× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্মরণ

মাদার তেরেসা: সর্বত্যাগী সন্ন্যাসিনী

শারমিন সুলতানা সুরভী

প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৪৩ পিএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বিশ শতকে বিশ্ব নানা ঘটনায় দয়াহীন, ছায়াহীন, বিধ্বংসী ও ভালোবাসাহীন শুষ্ক মরুপ্রান্তরে পরিণত হয়েছিল। বলা হয়, এ দুর্গম মরুতেই ঈশ্বরের মূর্তিমতী জীবন্ত বিগ্রহ হিসেবে আবির্ভূত হন অ্যাগনেস গঞ্জা বোজাঝিউ ওরফে মাদার তেরেসা। ‘কেবল সেবা নয়, মানুষকে দাও তোমার হৃদয়। হৃদয়হীন সেবা নয়, তারা চায় তোমার অন্তরের স্পর্শ।’ মাদার তেরেসার অমর এ বাণীটিই তাঁকে পরিচিত করে করুণাময়ী হিসেবে। তেরেসা ঈশ্বরের নামে অবারিত ধারায় আশা-ভালোবাসা ও অফুরন্ত করুণা বর্ষণ করে পৃথিবীকে শ্যামল সরস করে তুলেছিলেন। তিনি ক্ষুধার্তকে দিলেন অন্ন, বস্ত্রহীনকে বস্ত্র, নিরাশ্রয়কে দিলেন আশ্রয়, রোগাক্রান্তদের ওষুধপত্র ও সেবা, আশাহীনকে দিলেন আশা এবং মৃত্যুপথযাত্রীকে জীবনের পরম আশ্বাস। বিংশ শতাব্দীর মহাশ্মশানে তিনি নেমে এসেছিলেন স্নিগ্ধ শীতল করুণাধারার মতো। শুরু করেছিলেন সর্বত্যাগিনী সন্ন্যাসিনী জীবনের সাধনা।

১৯১০ সালের ২৭ আগস্ট সুদূর যুগোশ্লাভিয়ায় স্কপিয়ে শহরে আলবেনীয় পরিবারে জন্ম মাদার তেরেসার। স্কপিয়ে অখ্যাত শহর হলেও মাদার তেরেসা সচ্ছল কৃষক পরিবারেই জন্মেছিলেন। তাঁর বাল্যনাম অ্যাগনেস। বাবা-মা বাদেও পরিবারে ছিল আরও তিন বোন। তাঁর শিক্ষাজীবনের সূত্রপাত সরকারি স্কুলে। ঈশ্বরের টানে মাত্র ১২ বছর বয়সে ধর্মযাজকদের একটি সংগঠনে যোগ দেন। ১৯২৮ সালে প্রাথমিক প্রস্তুতির জন্য অষ্টাদশী অ্যাগনেসকে কলকাতার উদ্দেশে পাঠিয়ে দিলেন যুগোস্লাভিয়ার জেসুইট সংঘ আয়ারল্যান্ডের লরেটো অ্যাবিতে। কলকাতাই হলো তাঁর সাধনপীঠ। প্রথমে এন্টালিতে সেন্ট মেরিজ স্কুলের ভূগোলের শিক্ষয়িত্রী, পরে বাঙালি ছাত্রী বিভাগের প্রধান এবং কিছুদিন অধ্যক্ষা ও কিছুদিন সেইন্ট অ্যান কন্যাদের পরিচালিকা হিসেবেও তিনি নিযুক্ত ছিলেন। এমনি নানান কাজে কেটে গেল তাঁর জীবনের ১৭টি বছর। ১৯৩১ সালের ২৪ মে তিনি সন্ন্যাসিনী হিসেবে প্রথম শপথ নেন এবং ধর্মপ্রচারকদের পৃষ্ঠপোষক সন্তের নামকরণ অনুসারে ‘তেরেসা’ নাম গ্রহণ করেন।

ভারতে আসার পরই দার্জিলিংয়ে স্কুলশিক্ষিকা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। এরপর কলকাতার সেন্ট মেরিজ হাইস্কুলে ভূগোল শিক্ষিকা হিসেবে কাজ শুরু করেন, পরে লরেটো স্কুলেও যোগদান করেন। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতার প্রাককালে ভারতীয় নাগরিকত্ব পান। এখানে থাকা অবস্থায় পঞ্চাশের মন্বন্তর, হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গায় শহরে নেমে আসে অবর্ণনীয় দুঃখ আর মৃত্যুর মিছিল; যা মাদার তেরেসার মনে এনেছে গভীর ক্ষতি। ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে দারিদ্র্যের মধ্যে ধর্মপ্রচার শুরু করার মধ্য দিয়ে লরেটো ত্যাগ করেন। কলকাতার মতিঝিল বস্তির দুস্থ ও দুর্গত মানুষদের দেখে তাদের আশ্রয় ও চিকিৎসা দিতে ১৯৫২ সালে কলকাতার কালীঘাটে এক পরিত্যক্ত হিন্দু মন্দিরকে ‘কালীঘাট হোম ফর দ্য ডাইং’য়ে রূপান্তরিত করেন। পরে এর নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘নির্মল হৃদয়’। এ সময়ই মাদার তেরেসা টিটাগড়ে কুষ্ঠরোগীদের সেবার জন্য একটি আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন যার নাম দেন ‘শান্তিনগর’। তিনি মিশনারিজ অব চ্যারিটির উদ্যোগে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কুষ্ঠরোগের চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন করেন। এ ছাড়া অনাথ শিশুদের লালনপালন ও তাদের জন্য থাকার জন্য ১৯৫৫ সালে ‘নির্মল শিশু ভবন’ স্থাপন করেন।

মাদার তেরেসার বর্ণিল কর্মজীবন শুধু ভারতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি, অন্যান্য দেশেও তার খ্যাতি ছড়িয়ে যায়। সেবা ধর্মকর্মের জন্য ১৯৭৯ সালে ভারতের প্রথম মহিলা হিসেবে ‘নোবেল শান্তি পুরস্কার’ পান এবং ১৯৮০ সালে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মান ‘ভারতরত্ন’ লাভ করেন। ১৯৯৭ সালের এই দিনে করুণাময়ী ও মহীয়সী এই নারী পরপাড়ে পাড়ি জমান। বিনম্র শ্রদ্ধায় তাকে স্মরণ করি।

 

  • শিক্ষার্থী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা