× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

মুরগি-ডিম সিন্ডিকেটের থাবামুক্ত করুন

সম্পাদক

প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৩ ১০:১০ এএম

মুরগি-ডিম সিন্ডিকেটের থাবামুক্ত করুন

বাজারের তাপে-চাপে ভোক্তা নাকাল। সিন্ডিকেট শব্দটি আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত, বিশেষ করে বাজারে এর অপচ্ছায়া প্রকটভাবে দৃশ্যমান। সরকারের দায়িত্বশীরাও সিন্ডিকেটের দাপটের কথা ইতঃপূর্বে বহুবার স্বীকার করেছেন। সাধারণ বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষের পক্ষে গরু কিংবা খাসির মাংস কেনা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় আমিষের চাহিদা পূরণে বিকল্প উৎস ডিম-বয়লার মুরগিও ক্রয়সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। এরই ফের প্রতিফলন দেখা গেছে ২৬ আগস্ট প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে। পোল্ট্রি মুরগি-ডিম উৎপাদনে খামারিদের নানা কায়দায় জিম্মি করে রেখেছে করপোরেট কোম্পানিগুলো। দেশের ইতিহাসে ডিমের সর্বোচ্চ দাম, এই সংবাদ শিরোনাম দূর অতীতের নয়। মুরগির বাচ্চা ও খাদ্য উৎপাদন, খাদ্যের কাঁচামাল আমদানি-রপ্তানি এবং ডিলার পর্যায়ে সরবরাহ সবকিছুই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে বাজারে একক আধিপত্য চালিয়ে যাচ্ছেন সিন্ডিকেটের হোতারা। বহু খামারির কাছ থেকে ব্লাঙ্ক চেক নিয়ে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ে উৎপাদন করানো হচ্ছে এবং এর ফলে খামারিদের যে জিম্মিদশা চলছেচ এর বিরূপ প্রভাব ক্রমেই ভোক্তার জন্য অসহনীয় হয়ে উঠছে। পোল্ট্রি খাতে ধস নামার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর ফলে আর্থসামাজিক পরিস্থিতি কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকতে পারে এবং নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিড়ম্বনা আরও কতটা বাড়তে পারে, এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে আরও আগেই যে পর্যবেক্ষণচিত্র পাওয়া গেছে, তা কোনোভাবেই স্বস্তির নয়।

স্থিতিশীলতা শব্দটি দেশের বাজারে যেন অপাঙ্‌ক্তেয় হয়ে পড়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতি আমলে নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বাজারে স্থিরতা আনার লক্ষ্যে ডিম আমদানির আভাস দিয়েছে। আমরা জানি, কর্মহীন মানুষ আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে পোল্ট্রি খামারের দিকে ঝোঁকার ফলে শুধু ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাই নয়, আরও অনেকের কর্মসংস্থানের পথ সুগম হয়েছিল। সিন্ডিকেটের কারসাজির ক্রমাগত অভিঘাতে যদি পরিস্থিতি টালমাটাল হয়ে পড়ে তাহলে শুধু ভোক্তাই নয়, চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আত্মকর্মসন্ধানীরাও। এই জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে এবং সিন্ডিকেটের কারসাজি রোধের কার্যত কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে ডিম আমদানি করে ভোক্তাদের সাময়িক স্বস্তি কিছুটা নিশ্চিত করা গেলেও দীর্ঘমেয়াদে এর নেতিবাচক প্রভাব আরও বেশি প্রকট হয়ে উঠবে। অর্থনীতি তো বটেই, সামাজিক প্রেক্ষাপটেও তা কোনোভাবেই সুখকর হবে না। আমরা দেখছি, বাজার স্থিতিশীল রাখতে না পারার দায় জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দায়মুক্ত হতে চাচ্ছে। ফের হঠাৎ করে বয়লার মুরগি ও ডিমের দামের ক্ষেত্রে অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বমুখিতা সঙ্গতই কিছু প্রশ্নও দাঁড় করিয়েছে। পোল্ট্রি খাত তো বটেই, একই সঙ্গে সামগ্রিকভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণের নাটাই কার হাতেÑ এ প্রশ্ন আমরা নিকট অতীতে সম্পাদকীয় স্তম্ভে উত্থাপন করেছিলাম। আমরা এও জানতে চেয়েছিলাম, কোন অদৃশ্য শক্তি এ ক্ষেত্রে কলকাঠি নাড়ছে? প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর প্রতিবেদনে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতির বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে ১ লাখ ৬০ হাজার খামার ছিল। কিন্তু করপোরেট কোম্পানিগুলোর কারসাজিতে লোকসান গুনতে গুনতে প্রায় ১ লাখ খামার বন্ধ হয়ে গেছে! এ বার্তা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক।

করপোরেট কোম্পানিগুলো পোল্ট্রি খাতে যেভাবে কলকাঠি নাড়ছে, এর ফলে এ খাতে দুর্দিনের ছায়া ঘনীভূত হয়ে ওঠার বিষয়টি পরিষ্কার। সিন্ডিকেটের হোতারা কারসাজি করে ভোক্তার পকেট কেটে একদিকে নিজেদের পকেট স্ফীত করছেন, অন্যদিকে ক্রমবিকশিত একটি খাতকে বিপন্ন-বিপর্যস্ত করে নিজেদের আখের গোছানোর পথ সুগম করতে আরও নানানরকম অপকৌশলে মেতে উঠেছে্ন। আমরা বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হয়ে এ প্রশ্নও পুনর্বার রাখতে চাইÑ সিন্ডিকেটের হোতাদের হাত কি আইনের হাতের চেয়েও লম্বা? সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বাজার স্থিতিশীল করার লক্ষ্যে যে পথে পা বাড়াচ্ছে এর ফল কার্যত বিরূপই হবে। বিদ্যমান বৈশ্বিক সংকট, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ও ডলার সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডিম আমদানির চিন্তা প্রশ্ন তুলতেই পারে। কারসাজির পথ রুদ্ধ না করে শাক দিয়ে মাছ ঢাকার এ প্রক্রিয়া কতটা যৌক্তিক?

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বাণিজ্য, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে আমরা সিন্ডিকেট ভেঙে দেওয়ার লক্ষ্যে কঠোর কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার তাগিদ দিই। অন্যান্য খাতের মতো পোল্ট্রি খাতেও অসাধু ও অতিমুনাফাখোরদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অপচেষ্টা বন্ধ করতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিকল্প নেই। মহলবিশেষের স্বেচ্ছাচারিতার কাছে মানুষ জিম্মি হয়ে থাকবে আর এর কোনো প্রতিকার হবে না, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। ভোক্তা ও খামারিদের স্বার্থ দেখার দায় যাদের, তাদের ব্যর্থতায় করপোরেট কোম্পানির ঋণচক্র থেকে খামারিরা বের হয়ে আসতে পারবে না এবং ভোক্তাকে নাকাল হতেই হবে, তা তো হতে পারে না।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা