অগ্রগতির কিছু দিক আছে। অগ্রগতি আরও হত কিন্তু অনিয়ম-দুর্নীতি এক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে রেখেছে। কোনো কোনো সরকার ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দলীয় স্বার্থ প্রাধান্য দিয়ে উন্নয়ন পরিকল্পনা করে। তেমনই একসময় দেখা গেল সব স্কুলে বিজ্ঞান ল্যাবরেটরি বানিয়ে দেওয়া হলো। কিন্তু সেখানে বিজ্ঞানের শিক্ষক আছে কি না দেখা হলো না। বিক্রমপুরের কুচিয়ামোড়া আদর্শ স্কুলে ১৯৯৫ সালে আমি তা দেখতে পেয়েছিলাম এবং দেশব্যাপী প্রায় একই চিত্র ছিল। অতীতে সাবেক মন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে শিক্ষার দুরবস্থার কথা জানিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এর উত্তরে বলেছিলেন, ‘সব বিদ্যালয়ে আমরা ভবন করে দিয়েছি’। হ্যাঁ, সে তো দেশবাসী দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু সম্মানজনক বেতনকাঠামো দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কি? হয়নি। এই ভবন নির্মাণে যেমন অর্থ আত্মসাতের যোগ আছে, তেমন আছে নানাবিধ কেনাকাটায়ও।

সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, ১৩৫৩ কোটি টাকার আইসিটি প্রকল্পে দুর্নীতির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি তবে শাস্তি দেওয়ার সুপারিশ করেনি। তাই ১৯.১১.২০১৯-এ আবার তদন্তক্রমে প্রতিবেদন দেয়া হলো। ‘আইসিটি প্রকল্পে দুই মাসে ৭৫ কোটি টাকা তছরুপ করেছেন তিন কর্মকর্তা’। শাস্তি না থাকলে তো তাই হবে। ‘শিক্ষক নিয়োগ ও এমপিওভুক্তিতে ঘুষ-দুর্নীতি আরও বেড়েছে’, ‘মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের হাজার কোটি টাকা জলে’, ‘শিক্ষাপ্রশাসনের বিভিন্ন প্রকল্প হাতিয়ে নিতে অনলাইন টেন্ডার বাতিলের চক্রান্তে সিন্ডিকেট’, ‘প্রভাবশালীদের কারসাজি : নিম্নমানের কাগজে পাঠ্যবই মুদ্রণ’, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও তিন বোর্ডের আড়াইশ কোটি টাকার অডিট আপত্তি’, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি, সিনিয়রদের বাদ দিয়ে জুনিয়রদের এমপিওভুক্তি বঞ্চিত ১৫০০ আইসিটি শিক্ষক’। এ ধরনের শিরোনামযুক্ত খবর দূর অতীতের নয়। স্বাধীনতার এত বছর পরও কেন শিক্ষকদের বেতন মাসিক অর্ডারের মাধ্যমে হয়! কেন বেতন অন্যদের মতো পূর্ণাঙ্গ স্কেলভিত্তিক হবে না? এর শুরু এবং শেষ থাকবে, বছর বছর ইনক্রিমেন্ট, উৎসব ভাতা, পেনশন থাকবে। শিক্ষকদের অপমান করে কীভাবে শিক্ষাব্যবস্থার অগ্রগতি দাবি করা যাবে?

বুয়েটসহ প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে এমন কিছু দেখা যায় যা অনভিপ্রেত-অনাকাঙ্ক্ষিত। অকার্যকর কারিগরি শিক্ষা বোর্ড: লুটপাট, স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতিএমন শিরোনামকে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। খবরে বলা হয়েছে, ‘যখন প্রশ্নপত্র ফাঁস হয় না বলে প্রচার করা হচ্ছিল তখন দেখা গেল, আগের রাতেই ট্রেজারি থেকে চেক উধাও হয়ে গেল’। হঠাৎ একসময় পরীক্ষায় সৃজনশীল পদ্ধতি চালু করা হলো। এডিবি টাকা দেবে, বই লেখা হলো, কিছু শিক্ষক ট্রেনিংয়ের বাজেট হলো। এত দ্রুততার সঙ্গে সিলেবাস বা পরীক্ষা পদ্ধতি পরিবর্তন করতে গেলে যা হওয়ার তা-ই হলো। পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হলো, ‘সৃজনশীলের আটশ কোটি টাকা পানিতে’, ‘৯ বছরে লক্ষাধিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ পেলেও ফলাফল শূন্য’, ‘স্কুল ও কলেজে জাতীয়করণ নিয়ে অনিয়ম ও নৈরাজ্য’, ‘পাঠ্যবই প্রণয়নে দুই ধাপেই দুর্নীতি’, ‘সরকারি-বেসরকারি কলেজে আসন ফাঁকা, তবু ভর্তির সুযোগ পাচ্ছে না শিক্ষার্থীরা’, ‘বরিশাল বিভাগে সহকারী শিক্ষক পদ শূন্য দেড় সহস্রাধিক’, ‘সরিষাবাড়ী পিইসি গণিত পরীক্ষায় নকলের মহোৎসব’। বিভিন্ন সময়ের এসব শিরোনামই প্রমাণ করে অগ্রগতির পাশে এখনো কত গলদ রয়ে গেছে।

শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার প্রত্যয় ফুটে ওঠে না। সবার জন্য শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অন্ন, বস্ত্র, পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। আবারও বলি, অবশ্যই কয়েকটি ক্ষেত্রে অগ্রগতি হয়েছে। যেমন একসময় শিশু শ্রেণি থেকে ভর্তি পরীক্ষায় যে প্রতিযোগিতা হতো, পরীক্ষা বাদে এলাকা ভিত্তিতে ভর্তিপ্রথা চালু হওয়ায় ভালো হয়েছে। শিক্ষানীতি ২০১০ উপেক্ষা করে যে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা চালু হয়েছিল তা বাতিল করা হয়েছে। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় দুর্নীতির যে ছায়া পড়েছিল এ থেকে উত্তরণ ঘটেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে দু-তিন বার ভর্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ হওয়া ছিল ভালো উদ্যোগ। মেডিকেলে ভর্তির প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিরুদ্ধে যে অ্যাকশন নেওয়া হয়েছিল তা-ও ভালো উদ্যোগ বলা যাবে। মাধ্যমিক ও কলেজ পর্যায়ে শিক্ষক নিয়োগের জন্য জাতীয় ভিত্তিতে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে, তা ভালো। কিন্তু শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে না প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও। এমনটি নিশ্চয়ই অগ্রগতির চিত্র ম্লান করে।

শিক্ষাব্যবস্থার জাতীয়করণ প্রয়োজন কিন্তু সরকারিকরণ না। ড. কুদরাত-এ-খুদা কমিশন রিপোর্টে জাতীয়করণ করার কথা আছে। কিন্তু আমলাতন্ত্র তখনও বুঝতে চায়নি এ দুয়ের পার্থক্য, আজও বুঝতে চায় না। প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ অন্যন্য রাজ্যেও তা আছে। যেমন শিক্ষার ব্যয়ভার সরকার বহন করবে, কিন্তু প্রতিষ্ঠান সরকারি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে না। ছাত্র বেতন থেকে প্রাপ্ত অর্থের একটি অংশ সরকারি কোষাগারে জমা হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাকি অর্থে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করবে। প্রতিষ্ঠানের স্থাবর সম্পত্তি প্রতিষ্ঠানের থাকবে। তাহলে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের সঙ্গে চাকরিতে কোনো সমস্যা হবে না। আমলাতন্ত্র সমস্যা জিয়ে রাখতে চায়। তাই শিক্ষকরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হন। শিক্ষা খাতে বাজেটের ৩০% বরাদ্দ দিয়ে সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগের ১৭ নম্বর ধারা অনুযায়ী শিক্ষাব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে হবে। শিক্ষার মান উন্নয়নে কথা হয়েছে বিস্তর কিন্তু কাজের কতটা কি হয়েছে এ নিয়ে প্রশ্ন আছে। গণমুখী শিক্ষা নিশ্চিত হোক।

  • শিক্ষাবিদ
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা