× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

খাদ্যপণ্য

চাল হতে পারে দুষ্প্রাপ্য

সুপর্ণা শর্মা

প্রকাশ : ২৪ আগস্ট ২০২৩ ১৩:২৬ পিএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

সম্প্রতি রাশিয়া ‘কৃষ্ণসাগর খাদ্যশস্য চুক্তি’ স্থগিতের ঘোষণা দেওয়ার পর ভারতও চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ভারতের অভ্যন্তরে মূল্যস্ফীতি এবং চালের মজুদের সংকট থেকেই মূলত এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তাদের এ সিদ্ধান্ত সমগ্র বিশ্বেই ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। ভারত এ মুহূর্তে বিশ্বের সবচেয়ে বড় চাল রপ্তানিকারক দেশ। ২০২২ সালে সমগ্র বিশ্বে চালের বাণিজ্যে ৪০ শতাংশ সরবরাহ করে দেশটি। ওই বছর ১৪০টি দেশে প্রায় ২২ মিলিয়ন মেট্রিক টন চাল রপ্তানি করেছিল। নিষেধাজ্ঞার পরও ভারত আধসেদ্ধ ও বাসমতী চাল রপ্তানি করছে আন্তর্জাতিক চুক্তির অংশ হিসেবে। তাদের এ নিষেধাজ্ঞার ফলে সারা বিশ্বে চালের দাম অন্তত ১৫ থেকে ২৫ শতাংশ বেড়েছে। বিশেষত বাংলাদেশ ও নেপালের মতো দক্ষিণ এশিয়ার রাষ্ট্রগুলো বেশি সমস্যার মুখোমুখি। কারণ সাদা চাল এ দুই রাষ্ট্রের প্রধান খাদ্য এবং তাদের নিয়মিত সরবরাহ প্রয়োজন হয়। বেনিন, সেনেগাল, টোগো ও মালির মতো আফ্রিকান দেশগুলো ভারত থেকে কম মূল্যের চাল আমদানি করে। তারাও নানা সমস্যার মুখোমুখি।

বিশ্ববাজারে খাদ্যশস্যের দাম এমনিতেই বেড়ে গেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্যশস্যের সরবরাহ বিঘ্নিত হয়েছে। বিশেষত কৃষ্ণসাগর খাদ্যশস্য চুক্তি থেকে রাশিয়ার বহির্গমনও বড় সমস্যা সৃষ্টি করেছে। ভারতের নিষেধাজ্ঞার পরপরই আশঙ্কা করা হচ্ছে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং পাকিস্তানও একই পদক্ষেপ নিতে পারে। এ তিনটি রাষ্ট্র সম্মিলিতভাবে বৈশ্বিক বাজারে ৩০ শতাংশ চাল রপ্তানি করে। তারাও যদি নিষেধাজ্ঞার আশ্রয় নেয় তাহলে চালের দাম আবার বাড়বে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, চালের পরিপূরক শস্য গম, সয়াবিন, ভুট্টা ও সুজির ওপর চাপ বাড়লে দাম বাড়বে এমনকি এর বিরূপ প্রভাব জ্বালানি খাতেও পড়বে। ভারত প্রতি বছর ১৩৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন চাল উৎপাদন করে। দেশটির অভ্যন্তরে ১০০ থেকে ১০৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন চাহিদা মেটানোর পর বাকি চাল তারা বিদেশে রপ্তানি করে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। এর নেতিবাচক প্রভাব ভারতের বাজারেও পড়েছে। বিগত কয়েক বছরে চালের দাম ১০ শতাংশ হারে বেড়েছে। অনেকের অভিমত, অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল করতেই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি খোলাবাজারে ভারত সরকার ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন টন চাল ছেড়েছে; যাতে বাজারে দাম স্থিতিশীল হয়। সামনে পাঁচটি প্রদেশের নির্বাচন। নির্বাচনের আগে বাজারব্যবস্থা সুসমন্বিত রাখার দায়িত্ব সরকারের। তবে ভারতের নিষেধাজ্ঞার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কয়েকটি ভিডিও মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার অনেক সুপারশপে চাল কেনার জন্য মানুষ ভিড় করছে। চাহিদা এতটাই বেড়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্রকে বাধ্য হয়ে চাল বিক্রি বন্ধের বিষয়ে নিয়ম চালু করতে হয়েছে।

Bottom of Form

উন্নয়নশীল বাজারে বাসমতী চালের চাহিদা বেশি। এসব বাজারে চালের সরবরাহ ঘাটতি কিংবা দাম বৃদ্ধি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর ও পশ্চিম আফ্রিকার বাজার কম মূল্যের চালের ওপর নির্ভরশীল। এ অঞ্চলের জন্য দাম বৃদ্ধি ক্ষতিকর হতে পারে। নেপাল, বাংলাদেশ এবং একাধিক আফ্রিকান রাষ্ট্রের খাদ্যব্যয়ের অর্ধেক চালে। তাদের নির্ভরতা এবং এল নিনো দাবদাহ ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ার মতো রাষ্ট্রের জন্য নানা আশঙ্কার জন্ম দিচ্ছে। এল নিনোর কারণে কৃষি ও মাছ চাষ বিঘ্নিত হচ্ছে। মাছ চাষ বিঘ্নিত হওয়ায় মানুষ মাংসের ওপর নির্ভরতা বাড়াচ্ছে। ফলে মাংসের দাম বাড়ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে নানাভাবে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় পণ্যের বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর নেপালে চালের দাম ১৬ শতাংশ বেড়েছে এবং ভিয়েতনামে চালের দাম গত ১৫ বছরে সর্বোচ্চ। ফিলিপাইনও প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিধ্বস্ত। নেপাল ও ফিলিপাইন প্রশাসন ভারত সরকারকে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ করবে বলে জানিয়েছে।

বৈশ্বিক বাজারের ৯০ শতাংশ চাল এশিয়ায় উৎপাদিত হয়। কিন্তু এল নিনোর মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ধানের উৎপাদনের জন্য ক্ষতিকর। এল নিনো এমন একটি জলবায়ুগত সমস্যা যা প্যাসিফিক সমুদ্রের উপরিতলে সৃষ্ট উষ্ণতার কারণে ভারী বর্ষণ কিংবা খরা সৃষ্টি করে। এল নিনো ভারতে ৬০ শতাংশ নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, এল নিনো আট থেকে নয় মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। বৈশ্বিক উষ্ণতার ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের এই নেতিবাচকতা উৎপাদনব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ভারতে এখন বর্ষাকাল। এল নিনো এই সময়ে কতটা প্রভাব রাখবে এবং আগস্টে এই জলবায়ুগত অবস্থা পরিবর্তিত হবে কি না দেখার বিষয়। যদি পরিবর্তন না হয় তাহলে বৃষ্টিপাতের অস্বাভাবিকতা উৎপাদনে ব্যাপক নেতিবাচক পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। চলতি বছর ভারত অন্তত ১৩৫ মিলিয়ন টন চাল উৎপাদনের প্রত্যাশা করছে। কিন্তু ধানের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে বৃষ্টিপাতের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে।

অক্টোবর ও ডিসেম্বরে সে ধান কাটার মৌসুম শুরু হবে। বর্ষাতেই ভারতের ৮০ শতাংশ চাল উৎপাদন হয়। কিন্তু বৃষ্টিপাত না হয়ে খরা দেখা দিলে ভারতে চালের উৎপাদন ৩৫ শতাংশ কমবে। অন্যদিকে আরব সাগরে পানির উচ্চতা বেড়ে চলেছে। পাকিস্তানেও ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিজ্ঞানীরা। এ বন্যায় পাকিস্তানের উৎপাদিত শস্যও নষ্ট হতে পারে। এল নিনো তাপমাত্রা বাড়িয়ে চলেছে। অক্টোবর ও ডিসেম্বরে ভারতে আবার নতুন করে ধান চাষের তোড়জোড় শুরু করা হবে। উৎপাদন ঘিরে এ শঙ্কার কারণে চালের সরবরাহ নিয়েও নানা আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। চাল সরবরাহের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা সাময়িক। কিন্তু এ সিদ্ধান্তের ফলে ২০০৭-০৮ সালের মতো পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। ওই বছর ভিয়েতনামে চালের দাম তিন গুণ বেড়ে গিয়েছিল। বিশ্ববাজারে চালের সংকট খাদ্যসংকটের আশঙ্কা বাস্তবে দৃশ্যমান হতে পারে বলেই অনেকের ধারণা।


  • সাংবাদিক 


আলজাজিরা থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা