প্রেক্ষাপট
সালাহ উদ্দিন মাহমুদ
প্রকাশ : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:৫৬ এএম
প্রতি বছর শিশু
থেকে তরুণÑ অনেকেই পানিতে ডুবে মারা যায়। এভাবে অকালমৃত্যু বেড়েই চলেছে। পরিসংখ্যান
বলছে, গত সাড়ে তিন বছরে দেশে ৩ হাজার ৮০৫ জন পানিতে ডুবে মারা গেছে, যার মধ্যে ৮৮.৫১
শতাংশ বা ৩ হাজার ৩৬৮ জনই শিশু। অন্য এক সমীক্ষায় দেখা যায়, দেশে নিউমোনিয়ার পর পানিতে
ডুবে শিশু বেশি মৃত্যুবরণ করে। পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর হার কমানোর উদ্যোগ সর্বপ্রথম
পরিবারকে নিতে হবে। পরিবার ও কমিউনিটির মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো, শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের
সাঁতারে দক্ষ করে তোলা, প্রি-স্কুলের শিশুদের জন্য শিশুযত্ন কেন্দ্রের সুবিধা নিশ্চিত
করা এবং প্রতিরোধব্যবস্থা জোরদার করতে জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন ও বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য
অবদান রাখতে পারে।
ছোটবড় সবার ক্ষেত্রেই
পানিতে ডুবে যাওয়ার প্রধান কারণ সাঁতার শেখার কোনো ব্যবস্থা না থাকা। নৌযান দুর্ঘটনা,
বন্যা, জলাবদ্ধতা এবং ধীরগতির উদ্ধার তৎপরতাও পানিতে ডুবে মৃত্যুর অন্যতম কারণ। শিশুদের
দিনের বেলায় নিরাপদ রাখতে ডে কেয়ার স্থাপন, জলাশয়ের আশপাশে বেড়া দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিবন্ধকতা
সৃষ্টি করা, স্কুল থেকে শুরু করে কমিউনিটি পর্যায়ে সাঁতার শেখা বাধ্যতামূলক করা এবং
নৌযান চলাচল নিরাপদ করা জরুরি। এসব নিয়ে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা কাজ করছে। সরকার যদি
সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে কাজ করে, তাহলে ওইসব উন্নয়ন সংস্থা চলে গেলেও কাজ অব্যাহত
থাকবে। মৃত্যু ঠেকানো যাবে। পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু রোধে সরকারি উদ্যোগ নেওয়ার দাবি
ছিল অনেক আগে থেকেই। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ‘সমাজভিত্তিক সমন্বিত
শিশুযত্ন কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং শিশুর সাঁতার সুবিধা
প্রদান’ নামে প্রকল্প হাতে নিয়েছে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
তিন বছর মেয়াদি এ প্রকল্পের আওতায় এক থেকে পাঁচ বছর বয়সি ২ লাখ শিশুর জন্য ৮ হাজার সমাজভিত্তিক শিশুযত্ন কেন্দ্র স্থাপন করার কথা। প্রতিটি কেন্দ্রে ২৫ জন শিশুকে ভর্তি করা হবে। সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত শিশুরা ওই কেন্দ্রে থাকবে। এতে কর্মসংস্থান হবে ১৬ হাজার গ্রামীণ নারীর। ২৭১ কোটি ৮২ লাখ টাকার প্রকল্পটি ২০২২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি একনেকেও অনুমোদিত হয়। প্রকল্প অনুযায়ী ১৬ জেলায় এর কাজ চলবে। আর এসব পরিচালনা করবে স্থানীয় এনজিওগুলো। কিন্তু প্রকল্পের অনেক দিন পরেও কেবল ১৬ জেলায় ১৬ কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছেন। এনজিওগুলো এখনও কাজ শুরু করেনি। প্রকল্প পরিচালকও এখনও নিয়োগ হয়নি। আমরা আশা করতে পারি খুব শিগগিরই প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখবে। প্রান্তিক শিশুরা সুরক্ষিত থাকবে। পাশাপাশি পরিবারকেও সচেতন হতে হবে। অবুঝ শিশুকে নিরাপত্তা দিতে হবে। সামর্থ্যবান শিশুকে সাঁতার শেখাতে হবে।