× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ডেঙ্গু

ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও পরস্পর বিরোধী বক্তব্য

মামুন রশীদ

প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৪৭ পিএম

আপডেট : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:২০ পিএম

 মামুন রশীদ

মামুন রশীদ

আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার মাহাথির মোহাম্মদ। প্রথম দফায় ১৯৮১ থেকে ২০০৩ পর্যন্ত দেশটির প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হন। উন্নত চিকিৎসার জন্য খুব দূরে না হলেও অন্তত পাশের দেশ সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা করানোর তাগিদ দেওয়া হয়। কিন্তু কেন? কারণ চিকিৎসাসেবায় তখন মালয়েশিয়া তত উন্নত ছিল না। প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করে তিনি কি দেশেই চিকিৎসা নেওয়ার মতো সময় পাবেন? উত্তর হ্যাঁ হওয়ায়, তিনি ঝুঁকি নিয়েও অপেক্ষা করেন। ঘটনাটি বেশ আগের হলেও, করোনাকালের শুরুতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথাগুলো ঘুরেফিরে অনেকের দেয়ালেই দেখেছি। যারা নিজেদের দেয়ালে এ বার্তা ঝুলিয়েছিলেন বা বিভিন্নভাবে একে অন্যের সঙ্গে বিনিময় করেছিলেন, তাদের কেউই মালয়েশিয়ার উন্নতিতে ব্যথিত নন। এ নিয়ে তাদের শিরঃপীড়াও কাজ করেনি। বরং বার্তাটি ঝোলানো ব্যক্তিরা আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থার দীনতা, সমস্যা ও সম্ভাবনার দিকটির প্রতিই ইঙ্গিত দিতে চেয়েছেন।

২.

করোনাকালে সংবাদমাধ্যমে ‘ক্ষণগণনা’য় প্রতিদিনই জানানো হতো আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। ডেঙ্গু নিয়েও ক্ষণগণনা চলছে। আগস্ট মাসে ডেঙ্গু কেড়ে নিয়েছে ৩৪২ প্রাণ। খবরটি প্রকাশ পেয়েছে ১ সেপ্টেম্বর প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ। এদিনের ‘২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু পরিস্থিতি’ থেকে জানা যায়, ২৪ ঘন্টায় হাসপাতালে রোগী ২৩০৮ এবং মৃত্যু ১৭। চলতি বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ৫৯৩। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী ও মৃতের সংখ্যা। তবে করোনার ক্ষণগণনা সাধারণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়ালেও ডেঙ্গু তা পারেনি। করোনার প্রকোপ মোকাবিলায় সহায়ক ছিল সচেতনতা। ঘন ঘন হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার, সামাজিক দূরত্ব মেনে চলায় করোনা পূর্ণ থাবা বসাতে পারেনি। কিন্তু ডেঙ্গু আজ যেভাবে থাবা বিস্তার করছে, তার পেছনে সংশ্লিষ্টদের ব্যর্থতার সঙ্গে আমাদের অসচেতনতাও কম দায়ী নয়। সংবাদমাধ্যমে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র দাবি করেছেন তার এলাকা ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। অথচ ওনার দাবির কয়েক ঘন্টা পরই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সংবাদমাধ্যমে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তির তথ্যানুযায়ী, শেষ ২৪ ঘন্টায় ডিএসসিসি এলাকার আটটি সরকারি হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছেন ২৪২জন। ডেঙ্গু আজ যে ভয়াবহ আতঙ্কের অন্য নাম হয়ে উঠেছে, এর পেছনে এমন দায়সারা, গা বাঁচানো মন্তব্যও কিন্তু কম দায়ী নয়। ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নির্মূলের দায়িত্ব সিটি করপোরেশন, পৌরসভার। সঙ্গে ব্যক্তিপর্যায়ের সচেতনতাও প্রয়োজন। আমরা নিজেরাও আবাসস্থলে, কর্মক্ষেত্রে, বাড়ির চারপাশে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা বেড়ে উঠতে দিচ্ছি। সংস্থাগুলোর দায়িত্ব রয়েছে এ যেমন সত্য, তেমন আমাদের দায়ও এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।


৩.

রাজধানীতে কুড়িল বিশ্বরোড ধরে যারা চলাচল করেন, প্রতিবেশী একটি দেশে ভিসাপ্রার্থীদের দীর্ঘসারি তাদের চোখ এড়ায় না। এই ভিসাপ্রার্থীর বড় অংশই দেশটিতে যেতে চান তাদের চিকিৎসাসেবা নিতে। পাশের দেশসহ অনেক দেশেই এখন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত তাদের স্বাস্থ্যসেবা। আস্থা রাখার মতো আমাদেরও কিন্তু যথেষ্ট চিকিৎসক রয়েছেন, চিকিৎসক তৈরিতে আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও সন্তোষজনক। সরকারি-বেসরকারি উভয় ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিদেশি শিক্ষার্থীও কম নয়। তাতে স্পষ্ট আমরা ভুল পথে নেই। কিন্তু এ পথটি কাজে লাগিয়ে আমাদের স্বাস্থ্য খাত কেন এগিয়ে যেতে পারছে না? কেন ভিসাপ্রত্যাশীদের লাইন সীমিত করতে পারছে না?

করোনাকালে চট করে কারও পক্ষে দেশের বাইরে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। তখন পুরো দুনিয়াই নিজেদের দুয়ারে খিল এঁটেছিল। ফলে হুটহাট ভিনদেশে যাওয়ার সুযোগ বন্ধ হয়। ওই বাইরে যাওয়া বন্ধ হওয়াতেই স্পষ্ট হয়েছিল আমাদের চিকিৎসাব্যবস্থার হালহকিকত। এ খাতের কোথায় কতটুকু ত্রুটি, কতটুকু ফাঁকি তা-ও দেখিয়ে দেয় করোনা। করোনার সেই ভয়ংকর সময় পেরিয়ে এসে আশা করা গিয়েছিল সেদিনের ত্রুটি, ফাঁকি মেরামত শুরু হবে। কিন্তু ডেঙ্গু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে মুখে যা-ই বলি, আসলে আমরা স্বাস্থ্য খাতকে গুরুত্ব দেই না, অবহেলাই করি। চলতি অর্থবছরে বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়লেও খাতওয়ারি বরাদ্দের নিরিখে ব্যয় কমেছে। অথচ চিকিৎসাসেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে বর্তমান সরকার আন্তরিক। সরকারের এটি রাজনৈতিক অঙ্গীকারও। তার পরও স্বাস্থ্য খাতের ত্রুটি মেরামতে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাও যথাসময়ে বাস্তবায়িত না হওয়ার নজিরও  কিন্তু সংবাদপত্রে উদাহরণ হয়ে এসেছে। আসলে স্বাস্থ্য খাতকে গুরুত্ব না দেওয়ার যেসব অভিযোগ বারবার উঠছে, তা থেকে সত্যিই কি আমরা বেরোনোর চেষ্টা করছি? না যেখানে ছিলাম সেই বৃত্তেই ঘুরপাক খাচ্ছি?


৪.

স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়ন ছাড়া দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। কেন? কারণ, করোনা দেখিয়েছে স্বাস্থ্যসেবার বিপর্যয়ে থেমে যায় উন্নয়ন। শান্তি থাকে না, সামাজিক অশান্তি সৃষ্টি হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে এবং ভবিষ্যতের বিপদ মোকাবিলায় স্বাস্থ্য খাতকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন। মানুষ উন্নত সেবা চায়। তারা ভরসার জায়গা খোঁজে। আমাদের ধনিক শ্রেণি, যাদের সামর্থ্য আছে, তারা নিজেরাও দেশে মানসম্মত হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ার দিকে মনোযোগ দিলে সংকট কিছুটা কমবে। যারা দেশে ব্যবসা করছেন, সম্পদ গড়ছেন, সেই সম্পদ নানা খাতে বিনিয়োগ করছেন, তা থেকে কিছুটা স্বাস্থ্য খাতেও বিনিয়োগের প্রয়োজন অনুভব করুন। প্রয়োজনের সময় সিঙ্গাপুর-ব্যাংকক সহজ না-ও হতে পারে। করোনা তো তা হাতেনাতে দেখিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলেছিলেন, অসুস্থ হলে তাকে যেন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তোলা না হয়। চিকিৎসা তিনি বাংলাদেশেই নেবেন। প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের যথাযথ বাস্তবায়নের জন্যও কিন্তু সকলেরই উদ্যোগী হওয়া জরুরি। 


৫.

চলতি পথে, হঠাৎ কোথাও বিকট আওয়াজ হলে আতঙ্কিত মানুষ প্রথমে ছুটে পালানোর চেষ্টা করে। দিগবিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে সটকে পড়ার চেষ্টা করে। ধাতস্থ হলে ফিরে আসে শব্দের উৎসে। তখন জানার চেষ্টা করে কোথায়, ঠিক কী ঘটেছে? করোনা আতঙ্কিত মানুষকে পথ থেকে হটিয়ে দিয়েছিল। তারপর সময় গড়িয়েছে, মানুষ ধাতস্থ হয়েছে, সম্বিত ফিরেছে। এখন ডেঙ্গু একইভাবে আমাদের হটিয়ে দিতে চাইছে। এখান থেকে ফিরতে সরকারকেই সবার আগে সম্বিত ফিরে পেতে হবে। ভবিষ্যৎ যেন শঙ্কামুক্ত থাকে, মানুষ যেন নিরাপদ থাকে সেজন্য চিকিৎসাব্যবস্থার উন্নতি নিশ্চিত করতে হবে। সঙ্গে ডেঙ্গুসহ যে কোনো রোগ প্রতিরোধে সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে। কারণ জনগণের ভেতর থেকে গড়ে ওঠা ব্যক্তিগত সুরক্ষার ধারণাতেই মিলবে কাঙ্ক্ষিত মুক্তি।


  • কবি, সাংবাদিক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা