× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্মরণ

সাহিত্যের নিমগ্ন সাধক

আমিরুল আবেদিন

প্রকাশ : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:০৮ এএম

আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:২৬ পিএম

সাহিত্যের নিমগ্ন সাধক

‘ধর্ম সাধারণ লোকের কালচার আর কালচার শিক্ষিত মার্জিত লোকের ধর্ম’Ñ বিখ্যাত এই উক্তি আজও বাঙালি পাঠক এমনকি শিক্ষার্থীদের অনুপ্রাণিত করে। এই উক্তির কথক মোতাহের হোসেন চৌধুরীÑ যার কাছে সাহিত্য, সংস্কৃতি ও জীবনচর্চা ছিল অভিন্ন। মুক্তবুদ্ধিচর্চার প্রবক্তা, উদার মানবতাবাদী ও মননশীল প্রবন্ধকার হিসেবে মোতাহের হোসেন চৌধুরীর বিশেষ খ্যাতি আছে। মননশীল প্রবন্ধ রচনা করে বাংলা সাহিত্যে যারা অতি অল্প সময়ে সুখ্যাতি অর্জন করেছেন মোতাহের হোসেন চৌধুরী তাদের অন্যতম। মোতাহের হোসেন চৌধুরী এই ভূখন্ডের মানুষদের চিন্তার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। শব্দচয়ন ও বাক্য প্রয়োগে তার সাহিত্যসম্ভার যেমন সুখপাঠ্য, তেমনি বুদ্ধিদীপ্তও বটে। গভীরতম ভাবের সঙ্গে বুদ্ধিদীপ্ত প্রকাশভঙ্গি মোতাহের হোসেন চৌধুরীকে সাহিত্য ও সংস্কৃতি অঙ্গনে এক বিশিষ্ট আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। তিনি রুচির ব্যাপারে ছিলেন অতি সূক্ষ্ম, আদর্শের জায়গায় ছিলেন আপসহীন।

সাহিত্যের সব বিষয়েই তার সূক্ষ্ম রুচির ছাপ পাওয়া যায়, কোথাও তার সামান্যতম স্খলন ঘটেনি। তিনি  সাহিত্যসাধনায় অমনোযোগী কখনও হননি। তবু তার রচনার পরিমাণ বেশি নয়। এর একটি কারণ চিন্তায় ও রচনায় শিথিলতার প্রশ্রয় তিনি দিতে চাইতেন না। হয়তো তার চেয়েও বড় কারণ, যে সমাজে তার জন্ম হয়েছিল উদার-মানবিক চিন্তাধারার প্রতি সে সমাজের সুস্পষ্ট বিতৃষ্ণা। তিনি বড়মাপের মানুষ ছিলেন বলেই হয়তো অপ্রিয় বাগবিতণ্ডা যথাসম্ভব এড়াতেই চাইতেন। কিন্তু পরিমাণে অল্প হলেও তার রচনা যে বিশিষ্ট হয়েছে, তাতেই তার সাহিত্য-সাধনা সার্থক হয়েছে।

মোতাহের হোসেন চৌধুরীর জন্ম ১৯০৩ সালে নোয়াখালীর কাঞ্চনপুর গ্রামে। তিনি কুমিল্লা ইউসুফ হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে আইএ ও বিএ পাস করেন। এরপর ইউসুফ হাইস্কুলে একজন সহকারী শিক্ষক হিসেবে তাঁর পেশাগত জীবন শুরু হয়। আমৃত্যু বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা করেছেন। কিশোর বয়সেই সাহিত্যসৃষ্টিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। কখনও ছদ্মনামে, কখনও স্বনামে লিখতে শুরু করেন। ‘কবিতা’ দিয়ে সাহিত্যাঙ্গনে চলা শুরু হলেও পরবর্তী সময়ে গদ্য লেখায় মনোযোগী হয়ে ওঠেন । তিনি ঢাকার মুসলিম সাহিত্যসমাজের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলেন এবং এর সভা ও সম্মেলনে নিয়মিত অংশগ্রহণ করতেন। তাঁর রচিত ‘আমাদের দৈন্য’, ‘আদেশপন্থী ও অনুপ্রেরণাপন্থী’ ও ‘মুসলমান সাহিত্যিকদের চিন্তাধারা’ প্রবন্ধ যথাক্রমে সাহিত্যসমাজের পঞ্চম (১৯৩১), ষষ্ঠ (১৯৩২) ও অষ্টম (১৯৩৪) বার্ষিক সম্মেলনে পঠিত হয়। এ ছাড়া তাঁর ‘রবীন্দ্রনাথ ও বৈরাগ্যবিলাস’ প্রবন্ধটি সমাজের মুখপত্র শিখার পঞ্চম বর্ষে প্রকাশিত হয়। আর এভাবেই তিনি সাহিত্যমহলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। বিচিত্রা, মোহাম্মদী, সওগাত, ছায়াবীথি, বুলবুল প্রভৃতি সাহিত্য পত্রিকাতেও তিনি লিখতে থাকেন।

সাতচল্লিশোত্তর দেশভাগের ক্রান্তিকালে আমাদের সাহিত্যের আদর্শ, আঙ্গিক ও কলাগত ভাবনায় যখন সংস্কৃতিক্ষেত্র চঞ্চল, তখনও এই নেহাত অধ্যাপক মানুষটি নীরবে আপন সাহিত্যকর্মে নিমগ্ন ছিলেন। সকল প্রকার মতাদর্শকে অশ্রদ্ধা না করেও তার নিজস্ব ভুবনে, স্বকীয় শিল্পলোকে পরমহংসের মতো সন্তরণ করেছেন। দৃঢ় প্রত্যয়ে ও প্রগাঢ় প্রজ্ঞায় তার বক্তব্যের বুনন দৃঢ় ও সুদৃঢ় ছিল। মোতাহের হোসেন চৌধুরীর মতাদর্শের সঙ্গে অনেকে দ্বিমত করতে পারেন, কিন্তু তার লেখার মধ্যে যে সাধুতা, সৎ উদ্দেশ্য, সূক্ষ্মতা ও সাধনার আলো ফুটে ওঠেÑ তা কেউ অস্বীকার করবে না। তাঁর প্রয়াণ দিবসে সংস্কৃতির এই অগ্রজনকে তাই জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

  • সাংবাদিক ও অনুবাদক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা