দিবস
মোশাররফ হোসেন মুসা
প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৩০ পিএম
জনসচেতনতা
সৃষ্টি ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে সরকার ‘জাতীয় স্থানীয়
সরকার দিবস’ পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দিবসটি
প্রতি বছর ১৪ সেপ্টেম্বর পালিত হবে। আজ গণভবনে স্থানীয় সরকার দিবস উপলক্ষে দেশের ৮
হাজার জনপ্রতিনিধি উপস্থিত থাকছেন। এবারের স্লোগান ‘সেবা ও উন্নতির দক্ষ রূপকার, উন্নয়নে-উদ্ভাবনে
স্থানীয় সরকার’। কেন্দ্রীয় কর্মসূচি শেষে জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগে ১৬, ১৭ ও ১৮ সেপ্টেম্বর
সারাদেশে তিন দিনব্যাপী জাতীয় স্থানীয় সরকার দিবস উদযাপিত হবে। প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদসহ
অন্যান্য স্থানীয় ইউনিট, স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতাধীন সব দপ্তর ও সংস্থা সরকারের
বাস্তবায়িত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরবে।
রাষ্ট্র
ও সরকারের ভাবনা এসেছে স্থানীয় শাসন থেকে। প্রাচীন গ্রিসে প্রায় ১ হাজার ৫০০ পলিস বা
নগররাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ইতিহাস পাওয়া যায়। নাগরিকদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় ও পরামর্শে
নগররাষ্ট্রগুলো পরিচালিত হতো। তবে শিশু, মহিলা, দাস ও বহিরাগতরা নাগরিক হিসেবে বিবেচিত
হতো না। নগররাষ্ট্রগুলোয় জনগণের মিলনকেন্দ্র, উপাসনালয়, পণ্য কেনাবেচার স্থান, বিচারালয়
ছিল। পরে বড় বড় নগররাষ্ট্র ঐক্যবদ্ধ হয়ে জাতীয় রাষ্ট্র গঠন করে। জাতীয় রাষ্ট্র পরে
সাম্রাজ্য বিস্তার করতে সক্ষম হয়। ইউরোপের অধিকাংশ দেশের ইতিহাস ঘাঁটলে একই চিত্র পাওয়া
যায়। সেখানে সাম্রাজ্যের বিলুপ্তি ঘটেছে বহু আগে; কিন্তু স্থানীয় সরকারগুলো স্বায়ত্তশাসন
ভোগ করছে আগের মতোই, তথা সেখানে এখনও বটম আপ পদ্ধতি (নিচ থেকে ওপরমুখী) শাসনব্যবস্থা
বিদ্যমান। ভারতীয় উপমহাদেশেও একসময় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যের অস্তিত্ব ছিল। কিন্তু বহিঃশক্তির
বারবার আক্রমণের কারণে স্থানীয় রাজ্যগুলো উপযুক্তভাবে গড়ে উঠতে সক্ষম হয়নি।
স্থানীয় সরকার দিবস পালন হলেও স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিদের কাছ থেকে এ দিবস পালনের দাবিটি আসেনি, এসেছে কেন্দ্রীয় সরকার থেকে। আমাদের স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরা স্থানীয় সমস্যা নিয়ে যতটা না ভাবেন তার চেয়ে তাদের ভাবনায় থাকে কেন্দ্রীয় সরকার। তা ছাড়া একটি মাত্র সরকারব্যবস্থা বিদ্যমান থাকায় এবং দলীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন হওয়ায় প্রতিনিধিরা স্থানীয় সমস্যা বাদ দিয়ে জাতীয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হচ্ছেন-এমন অভিযোগ করেন অনেকেই। সেজন্য ‘সিডিএলজি’ দীর্ঘদিন যাবৎ বলে আসছে, এ দেশের উপযোগী গণতন্ত্র বাস্তবায়ন করতে হলে দুই প্রকারের সরকারব্যবস্থা তথা কেন্দ্রীয় সরকারব্যবস্থা ও স্থানীয় সরকারব্যবস্থা বাস্তবায়ন করতে হবে। সংবিধানে স্থানীয় সরকার শব্দটি না থাকা সত্ত্বেও সবাই এ শব্দটি ব্যবহার করছে, সে কারণে প্রতিটি ইউনিটের সঙ্গে ‘সরকার’ শব্দটি যুক্ত করে দেওয়া যেতে পারে। যেমন জেলা সরকার, উপজেলা সরকার, নগর সরকার ও ইউনিয়ন সরকার। জেলা সরকার হবে নগর সরকার (সিটি/পৌর) ও গ্রামীণ সরকারগুলোর (ইউনিয়ন) সর্বোচ্চ ইউনিট। কেন্দ্রের সঙ্গে শুধু জেলার সম্পর্ক থাকবে। জেলা এক হাতে নগরীয় ইউনিট ও অন্য হাতে গ্রামীণ ইউনিটগুলো পরিচালনা করবে। প্রতিটি পর্যায়ে জনগণের অংশগ্রহণমূলক শাসনব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে। মনে রাখা দরকার, কার্যকর স্থানীয় সরকার ছাড়া সিভিক সেন্স সম্পন্ন নাগরিক শ্রেণি গড়ে উঠবে না। স্থানীয় সরকারের গুরুত্ব, ভূমিকা ব্যাপক। স্থানীয় উন্নয়নসহ নাগরিক অধিকার বাস্তবায়নে শক্তিশালী স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা জরুরি।