× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দিবস

পারমাণবিক বোমার ধ্বংসলীলা

মামুন রশীদ

প্রকাশ : ২৯ আগস্ট ২০২৩ ০৯:৪০ এএম

আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০২৩ ১৩:৫৫ পিএম

পারমাণবিক বোমার ধ্বংসলীলা

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা তার ছাপ ফেলেছিল পুরো বিশ্বে। মাত্র দুটি বোমা এ যুদ্ধের গতিপথ যেমন নির্ধারণ করে দেয়, তেমন পাল্টে দেয় যুদ্ধের ভয়াবহতা ও বীভৎসতার চিত্র। ১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আর্মি এয়ার ফোর্সের একটি বিমান থেকে ‘লিটল বয়’ নামে একটি বোমা ফেলা হয় জাপানের হিরোশিমা শহরে। এর তিন দিন পর ৯ আগস্ট ‘ফ্যাট ম্যান’ নামে আরও একটি বোমা ফেলা হয় জাপানের নাগাসাকি শহরে। এ দুটি বোমার বিস্ফোরণে মুহূর্তেই প্রাণ হারায় প্রায় ২ লাখ মানুষ। যাদের প্রায় সবাই বেসামরিক। তাৎক্ষণিক মৃত্যুর পরে বোমা দুটির তেজস্ক্রিয়তার ক্ষত বহন করছে শহর দুটির অসংখ্য মানুষ।

আদর করে ‘ফ্যাট ম্যান’ ও ‘লিটল বয়’ নাম রাখা হলেও এ দুটি বোমার ধ্বংসলীলায় পুরো বিশ্ব হতবাক হয়ে পড়ে। যুদ্ধে সাধারণ মানুষের এত করুণ মৃত্যু ইতিহাসে বিরল। ‍দুটি বোমাই ছিল পারমাণবিক অস্ত্র। বিশ্ববাসীরও সেই প্রথম এবং এখন পর্যন্ত শেষ পরিচয় পারমাণবিক অস্ত্রের ভয়াবহতার সঙ্গে। বিশ্বকে যেন আর এমন বীভৎসতার মধ্য দিয়ে যেতে না হয়, সেজন্য পারমাণবিক বোমার উৎপাদন ও ব্যবহার নিষিদ্ধের প্রশ্নে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই আলোচনা চলছে। পারমাণবিক অস্ত্রের ভান্ডার যাদের রয়েছে, সেই দেশগুলোরও উৎপাদন সীমিত করার প্রসঙ্গ ঘুরে ফিরে আলোচনায়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক পারমাণবিক বোমা আবিষ্কার ও ব্যবহারের পর তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমানে রাশিয়া) ২৯ আগস্ট, ১৯৪৯ সালে প্রথমবারের মতো এ অস্ত্র পরীক্ষা সম্পন্ন করে। এরপর ১৯৬১ সালের অক্টোবরে সোভিয়েত ইউনিয়নের চালানো আরেকটি পরীক্ষামূলক বিস্ফোরণে তৈরি হয় মাশরুম আকৃতির বিরাট কৃত্রিম মেঘমালা; যা দেখা যায় ১৬০ কিলোমিটার দূর থেকেও। পারমাণব্কি বোমার মারাত্মক ধ্বংসলীলা প্রত্যক্ষ করেও এর উৎপাদন ও মজুদ থেকে পিছিয়ে আসেনি বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলো। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন যেমন পরমাণু অস্ত্রের পরীক্ষাকার্য অব্যাহত গতিতে চালাতে থাকে, সে ধারায়ই অংশ নিয়ে একে একে আরও ছয়টি দেশ গড়ে তোলে পারমাণবিক অস্ত্রের ভান্ডার। ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য, চীন, ভারত, পাকিস্তান ও উত্তর কোরিয়া নিয়ে ঘোষিত পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র আটটি। ইসরায়েল পারমাণবিক অস্ত্র উৎপাদন ও মজুদ গড়ে তুললেও প্রকাশ্যে স্বীকার করেনি।

হিরোশিমা-নাগাসাকি মানব জাতির ইতিহাসে দগদগে ঘা হয়ে আছে। তা সত্ত্বেও পরমাণু অস্ত্রে শক্তিশালী দেশগুলো নিজেদের অস্ত্রভান্ডার থেকে পরমাণু শক্তি কমাতে চায় না। ব্যবহার থেকেও বিরত নয়। পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারই শুধু নয়, তার পরীক্ষায় সরাসরি মানুষের মৃত্যু না হলেও এর বিপুল ক্ষতি সহ্য করতে হয় প্রকৃতিকে। যার প্রভাব পড়ে মানবদেহেও। এজন্যই জাতিসংঘের ৬৪তম অধিবেশনে কাজাখস্তানের প্রস্তাবে প্রতি বছর ২৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক পারমাণবিক পরীক্ষাবিরোধী দিবস পালনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ২০০৯ সালের ২ ডিসেম্বর নেওয়া এ সিদ্ধান্তের উদ্দেশ্য বিশ্বের সব দেশের মানুষের মধ্যে অস্ত্রবিরোধী সচেতনতা তৈরি করা। কাজাখস্তান প্রস্তাবটি এনেছিল ১৯৯১ সালের ২৯ আগস্ট তাদের পারমাণবিক পরীক্ষার সাইট বন্ধের কথা স্মরণ করে। এরপর ১৯৯৬ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে পারমাণবিক পরীক্ষা নিষিদ্ধকরণ চুক্তি উত্থাপন হলেও মানব জাতির দুর্ভাগ্য, চুক্তিটিতে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর বড় অংশ, যাদের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির সক্ষমতা রয়েছে, তারা স্বাক্ষর করেনি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই চুক্তিটি কার্যকর হতে পারেনি।

পারমাণবিক পরীক্ষাবিরোধী দিবসের উদ্দেশ্য সাধারণ মানুষকে সচেতন করা। তারা সচেতন হলেও, যে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো পারমাণবিক বোমা উৎপাদন, পরীক্ষা ও সংরক্ষণ করছে, তারা কি আদৌ সচেতন হয়েছে? আজ বিশ্বের অসংখ্য মানুষ ক্ষুধার্ত। খাবারের অভাবে অপুষ্টির শিকার অসংখ্য শিশু। প্রকৃতির ওপর ক্রমাগত অত্যাচারের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন যে সংকটের বার্তা প্রকাশ করছে, সেদিকে নজর না দিয়ে, ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে খাবার তুলে না দিয়ে বিলিয়ন বিলিয়ন অর্থের বিনিময়ে শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো মজুদ করছে হাজার হাজার পারমাণবিক অস্ত্র। যাদের হাতে এ অস্ত্র নেই, তারাও আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে এই প্রাণঘাতী অস্ত্র তাদের ভান্ডারে যোগ করতে মরিয়া হয়ে উঠছে। কিন্তু তা প্রয়োগ হবে কার বিরুদ্ধে? মানবসভ্যতা ধ্বংসের জন্যই তো!

  •  কবি, সাংবাদিক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা