× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে

সম্পাদক

প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২৩ ০৯:৫৩ এএম

আপডেট : ২২ আগস্ট ২০২৩ ১১:৩৬ এএম

খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে হবে

বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম সেই কবে ক্ষুধার্ত মানুষের আহাজারির প্রেক্ষাপটে লিখেছিলেন, ‘দারিদ্র্য অসহ/পুত্র হয়ে জায়া হয়ে কাঁদে অহরহ/আমার দুয়ার ধরি।’ আরেক অকালপ্রয়াত কবি সুকান্তের সেই খেদোক্তি, ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।’ এ কাব্যপঙ্‌ক্তিগুলো বিদ্যমান বিশ্ববাস্তবতায় আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। ২১ আগস্ট প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর শীর্ষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক মন্দার ধারাবাহিক প্রতিক্রিয়ায় বিশ্বজুড়ে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা প্রকট আকার ধারণ করতে পারে। সম্প্রতি বিশ্বের ১৮টি দেশ তাদের ২৫টি কৃষি ও খাদ্যপণ্য এবং তিন ধরনের সার রপ্তানিতে অতিরিক্ত করারোপ, লাইসেন্সিং (কোটা) ও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর মাধ্যমে তারা নিজেদের খাদ্যশস্যের মজুদ ঠিক রাখতে চায়। এ প্রেক্ষাপটে এসব দেশ থেকে আমরা যেসব খাদ্যপণ্য আমদানি করি সেগুলোর ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। খাদ্যপণ্য মজুদের সংকট দেখা দিলে বাড়তে পারে মূল্যস্ফীতি এবং সব মিলিয়ে এক ধরনের খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার ছায়া ক্রমেই আরও প্রলম্বিত হতে পারে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ খাদ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছে এবং ক্রমেই তা দীর্ঘ হচ্ছে।

খাদ্যশস্য কিংবা খাদ্যপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের বিস্ময়কর উত্থানের খবর গত বছরের শেষ দিকের। স্বাধীনতা অর্জনের ৫২ বছর অতিক্রান্তে ২০টি খাতে বিশ্বের শীর্ষ ১০-এ বাংলাদেশের অবস্থান এবং খাদ্যশস্য কিংবা খাদ্যপণ্য উৎপাদনে দেশের এই অগ্রগতি নিঃসন্দেহে সুখকর বার্তা। একই সঙ্গে বিদ্যমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকির বিষয়টি সামনে আনছে। বাংলাদেশ যেসব দেশ থেকে গম, ভেজিটেবল অয়েল, পেঁয়াজ, চাল ও বিভিন্ন ধরনের ডাল আমদানি করে সেই দেশগুলো এসব পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আমাদের স্মরণে আছে, ২০০৭-০৮ অর্থবছরেও বেশকিছু দেশ কৃষি ও খাদ্য পণ্য রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল। তখন আফ্রিকার দেশগুলো ব্যাপক খাদ্যসংকটে পড়ে। আমাদের আমন-বোরো মৌসুমে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় ধান উৎপাদন বাড়লেও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে উৎপাদিত কৃষিপণ্য সংরক্ষণে কিছু প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়েছে। গমের ক্ষেত্রে অনেক দেশ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় আমাদের সমস্যা আরও বাড়তে পারে। তবে আশার কথা হলো, সরকার ইতোমধ্যে কয়েকটি দেশের সঙ্গে জিটুজি চুক্তি করেছে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের অভিমত, এর ফলে সংকট মোকাবিলায় অনেকটাই ভালো অবস্থানে রয়েছি আমরা। কিন্তু চলতি অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি কমানোর যে আশাবাদ ব্যক্ত হয়েছে এর বাস্তবায়ন যথেষ্ট চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। সার রপ্তানিতে যেসব দেশ ইতোমধ্যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেসব দেশ থেকে আমরা সার আমদানি করি। বিদ্যমান পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে এ ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি্র আশঙ্কা রয়েছে এবং এর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে কৃষি খাতে। তা ছাড়া কয়েকটি দেশ বেশকিছু খাদ্যপণ্যে রপ্তানি কর বাড়িয়েছে। ২১ আগস্ট প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ ভিন্ন এক প্রতিবেদনে প্রকাশ, প্রতিবেশী দেশ ভারত তাদের অভ্যন্তরে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে দেশে এই নিত্যপণ্যের দামে ইতোমধ্যে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। আমরা জানি, যেকোনো সংকট পুঁজি করে দেশের অসাধু ব্যবসায়ীরা নিজেদের আখের গুছিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। সিন্ডিকেট শব্দটি আমাদের বাজারের ক্ষেত্রে বহুল প্রচলিত। আমরা দেখছি, এ সিন্ডিকেটের কারসাজিতেই বাজারে অস্থিতিশীলতা জিইয়ে আছে।

সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সরকার অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্যসহায়তা অব্যাহত রেখেছে। আমরা জানি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবাদি জমি ফেলে না রাখার আহ্বান বারবার জানাচ্ছেন। সম্ভাব্য বৈশ্বিক খাদ্যসংকট মোকাবিলায় বিদ্যমান পরিস্থিতি আমলে রেখে যথাযথ প্রস্তুতি নিয়ে খাদ্যপণ্য মজুদের ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। ১২ জুন প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে বছরে দেড় কোটি টন খাবার অপচয় হয়। মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো খাদ্য। খাদ্যের অপচয় কোনোভাবেই সুখকর সংবাদ নয়। বিশ্বব্যাপী খাদ্য অপচয়ের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এক প্রতিবেদনে নিকট অতীতে বলা হয়েছে, বিশ্বে প্রতি বছর যে পরিমাণ খাদ্যের অপচয় হয় বা ময়লার ঝুড়িতে ছুড়ে ফেলা হয়; এর তিন ভাগের এক ভাগ খাবার দিয়ে ৮৭ কোটি ক্ষুধার্ত মানুষের ক্ষুধা মেটানো সম্ভব। খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকির যে আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই প্রেক্ষাপটে সরকারকে কৌশলী পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি বাজার ব্যবস্থাপনায়ও নজর বাড়াতে হবে। রোধ করতে হবে খাদ্যের অপচয়।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা