× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিমানবন্দরে নিরাপত্তায় অচিন্তনীয় গাফিলতি!

সম্পাদক

প্রকাশ : ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:০৬ এএম

বিমানবন্দরে নিরাপত্তায় অচিন্তনীয় গাফিলতি!

নিরাপত্তা সবক্ষেত্রেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্পর্শকাতর স্থানগুলোর ক্ষেত্রে তা যে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ, এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নিষ্প্রয়োজন। দেশের প্রধান বিমানবন্দর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবৈধ প্রবেশের ঘটনা নতুন কিছু নয়। আমাদের স্মরণে আছে, কয়েক বছর আগে অবসর প্রস্তুতিকালীন ছুটিতে থাকা একজন নারী কাস্টমস কর্মকর্তা একাধিক নিরাপত্তাবলয় ভেদ করে বিমানবন্দরে বোর্ডিং ব্রিজ এলাকায় ঢুকে পড়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা প্রশ্নের মুখে ফেলেছিলেন। এবার এর চেয়েও অচিন্তনীয় ঘটনা ঘটেছে। ১২ সেপ্টেম্বর রাতে সব স্তরের নিরাপত্তাবেষ্টনী ভেদ করে পাসপোর্ট, টিকিট, বোর্ডিং পাস ছাড়া শিশু জুনায়েদ মোল্লা কীভাবে কুয়েত এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে উঠে গিয়েছিল, এই জিজ্ঞাসার উত্তরে বিমানবন্দরের নাজুক নিরাপত্তাব্যবস্থার সার্বিক চিত্রই উঠে আসে। চৌদ্দ স্তরের নিরাপত্তা ডিঙিয়ে বৈধতা সাপেক্ষে যাত্রীকে বিমানে উঠতে হয়। কিন্তু শিশু জুনায়েদ ওই ফ্লাইটে উঠে যেভাবে ঘোরাফেরা করছিল তাতে প্রথমে দায়িত্বশীলদের চৈতন্যোদয়ই ঘটেনি। ৩৩০ আসনের ওই বিমানে যাত্রী পরিপূর্ণ থাকায় কেবিন ক্রুরা শিশুটিকে কোনো সিট দিতে পারছিলেন না। বিস্ময়কর হলো, তখনও তাদের বোধোদয় হয়নি কীভাবে অতিরিক্ত একজন যাত্রী বিমানে ঢুকে পড়ল। পরে যখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানে, তখন বিভিন্ন স্তরের নিরাপত্তাকর্মীরা ছুটে যান ওই ফ্লাইটে। বিমানটি উড্ডয়নের আগ মুহূর্তে ঘটনাটি ধরা পড়ার মধ্য দিয়ে দেশের প্রধান বিমানবন্দরের যে ঠুনকো নিরাপত্তাব্যবস্থা উন্মোচিত হয়, তাতে সঙ্গত কারণেই এ প্রশ্নও জাগে, এসব দেখভালের দায়িত্ব যাদের তারা কি শুধু কাগজপত্রেই দায়িত্বরত?

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁকে বহনকারী ভিআইপি ফ্লাইটটি বিমানবন্দর ত্যাগ করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঘটে যাওয়া এই ঘটনা বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তাব্যবস্থায় দায়িত্বরতদের দায়িত্ব পালনে অবহেলার খেসারত কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তাতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার সব সীমা-পরিসীমা ছাড়িয়ে গেছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীলদের বরাত দিয়ে ১৪ সেপ্টেম্বর প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দায়িত্ব পালনের অবহেলার জন্য ১০ জনকে চিহ্নিত করে প্রত্যাহার এবং রহস্য উন্মোচনের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর প্রতিবেদকের প্রশ্নের উত্তরে ওই শিশুটি জানিয়েছে, ‘বিমানটা আকাশে উড়লে অনেক বেশি ভালো লাগত। ওড়ার আগেই আমাকে নামতে হয়েছে। তাই খারাপও লাগছে। মন চাইছে হঠাৎ করে এই শখ থেকেই বিমানে ওঠার কথা মাথায় আসে। আগে কখনও উঠি নাই। এজন্য আরও বেশি মন চাইছে।’ শিশু জুনায়েদের এই বক্তব্য উদ্ধৃত করার কারণ, সে কীভাবে অনায়াসে তার মতো করে তার শখ পূরণ করতে পারল বিমানবন্দরে দায়িত্বরত সব দায়িত্বশীলের চোখে ধুলো দিয়ে? একটি শিশুর পক্ষে যদি কথিত নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা-জাল এত অনায়াসে ছিন্ন করা যায়, তাহলে যেকোনো দুষ্কৃতকারীর পক্ষে গুরুতর অপরাধ কতটা নির্বিবাদে সংঘটিত করা সম্ভব, এর বিশ্লেষণ করলে অধিকতর বিস্মিত যুগপৎ উদ্বিগ্ন হওয়া ছাড়া গত্যন্তর থাকে না।

কোনো যাত্রীর কাছে যদি একটি আলপিনও সংরক্ষিত থাকে, সেটিও বিমানবন্দরে নিরাপত্তা স্ক্যানিংয়ে ধরা পড়ার কথা। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, বিমানবন্দরের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে অবলীলায় শিশুটি বিমানবন্দরে প্রবেশ করে ধাপে ধাপে ফ্লাইটে ওঠে। একটি শিশুর পক্ষে এত বড় একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে চলাচলের পথই বা কীভাবে এত সহজ হয়ে গেল? এরকম আরও অনেক প্রশ্নই রয়েছে যেগুলোর অনুসন্ধান বিমানবন্দরের সার্বিক নিরাপত্তার জরুরি প্রয়োজনে খতিয়ে দেখা দরকার। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ঠুনকো নিরাপত্তাব্যবস্থার আরেকটি সর্বসাম্প্রতিক নজির বিমানবন্দরের কাস্টমস গুদাম থেকে ৫৫ কেজি সোনা ‘নাই’ হয়ে যাওয়া। এখন পর্যন্ত নিরাপত্তা ত্রুটি ও চরম অব্যবস্থাপনার কারণে সৃষ্ট ওই ঘটনার কোনো কুলকিনারা হয়নি। আমাদের স্মরণে আছে, অপ্রতুল নিরাপত্তাব্যবস্থা ও বহিরাগতদের প্রবেশের অভিযোগ তুলে ইতঃপূর্বে বাংলাদেশ থেকে পণ্য নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল অস্ট্রেলিয়াসহ আরও কিছু বিদেশি বিমান সংস্থা।

নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তো অগ্রগণ্য বটেই, বিমানবন্দরে বিদ্যমান পরিস্থিতি সার্বিক ভাবমূর্তির জন্যও কতটা হুমকি, এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণও নিষ্প্রয়োজন। আমরা জানি, বিমানবন্দরে লাগেজ চুরিসহ বহুবিধ দুষ্কর্মের চিত্র সংবাদমাধ্যমে এর আগে আরও অনেকবার উঠে এলেও দুর্বল ব্যবস্থাপনা এরপরও সবল হয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে একটি প্রশ্নই বারবার দাঁড়ায়, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কোথায়? কয়েক বছর আগেও এই বিমানবন্দর থেকেই উড্ডয়নের পর বাংলাদেশ বিমানের ময়ূরপঙ্খী নামে একটি উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের কবলে পড়েছিল। পাইলট ও বিমান ক্রুদের বুদ্ধিমত্তা ও তাৎক্ষণিক পদক্ষেপের কারণে তখন বড় ধরনের দুর্ঘটনা কিংবা ক্ষতি এড়ানো সম্ভব হলেও নাজুক নিরাপত্তাব্যবস্থার বিষয়টি তোলপাড় তুলেছিল। দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থায় এমন বৈকল্যের দায় সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষই এড়াতে পারে না। এর স্থায়ী প্রতিবিধান আশু জরুরি। জরুরি জবাবদিহিও। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা