× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জীববৈচিত্র্য

কোনো কোনো কীটপতঙ্গও উপকারি

ডানা মিলব্যাংক

প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১০:০১ এএম

আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১১:১৬ এএম

 ডানা মিলব্যাংক

ডানা মিলব্যাংক

বিগত কয়েক দশকে ঘরের ভেতর ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ নিধনের জন্য আমাকে প্রতিনিয়ত অভিনব পদ্ধতির আশ্রয় শিখে নিতে হয়েছে। কখনও মশাকে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে কাছে এনে ধরে ফেলেছি, বাড়ির আশপাশ থেকে পানি সরিয়ে ফেলেছি, এমনকি বাড়ির চারপাশে ফগিং করিয়েছি। বাড়ির চারপাশে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ দূর করার জন্য একটি কোম্পানিকেও ভাড়া করেছিলাম। তারা বাড়ির চারপাশে রাসায়নিক ছিটিয়ে গেছে। এত কিছুর পরও মশার গতিবিধিতে কোনো ভাবান্তর লক্ষ করা গেল না। বাধ্য হয়েই প্রতি সপ্তাহে রাসায়নিক কীটনাশক ছিটানোর ব্যবস্থা নিতে হয়েছে এবং তাতে আমাদের স্বাস্থ্যও ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাচ্ছিল। এখন আমি আমার বাড়ির পেছনের উঠোনে একটা র‍্যাকেট নিয়ে বসে থাকি। ধাবমান মশা দৃষ্টির আওতায় এলেই টেনিস বল ভেবে চালিয়ে দিই। অন্তত প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থায় আমাকে লড়াকুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হতেই হয়।

ভার্জিনিয়ায় একবার স্ত্রীর সঙ্গে ঘুরতে গিয়েছিলাম। মশা কামড়াবে এমন প্রস্তুতি আগে থেকেই নেওয়া ছিল। কিন্তু বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলাম, ওইসব অঞ্চলে মশা কামড়ায় না। কীট দূর করার জন্য বিগত কয়েক দশকে আমরা ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছি। কীটনাশক নিধনের পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনও তাদের অভিযোজনের দিকে ঠেলে দিয়েছে। ফলে আমাদের শহর ও শহরতলি এখন জীবাণুবাহী কীটপতঙ্গে পরিপূর্ণ। গ্রামীণ অঞ্চলে প্রকৃতির ভারসাম্য তুলনামূলক স্বাভাবিক হওয়ায় মশা সচরাচর মানুষকে কামড়ায় না। এমন নয়, শহর থেকে গ্রামীণ অঞ্চলে মশা কম। ঘটনা ঠিক তার উল্টো। প্রকৃতিতে অন্য কীটপতঙ্গের সঙ্গে তাদের লড়াই করতে হয় বলে কীটের সংখ্যাও থাকে নির্ধারিত। তা ছাড়া প্রকৃতিতে থাকা মাকড়সা, ব্যাঙ, মাছ ও পাখি মশা খেয়ে ফেলে। কাজেই শহর কিংবা শহরতলিতে প্রচুর মশা আমাদের বড় সমস্যা নয়। বরং বাস্তুসংস্থানে পর্যাপ্ত কীটের অভাব দেখা দিয়েছে। মশা নিধনযজ্ঞে নামতে গিয়ে আমরা এতটাই আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছি যে, সমগ্র কীটজগৎই হুমকির মুখে।

প্রকৃতিতে কীট নিধনযজ্ঞে কিছুটা নিয়ন্ত্রণ আনতে না পারলে মুশকিলে পড়তে হবে। প্রকৃতিতে কীটের আবাসন নিশ্চিত না করা গেলে খাদ্যশৃঙ্খল ব্যাহত হবে। খাদ্যশৃঙ্খল ব্যাহত হওয়াই আমাদের প্রধান সমস্যা নয়; বনায়ন এবং অনেক উদ্ভিদের বংশ বৃদ্ধির জন্য পরাগায়নের ওপর নির্ভর করতে হয়। যদি পরাগায়নের জন্য কীট না থাকে তাহলে পরিবেশ-প্রতিবেশে কেমন বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে তা সহজেই অনুমেয়। এমনকি অনেক খাদ্যশস্য উৎপাদনে যেসব কীটের ভূমিকা রয়েছে সেগুলোও রাসায়নিক নিয়ন্ত্রণের কারণে নিধন হচ্ছে; যার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ছে কৃষি উৎপাদনে। ৪০ বছর আগে বিখ্যাত জীববিজ্ঞানী ইও উইলসন একটি অবিস্মরণীয় মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেন, ‘প্রকৃতিতে কীটপতঙ্গ না থাকলে মানবপ্রজাতি বড়জোর কয়েক মাস নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে। অধিকাংশ উভচর, মাছ ও স্তন্যপায়ী প্রাণী বিলুপ্তির পথে এগিয়ে যাবে। প্রকৃতি ভীষণভাবে দূষিত হবে। কারণ এই ক্ষুদ্র প্রাণীগুলোও পৃথিবী পরিচালনা করে থাকে।’

সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়াই আমাদের একমাত্র সমস্যা নয়। ভূমির ব্যবহারের জন্য মানুষ একাধিক পদ্ধতি অবলম্বন করেছে। নিজের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা ভেবে কীটনাশক ব্যবহার, পরিবেশদূষণ তো রয়েছেই; তেমনি তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলেও কীটজগৎ হুমকির মুখে। কৃষি উৎপাদনে ব্যবহৃত কীটনাশকের নেতিবাচকতার কথা আমাদের জানা। কিন্তু এর তুলনায় অনেক বেশি রাসায়নিক নগরাঞ্চলে ব্যবহৃত হয়। রাসায়নিকের ব্যবহারে অনুর্বর পরিবেশ তৈরি হয়। আর এ অনুর্বর পরিবেশে উদ্ভিদক্ষয়ী স্পঞ্জি মথ, খাদ্যশস্য বিনষ্টকারী ল্যানটার্নফ্লাই, তেলাপোকা ও মশার প্রকোপ আরও বাড়ে। তাই রাসায়নিক ব্যবহারে ক্ষতিকর কীট সমূলে নিধনের বদলে আপনি বরং তাদের সুযোগ করে দিচ্ছেন নিজেদের উপযুক্ত পরিবেশে বাস করার। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আপনার ঘরের ভেতরকার পরিবেশের কোনো পরিবর্তন ঘটবে না। কিন্তু আপনার বাড়ি ও বাড়ির আশপাশে প্রকৃতির সামান্য যে ছোঁয়া রয়েছে, সেখানে ভারসাম্য বজায় রাখার স্বার্থেই কীটের বিচরণভূমি নিশ্চিত করতে হবে। আপনার বাগানে কীটের উপস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে পাখির কলকাকলিও বাড়বে। প্রত্যেকের ব্যক্তিগত এ উদ্যোগ সম্ভবত আমাদের পৃথিবীকেও বাঁচিয়ে দিতে পারে।

আপনি যদি ছাদে কিংবা বাড়ির পাশে পতিত জমিতে বাগান করে থাকেন, তাহলে সেখানে ক্ষতিকর কীট জন্মাতে পারে এমন কোনো উপাদান রাখতে দেবেন না। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করার পর বাগানে কিছুটা প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য রাখুন। ঝরা পাতা সবই কি সরিয়ে ফেলার প্রয়োজন রয়েছে? ফুল পুরোপুরি ঝরে পড়ার আগে কেন সরিয়ে ফেলবেন? প্রকৃতিতে এই স্বাভাবিকতাগুলো ধরে রাখতে দিন বাগানে। উপকারী পতঙ্গ এগিয়ে আসবে। হতে পারে পড়শিদের কেউ এসে বলবেন, এত পাতা জমে গেছে সেগুলো না সরালে দেখতে বিচ্ছিরি লাগে। আপনি সোজা উত্তর দেবেন, আগে দুনিয়া বাঁচুক। সব কীট ক্ষতিকর নয়। আর প্রকৃতির ভারসাম্য এবং আমাদের প্রতিবেশের জন্য কীটপতঙ্গের সুষ্ঠু আবাসন গড়ে তোলার দায়িত্ব আমাদেরই নিতে হবে।

কীটপতঙ্গ রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। অনেকের মনে কীটপতঙ্গ সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। অনেকের ধারণা, সব পোকাই কামড় দেয়। বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন। মানুষের জন্য ক্ষতিকর রোগবাহিত কীটের সংখ্যা যৎসামান্য। নগরাঞ্চলে মশা, তেলাপোকা, উইপোকা ও মাছির উপদ্রবই বেশি। সম্প্রতি মশাই বেশি ক্ষতিকর হয়ে উঠেছে। কিন্তু এর জন্য আমরাই দায়ী। বিশ্বের অনেক দেশই পরাগায়নের বিষয়টি যেন স্বাভাবিকভাবে ঘটে সেজন্য নীতিমালা নির্ধারণ করছে এবং কীটপতঙ্গের নিরাপদ আবাসন নিশ্চিত করার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেছে। কিন্তু সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য মানুষের ভাবনায় পরিবর্তন আনা জরুরি। আমরা অনেকেই কীট দেখলে ভয় পাই বা ঘেন্নায় দূরে সরে যাই। আমিও এর ব্যতিক্রম নই। কিন্তু একবার ভেবে দেখুন, প্রকৃতিতে কীট আছে বলে মাছ প্রকৃতি থেকে খাবার আহরণ করে, অনেক উদ্ভিদ তাদের পরাগায়ন সম্পন্ন করে, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে। এরকম অসংখ্য উপকারী দিকের কথা বলা যাবে। প্রকৃতিতে কীটপতঙ্গ আছে বলেই পৃথিবী এখনও বাসযোগ্য। আর এজন্যই এই ক্ষুদ্র জীব সংরক্ষণের জন্য আমাদের উদ্যোগী হয়ে উঠতে হবে।

  • লেখক ও জীববৈচিত্র্য-বিশ্লেষক

ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা