× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

নির্বাচন

ভোটপর্বে ভোটারের অংশগ্রহণ কমছে কেন

মুনীরা খান

প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২৩ ১৪:১৮ পিএম

ভোটপর্বে ভোটারের অংশগ্রহণ কমছে কেন

ভোটাধিকার প্রয়োগও মানবাধিকারÑএ কথা ইতোমধ্যে বহুবার বলেছি। এ কলামেই অতীতে লিখেছি, অংশগ্রহণমূলক ভোট গণতন্ত্রের সৌন্দর্য বাড়ায়। সম্প্রতি ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুটি সংসদীয় আসনের নির্বাচনে ভোটারের অংশগ্রহণের হার সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন দাঁড় করায়Ñ ভোটদানে ভোটারের অনীহার পেছনের কারণগুলো কী? এ দুটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বাদে আরও কয়েকজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। তার পরও দেখা গেছে ভোটারের অংশগ্রহণ মোটেও উল্লেখযোগ্য নয়। চট্টগ্রামে ১১ এবং ঢাকায় এর কিছু বেশি ভোটদানের হারের খবর সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে। নির্বাচনী পরিবেশ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ রাখার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। আনন্দমুখর পরিবেশ নিশ্চিত করার দায় তাদেরই। কেন্দ্রে ভোটারের অনুপস্থিতি যে হারে বাড়ছে, তা গণতন্ত্রের জন্য কোনোভাবেই শুভবার্তা নয়। নির্বাচনে ভোটারের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার দায় নির্বাচন কমিশন এবং অংশীজনদেরও রয়েছে। বর্ণিত দুই আসনেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়েছে। আওয়ামী লীগ দেশের বৃহৎ রাজনৈতিক দল, যে দলের ভিত্তি তৃণমূল পর্যন্ত যথেষ্ট মজবুত। ঢাকা ও চট্টগ্রামে ভোটের হার এ প্রশ্নও দাঁড় করিয়েছেÑ কেন তাদের কর্মী-সমর্থকরা কেন্দ্রে যাননি? বলা যায়, ভোটদানে বিরত রয়েছেন। কেন? তাদের কর্মী-সমর্থকদের ভোটও যদি আশানুরূপভাবে পড়ত, তাহলে ভোটের হার নিশ্চয়ই আরও বেশি হতো। ভোটারের যে কেন্দ্রবিমুখতা, তা শুধু গণতন্ত্রের জন্যই নয়, সুস্থধারার রাজনীতিরও প্রতিবন্ধক বটে।

একবার ভারতের মুম্বাইয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে ভিন্ন ধারণা নিয়ে এসেছিলাম। সেখানে ব্যানারে একটি কথাই বেশি গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হচ্ছিল, ‘গ্রিক শব্দ স্টুপিড মানে সেই ব্যক্তি যিনি ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন না’। ওই ব্যানারগুলো মনে নতুন ভাবনার উদ্রেক ঘটিয়েছিল। আমরা জানি, যে কোনো দেশের মালিক তার জনগণ। জনগণের নাগরিক দায়িত্ব ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের পছন্দের প্রতিনিধি নির্বাচন করা। কাজেই নির্বাচনে ভোটারের অংশগ্রহণ কতটা গুরুত্বপূর্ণ এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নতুন করে নিষ্প্রয়োজন। ভোটাধিকার এক ধরনের মানবাধিকারÑ আমার এ বক্তব্যের প্রতিফলন দেখেছিলাম মুম্বাইয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে। সেখানে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের ভূমিকা প্রত্যক্ষ করে সঙ্গত কারণেই মুগ্ধও হয়েছিলাম। ভোটারকে তার এই গুরুত্বপূর্ণ অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার জন্য তারা যে যুগোপযোগী ও শিক্ষামূলক পদক্ষেপ নিয়েছিল, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলকে জনগণের কাছে যেতে হবে। তাদের স্বার্থ বিবেচনা করে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি নির্বাচনের শোভাবর্ধনের দায় তাদেরও কমবেশি রয়েছে। আমরা জানি, নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিয়ামক শক্তি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন। সরকার নির্বাচনের সময়ে তার সহযোগী শক্তি মাত্র। কিন্তু প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন ও ভোটারের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার মুখ্যত দায় নির্বাচন কমিশনের হলেও সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ কিংবা অংশীজন সবারই ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। এ ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করতে না পারলে আস্থার সংকট দেখা দেবে। এমন সৃষ্ট সংকট নির্বাচন তো বটেই, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার অনুষঙ্গগুলোর সৌন্দর্য ম্লান করতে পারে, এ আশঙ্কাও অমূলক নয়।

সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিতকরণের ক্ষেত্রে নির্বাচন পর্যবেক্ষণও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় স্বীকৃত একটি অধিকার। নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সহায়তায় বিশ্বের অনেক গণতান্ত্রিক দেশই তাদের গণতন্ত্রচর্চার মাঠ উর্বর করেছে, এমন দৃষ্টান্তও আছে। দেশবিদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে আমার অভিজ্ঞতায় এও আছে, ভোটার কেন্দ্রবিমুখ হন নানা কারণে। এর মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা, স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে না পারা কিংবা যোগ্য প্রার্থী না পাওয়াÑএগুলো অন্যতম। ভোটারের অংশগ্রহণ যত বাড়বে নির্বাচন ততই হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনও গণতন্ত্রের সৌন্দর্য বৃদ্ধির অন্যতম অনুষঙ্গ। এ কথাও সত্য, নির্বাচন মানেই হলো পছন্দসই প্রার্থী কিংবা প্রতিনিধি বেছে নেওয়ার উন্মুক্ত সুযোগ। এ সুযোগ যদি কোনো কারণে বিনষ্ট হয় তাহলে শুধু নির্বাচনই প্রশ্নবিদ্ধ হয় না, দায়িত্ব পালনকারী প্রতিষ্ঠান, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির ঔজ্জ্বল্যও ম্লান হয়। কাজেই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অপরিহার্য। নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের বিশ্বের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশ উদারভাবে সহায়তা দেয়। সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, তা তাদের প্রমাণ করতে হবে কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে। অনেক দেশই নির্বাচনে সচরাচর বাইরে থেকে পর্যবেক্ষক আহ্বান করে না। কিন্তু যেকোনো দেশের নির্বাচন পর্যবেক্ষণে পর্যবেক্ষকদের যে অভিমত উঠে আসে, তা ওই দেশের নির্বাচনের জন্য সহায়ক হিসেবে কাজ করে। কারণ এ থেকেই ভুলত্রুটি শুধরে নেওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। ফেমার পক্ষ থেকে মুম্বাইয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে আমি যে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছিলাম তা এখনও ভাবলে বিস্মিত হই। জিম্বাবুয়ে, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইনসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমি নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছি। কোথাও কোনো বাধার সম্মুখীন হইনি। মূলত নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন আয়োজনে স্বচ্ছতা এবং কর্তব্যপরায়ণতার যথাযথ পরীক্ষা হতে পারে কর্মপদ্ধতির প্রশ্নমুক্ত বাস্তবায়নে।

ভালো নির্বাচন করতে হলে জনগণ তথা ভোটারের স্বতঃস্ফূর্ততার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে হবে। এ দায়িত্ব নিতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনকে সারা বছরই কাজ করতে হবে। শুধু নির্বাচনের আগে তাদের সক্রিয় হলে চলবে না। ভোটার এডুকেশন বা ভোটাধিকার সম্পর্কে ভোটদাতাকে সচেতন করার বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া অবশ্যই বাঞ্ছনীয়। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের জনবল সংকট থাকলে ভোটার এডুকেশন সম্পর্কে কাজের অভিজ্ঞতা আছে এমন সংস্থাগুলোকে তারা দায়িত্ব দিতে পারে। গণতান্ত্রিক বিশ্বে এও কোনো বিরল ঘটনা নয়। নির্বাচন কমিশন ভোটারকে ভোটাধিকার প্রয়োগে সচেতন করতে পারলে তা দেশ-জাতি-নির্বাচন সবকিছুর জন্যই মঙ্গলদায়ক হবে। আমরা উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশ যাই। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে মানবাধিকার নিশ্চিত করার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভোটাধিকারের ক্ষেত্রে কেন এমনটি করছি না? আমাদের দেশে ভোটার এডুকেশনের কতটা ঘাটতি রয়েছে সাম্প্রতিক দুটি সংসদীয় উপনির্বাচনে তার ফের সাক্ষ্য মিলেছে। ভোটার যদি তার অধিকার সম্পর্কে সচেতন না হন তাহলে স্বার্থান্বেষী মহল এর সুযোগ নিতে পারে এবং নিয়েছেও; এরকম নজিরেরও অভাব নেই। ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ বা বিধিমালা রাজনৈতিক দল ও জনগণকে যথাযথভাবে জ্ঞাত করার প্রক্রিয়া এবং বাস্তবায়নের দায়ও নির্বাচন কমিশনেরই। কারণ ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে ভোটারের স্বতঃস্ফূর্ততা নিশ্চিত করতে এই ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারে। একজন ভোটার যে দলের প্রার্থীকে ভোট দেবেন সেই দল কিংবা প্রার্থী নির্বাচনী বিধিমালা অনুসরণ করছেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়াও ভোটারের পক্ষে সহজ যদি ‘কোড অব কন্ডাক্ট’ সম্পর্কে তিনি জ্ঞাত থাকেন।

নির্বাচন কমিশন তার প্রাতিষ্ঠানিক দায়িত্ব নির্মোহভাবে পালন করবে এটি খুবই সঙ্গত প্রত্যাশা। একই সঙ্গে সরকার ও নির্বাচনে অংশীজনরাও তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকবেন, এও খুব স্বাভাবিক প্রত্যাশা। সংবাদমাধ্যমের ভূমিকাও এ ক্ষেত্রে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। সংবাদমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া নির্বাচন কমিশনের কর্তব্য এবং সংবাদমাধ্যমও ভোটারের মধ্যে সচেতনতা জাগাতে ভূমিকা রাখতে পারে। নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতা-জবাবদিহির বিষয়টি অবশ্যই অধিক গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু সরকারসহ নির্বাচনে অংশীজন অন্যদেরও এ ক্ষেত্রে ভূমিকা কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। ভালো নির্বাচন ও গণতন্ত্রচর্চার প্রকৃষ্ট উদাহরণ প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকেই যূথবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। আমরা দেখছি, আমাদের দেশে নির্বাচনে সহিংসতা অন্যতম উদ্বেগের বিষয়। সহিংসতার সৃষ্টি কেন হয় এর জন্য নজর দিতে হবে উৎসে। সংঘাত-সহিংসতা ভোটারের ভোটপর্বে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বড় প্রতিবন্ধক। বিপুল ভোটার উপস্থিতি বা ভোট প্রাপ্তি প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই আকাঙ্ক্ষিত বিষয়। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও কখনও কখনও এমন কিছু উৎকট চিত্র আমরা প্রত্যক্ষ করেছি যা গণতন্ত্র, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং নির্বাচনের জন্য মোটেও প্রীতিকর নয়। বিশ্বের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক দেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে এও প্রত্যক্ষ করেছি, কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণে সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সব পক্ষের কতটা প্রাণান্ত প্রচেষ্টা থাকে। যেসব দেশে গণতন্ত্র বহুদিন ধরে বিকশিত রয়েছে, যেখানে রাজনৈতিক দল ও জনসাধারণ গণতন্ত্রের আদর্শে বিশ্বাসী; সেসব দেশের রাজনৈতিক নেতারা নির্বাচনে ভোটারের অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য জোর প্রয়াস চালান এবং তারা এর গুরুত্ব মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেন। জনগণ এবং ভোটারই গণতন্ত্রের মূলশক্তি। 


  • দেশবিদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও প্রেসিডেন্ট, ফেমা
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা