× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পাহাড়ে জঙ্গি আস্তানা : দমনে চাই বহুমাত্রিক পদক্ষেপ

সম্পাদক

প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৩ ১৫:৩৭ পিএম

পাহাড়ে জঙ্গি আস্তানা : দমনে চাই বহুমাত্রিক পদক্ষেপ

সম্প্রতি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নে পাহাড়ি এলাকা টাট্টিউলিতে জঙ্গি আস্তানার সন্ধানে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) সাফল্যের জন্য আমরা তাদের সাধুবাদ জানাই। সিটিটিসির সঙ্গে অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় এ পর্যন্ত তিন দফায় যে জঙ্গিদের আটক করা হয়েছে তাদের মধ্যে চিকিৎসক, প্রকৌশলী ও শিক্ষার্থীর পাশাপাশি নারী জঙ্গিরাও রয়েছে।

সিটিটিসির ‘অপারেশন হিল সাইড’ পরিচালনায় প্রথম দফায় ১০ জঙ্গিকে আটক করা হয়। ওই অভিযানের পর ভয়ে রোগী সেজে পাহাড়ি এলাকায় আস্তানা গাড়া আরও ১৭ জঙ্গি অটোরিকশাযোগে পালাতে গিয়ে আটক হয় অটোরিকশাচালক ও স্থানীয় জনগণের সহায়তায়। এই ঘটনাটি ঘটে অপারেশন হিলসাইড অভিযান পরিচালনার এক দিন পর। এরপর আরেক অভিযানে ওই জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র আরও কয়েক সদস্যকে পার্শ্ববর্তী পাহাড়ের দুর্গম এলাকা থেকে আটক করা হয়। ওই অভিযানে গানপাউডার, গোলাবারুদ ও জিহাদি প্রচুর বইও উদ্ধার করা হয়। আমরা স্থানীয় জনগণসহ অটোরিকশাচালকদের জঙ্গিবাদবিরোধী যে সাহসিকতার নজির দেখলাম, তা স্বস্তির বিষয়। আমরা তাদেরও অভিনন্দন জানাই। 

আমরা জানি, কিছুদিন আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবান জেলার পাহাড়ি দুর্গম সীমান্তে আরেকটি জঙ্গি সংগঠনের কিছু সদস্য আটক হয়েছিল। এর সূত্র ধরে অভিযান চালাতে গিয়ে পাহাড়ে জঙ্গি কার্যক্রমের নানা দিক উন্মোচিত হয়। বিচ্ছিন্নভাবে হলেও সমতল ছেড়ে পাহাড়কেন্দ্রিক জঙ্গি কার্যক্রমে এ যেন নতুন মাত্রা। জঙ্গি কিংবা উগ্রবাদীদের দমনে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর যে সাফল্য, তা তো প্রশংসাসূচক এ আর বলার অপেক্ষা রাখে না। কিন্তু একই সঙ্গে আমরা এ-ও মনে করি, তাতে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো অবকাশ নেই। কুলাউড়ার দুর্গম পাহাড়ে জঙ্গিরা জায়গা কিনে বসত গেড়ে তাদের উগ্রবাদী কার্যক্রম পরিচালনা করার মতো ঘটনা এই প্রথম হলেও একটি বিষয় স্পষ্ট, সমতল থেকে পাহাড়ের আড়ালকে উগ্রবাদীরা বেছে নিয়েছে। হয়তো তারা মনে করছে, সমতলে তাদের কার্যক্রম যতটা সহজে দৃষ্টিগ্রাহ্য হওয়ার কথা পাহাড়ের আড়ালে তা ততটা সহজ নয়। কিন্তু তাদের এই ধারণা ভুল প্রমাণিত করে দিয়েছে সিটিটিসিসহ দেশের অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী ও গোয়েন্দা বাহিনীর তৎপরতা। 

এই সম্পাদকীয়স্তম্ভেই আমরা লিখেছিলাম, জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন করতে হলে সর্বাগ্রে দরকার তাদের অর্থের উৎস-প্রবাহসূত্রের অনুসন্ধান। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো তাদের দক্ষতা ও নজরদারির ক্ষেত্রে নতুন নতুন নজির সৃষ্টি করতে সক্ষম হলেও জঙ্গিদের অর্থায়নের ক্ষেত্রগুলো এখনও অচিহ্নিত রয়ে গেছে। আমরা মনে করি, অর্থের জোগান বন্ধ হলে জিহাদি জোশে ভাটার টান আরও জোরদার হতো। কুলাউড়ার পাহাড় থেকে যে জঙ্গিদের আটক করা হয়েছে, তারা স্থানীয় নয়। কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা যা দেখলাম তাহলো, জঙ্গি ও উগ্রবাদীদের মূলোৎপাটনে জনগণের সম্পৃক্ততা কতটা জরুরি এবং এর মধ্য দিয়ে উগ্রবাদীদের কর্মকাণ্ডের জাল বিস্তারের পথ রুদ্ধ করার সাফল্যের পথ চওড়া করা সহজ। দেশের জঙ্গিবাদ দমনে সচেতন জনগোষ্ঠীর নানাভাবে সোচ্চার ভূমিকা যে রয়েছে, সর্বশেষ কুলাউড়ার ঘটনায় তা আবারও প্রতীয়মান হলো। আমরা মনে করি, এই বিষবাষ্প যাতে কোনোভাবেই ছড়াতে না পারে, এজন্য বহুমাত্রিক ব্যবস্থা প্রয়োজন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি আরও গভীর করার পাশাপাশি জঙ্গিদের মদদদাতাদের সন্ধানে জোরদার কার্যক্রম চালাতে হবে। যেকোনো মূল্যে তাদের অর্থের উৎস সম্পর্কে অনুসন্ধান করে হাত দিতে হবে সেখানে। একই সঙ্গে জনসচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি জনগণকে জঙ্গিবাদ মোকাবিলায় আরও নিবিড়ভাবে সম্পৃক্ত করাও জরুরি। দেশে নারী জঙ্গিদের উত্থান নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক এবং আমরা মনে করি, নারী জঙ্গি উগ্রবাদীদের ‘তুরুপের তাস’ এমন ধারণা অমূলক নয়। 

সর্বশেষ কুলাউড়ার ঘটনাটি পুনর্বার তাগিদ দিয়েছে জঙ্গিবাদ-সংক্রান্ত ঝুলে থাকা মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে কার্যক্রম বেগবান করা। একই সঙ্গে জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনপ্রক্রিয়ায় বিশেষভাবে নজর রাখতে হবে, যাতে অভিযোগনামায় এমন কোনো দুর্বলতা না থাকে, যাতে জঙ্গিদের জামিন পাওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা না থাকে। জঙ্গিবাদ দমন অভিযান এবং গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত থাকা অবস্থায় কথিত জঙ্গি সংগঠন ইমাম মাহমুদের কাফেলা বা অন্য জঙ্গিগোষ্ঠীগুলো গোপন তৎপরতা কীভাবে ও কিসের জোরে চালাতে পারছে, তা জানার চেষ্টা করাও জরুরি। সমতলে তো বটেই, যেহেতু পাহাড়ের অন্ধকার স্থানগুলোয় জঙ্গিরা আস্তানা গাড়তে শুরু করেছে, সেহেতু পাহাড়কেন্দ্রিক নজরদারি আরও বাড়ানো সমধিক গুরুত্বপূর্ণ। কঠোর দমন-অভিযান, গ্রেপ্তার-বিচার-শাস্তি প্রদান ইত্যাদি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে কিন্তু এর পাশাপাশি সামাজিক প্রতিরোধ আরও শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা