× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

দিবস

মানব পাচার দাসপ্রথারই ভিন্ন রূপ

মামুন রশীদ

প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২৩ ১০:২০ এএম

আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৩ ১৩:২৬ পিএম

মানব পাচার দাসপ্রথারই ভিন্ন রূপ

হাটে-বাজারে আজ আমরা যেভাবে নিত্যপণ্য কেনাকাটা করি, একসময় মানুষও এভাবে কেনাবেচা হতো। গল্প-উপন্যাসে শোনা সেই কথাটি যে কতটা ভয়ংকরভাবে ব্যবহারিক জীবনে প্রচলিত ছিল, তা আধুনিক মানুষের পক্ষে ভাবাও কষ্টের। সেই কষ্টকর, হৃদয়বিদারী ঘটনাগুলোকেই অ্যালেক্স হ্যালি তার উপন্যাসের নায়ক কুন্টা কিন্টোর মধ্য দিয়ে দেখিয়েছিলেন। অ্যালেক্স হ্যালি তার ‘রুটস’ উপন্যাসে আধুনিক মানুষের সামনে দাসপ্রথা এবং দাস ব্যবসার স্বরূপ উন্মোচন করেন, যা আধুনিক মানুষের পক্ষে কল্পনা করাও কঠিন। গ্রিক সভ্যতায় দাসপ্রথার কথা জানা যায়। এর অস্তিত্ব পাওয়া যায় রোম সভ্যতা, মেসোপটেমিয়াসহ অন্যান্য সভ্যতাতেও। তবে প্রথাটি ব্যবসায়িক বৈধতা পায় পনের শতকে। ভারতবর্ষে আসার নতুন পথ খুঁজতে বেরিয়ে ১৪৯২ সালের ১২ অক্টোবর আমেরিকা পৌঁছেন ক্রিস্টোফার কলম্বাস। তার এই আমেরিকা পৌঁছানো পাল্টে দেয় দাসপ্রথার প্রাচীন স্বরূপ। বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ আর খনিজ সম্পদের লোভে ইউরোপ থেকে দলে দলে মানুষ আসে উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকায়। স্থানীয়দের সরিয়ে তারা দখল করে মাঠ। কিন্তু সে মাঠে চাষের জন্য লোক চাই। আর এই চাওয়া থেকেই শুরু ‘ট্রান্স আটলান্টিক দাস’ ব্যবসার।

দাস ব্যবসার কেন্দ্রস্থল পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলীয় অঞ্চল ছিল। ইউরোপীয়রা উপকূল ধরে চলার সময় স্থানীয়দের জোর করে ধরে জাহাজে তুলে নেওয়া হতো। সেনেগাল থেকে অ্যাঙ্গোলা পর্যন্ত বিস্তীর্ণ এলাকা হতে সংগ্রহ করা হতো দাসদের। ফলে এ অঞ্চল পরিচিতি পায় স্লেভকোস্ট বা দাসের উপকূল নামে। এখানে ৪৫টি ছোটবড় জাতিগোষ্ঠীর মানুষকে জোর করে দাস বানানো হয়। কালো মানুষদের ধরে দাস বানাতে প্রথম নাম লেখায় পর্তুগিজ ও স্পেনীয়রা। পরে তাদের সঙ্গে যোগ দেয় ইউরোপের অন্যান্য দেশের মানুষও। আফ্রিকা থেকে কালো মানুষকে নিয়ে আটলান্টিক মহাসাগর পেরিয়ে প্রথম স্প্যানিশ জাহাজটি আমেরিকায় পৌঁছে ১৫০২ সালে। এর পরের কয়েকশ বছর কৃষ্ণ আফ্রিকার মানুষের জীবনের মানবতার লাঞ্ছিত হওয়ার সময়। ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত জমজমাট এ ব্যবসার মাধ্যমে আফ্রিকা থেকে দাস বানিয়ে আমেরিকা নিয়ে যাওয়া হয় প্রায় দেড় থেকে দুই কোটি নারী, পুরুষ ও শিশুকে। জাহাজের নোংরা পরিবেশ, গাদাগাদি করে রাখা, খাবার, পানি এবং অক্সিজেনের অভাবে আমেরিকা পৌঁছার আগেই তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ মারা যায়। সেদিনের সেই বীভৎসতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছিলেন অ্যালেক্স হ্যালি তার রুটসে। দাসদের প্রতি নির্মম আচরণ করা হতো। তাদের কোনো সুযোগ-সুবিধা ছিল না। তাদের দিয়ে কঠিন এবং পরিশ্রমের সব কাজ করিয়ে নেওয়া হতো। তাদের কোনো মানবিক জীবন ছিল না। এমনকি চাইলে তাদের মালিক দাসকে হত্যাও করতে পারত। দাসপ্রথার অমানবিকতার বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিবাদ ওঠে ১৭৯১ সালের ২২ ও ২৩ আগস্ট বর্তমান হাইতি ও ডমিনিকান রিপাবলিক অঞ্চলে। ১৮০৭ সালে রাষ্ট্রীয়ভাবে ইংল্যান্ড প্রথম দাসপ্রথা বিলুপ্ত করে। পরে একে একে অন্যান্য দেশও দাসপ্রথার বিলুপ্তি ঘোষণা করে। এ ধারার শেষ হয় ১৮৩০ সালে ব্রাজিলের দাসপ্রথা বাতিলের মাধ্যমে। তবে অমানবিক এই ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ হতে অপেক্ষা করতে হয় আরও কয়েকটি দশক। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন ১৮৬১ সালের ৬ আগস্ট  পাস করেন ‘কনফিসকেশন অ্যাক্ট’। তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতাতেই ১৮৬৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্থায়ীভাবে উচ্ছেদ হয় দাসপ্রথা। আমাদের উপমহাদেশে দাসপ্রথা বন্ধ হয় ১৮৪৩ সালের পাঁচ নম্বর অ্যাক্টের মাধ্যমে। দাসপ্রথা বিলুপ্তির ঐতিহাসিক বিপ্লব স্মরণে ২০০৭ সালের ২৩ আগস্ট লিভারপুলে আন্তর্জাতিক দাস জাদুঘর কাজ শুরু করে। এ ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্মরণীয় করে রাখতে ইউনেস্কোর উদ্যোগে বিশ্বব্যাপী ২৩ আগস্ট দাস ব্যবসা ও প্রথা বিলুপ্তির আন্তর্জাতিক স্মরণ দিবস হিসেবে পালন করা হয়। এর আগে ১৯৪৯ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে দাসত্ব বিলোপ রোধে দাসপ্রথা ও ব্যবসা নিষিদ্ধকরণে কনভেনশন গৃহীত হয়। পৃথিবী থেকে আনুষ্ঠানিক দাসপ্রথার বিলুপ্ত হলেও আজও নানা ছদ্মাবরণে রয়ে গেছে অনানুষ্ঠানিক দাসপ্রথা। উন্নত জীবনের লোভে, ফাঁদে ফেলে মানব পাচারের মাধ্যমে এখনও দাসপ্রথারই ভিন্ন রূপ দেশে দেশে জানিয়ে যাচ্ছে সেই জঘন্যতার শেকড়।

  •  কবি ও সাংবাদিক


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা