দিবস
ছয় দশক আগে, ১৯৬২
সালের আজকের দিনে স্বৈরাচারী আইয়ুব খানের পুলিশের গুলিতে শহীদ হন ওয়াজিউল্লাহ, গোলাম
মোস্তফা, বাবুলসহ নাম না-জানা অনেকেই। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা ১৯৫৮
সালের ৭ অক্টোবর পাকিস্তানে সামরিক আইন জারি করেন এবং জেনারেল আইয়ুব খানকে প্রধান
সামরিক আইন প্রশাসক পদে নিযুক্ত করেন। আইয়ুব খান ১৯৫৮ সালের ২৭ অক্টোবর পাকিস্তানের
শাসনভার তুলে নেন নিজের হাতে। তার প্রায় এগারো বছরের শাসনামল কুখ্যাত হয়ে আছে নানা
কারণে। এর মধ্যে তার শিক্ষানীতি অন্যতম।
সামরিক শাসকের
শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রসমাজ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ১৯৫৮
সালের ৩০ ডিসেম্বর আইয়ুব খান পাকিস্তানের জন্য একটি শিক্ষা কমিশন গঠন করেন। এই কমিশনের
নেতৃত্ব দেন এসএম শরীফ। তার নামেই শিক্ষা কমিশন পরিচিত শরীফ কমিশন নামে। ১১ সদস্যের
এ কমিশন ১৯৫৯ সালের ২৬ আগস্ট ২৭ অধ্যায়ে বিভক্ত তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। কমিশনের
প্রস্তাবনায় রাখা হয় শিক্ষা সংকোচন নীতি। এই নীতি অনুসরণ করে কমিশন শিক্ষাকে তিন স্তরে
ভাগ করার প্রস্তাব দেয়। তা হলোÑ প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চতর। এক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থী
৫ বছরে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও ৩ বছরে উচ্চতর ডিগ্রি কোর্স এবং ২ বছরের স্নাতকোত্তর কোর্সের
ব্যবস্থা রাখার কথা প্রস্তাব করা হয়। এ ছাড়া উচ্চশিক্ষা সংরক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়
সমাজের ধনিকশ্রেণির জন্য। পরীক্ষায় পাস নম্বর ধরা হয় শতকরা ৫০, দ্বিতীয় বিভাগ শতকরা
৬০ এবং প্রথম বিভাগ শতকরা ৭০ নম্বর। শরীফ কমিশন বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বায়ত্তশাসনের পরিবর্তে
পূর্ণ সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পক্ষে মত দেয়। এ ছাড়া কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি
নিষিদ্ধ এবং ছাত্র-শিক্ষকের কার্যকলাপের দিকে নজর রাখার প্রস্তাব করে। শিক্ষকদের জন্য
১৫ ঘণ্টা কাজের বিধান রাখার পাশাপাশি বর্ণমালা সংস্কারেরও প্রস্তাব করে ১৯৫৯ সালের
২৬ আগস্ট কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। শরীফ কমিশনের প্রস্তাবনা গ্রহণ করে আইয়ুব
সরকার ১৯৬২ সাল থেকে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়। যার বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে বাংলার ছাত্রসমাজ।
আইয়ুব সরকারের
শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় ছাত্রসমাজ। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে চলতে থাকে
আন্দোলন। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৬২ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ছাত্রসমাজ সারা দেশে হরতাল কর্মসূচি
ঘোষণা করে। এদিন সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত হয় হাজার হাজার মানুষ। তাদের
উপস্থিতিতে হঠাৎ গুজব ছড়িয়ে পড়ে জগন্নাথ কলেজে গুলির কথা। উপস্থিত ছাত্রদের মিছিল হাইকোর্টের
সামনে থেকে আবদুল গনি রোডের দিকে এগোনোর সময় পুলিশ মিছিলের পেছনে লাঠিচার্জ, কাঁদানে
গ্যাস ও গুলিবর্ষণ করে। শহীদ হন তিনজন। সারা দেশেই এদিন মিছিলে গুলি চালায় পুলিশ। টঙ্গীতে
পুলিশ ছাত্র-শ্রমিক মিছিলে গুলি চালিয়ে হত্যা করে সুন্দর আলী নামে এক শ্রমিককে।
ছাত্রদের এই আন্দোলন এবং শহীদদের স্মরণে দিনটি শিক্ষা দিবস হিসেবে পালিত হয়। বাষট্টির ছাত্র আন্দোলনে শহীদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা।