× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

উন্নয়ন প্রকল্পে কি নয়ছয় চলবেই

সম্পাদক

প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৩ ১৪:১৮ পিএম

উন্নয়ন প্রকল্পে কি নয়ছয় চলবেই

উন্নয়ন প্রকল্প নিয়ে নয়ছয়ের যেন পরিসমাপ্তি ঘটছেই না। সরকারি উন্নয়ন প্রকল্প মানেই হয়ে দাঁড়িয়েছে অনিয়ম-দুর্নীতির চারণভূমি। ‘প্রকল্প শেষ হয়নি, দেবে গেছে ২৩ সেতুর সড়ক’ শিরোনামে ৪ আগস্ট প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত শীর্ষ প্রতিবেদনটি ফের এরই সাক্ষ্য দিচ্ছে। গ্রামীণ রাস্তায় সর্বোচ্চ ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতু বা কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্প গতিহীন হয়ে পড়েছে। প্রকল্প শেষ হয়নি, অথচ এরই মধ্যে নির্মিত ২৩টি সেতুর অ্যাপ্রোচ রোড দেবে গেছে; ভাঙন ধরেছে সেতুগুলোর নির্মিত রেলিংয়েÑ এই বার্তা বিস্ময়কর, যুগপৎ প্রশ্নবোধক। এখানেই শেষ নয়। সাড়ে তিন বছরের এই প্রকল্পে সোয়া চার বছরে কাজ হয়েছে মাত্র ৪৯ শতাংশ এবং বর্ধিত মেয়াদে প্রকল্পের সময় আছে আর মাত্র ১৪ মাস। এ সময়ের মধ্যে বাকি কাজ সম্পন্ন হবে কি না, এ নিয়ে দ্বিধান্বিত খোদ পরিকল্পনা কমিশনেরই সংশ্লিষ্টরা। এই প্রকল্প প্রণয়নে আরও ত্রুটি রয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সঙ্গতই প্রশ্ন দাঁড়ায়, সম্ভাব্যতা যাচাই কিংবা বাস্তবায়ন পরিকল্পনা সূচারু না করেই উন্নয়ন প্রকল্পের নামে বিপুল রাষ্ট্রীয় অর্থ অপচয়ের অদূরদর্শী কর্মকাণ্ড কি চলতেই থাকবে?

সেতুর অ্যাপ্রোচ রোড দেবে যাওয়া, রেলিংয়ে ভাঙন ধরা ইত্যাদি নেতিবাচক বিষয়গুলো এও সাক্ষ্য দেয় সংশ্লিষ্ট অসাধু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের যোগসাজশে গড়ে ওঠা চক্র কীভাবে রাষ্ট্রীয় অর্থ লুটপাট করে নিজেদের উদরপূর্তি করছে। এ রকম নজির আছে আরও। অতীতে এমন অনিয়ম-দুর্নীতির প্রেক্ষাপটে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল মহলের তরফে কঠোর প্রতিকারের প্রতিশ্রুতি শোনা গেছে কিন্তু দৃশ্যত কাজের কাজ কতটা কী হয়েছে, এ নিয়েও প্রশ্ন আছে। যদি অনিয়ম-দুর্নীতির দৃষ্টান্তযোগ্য প্রতিকার নিশ্চিত হতো, তাহলে উন্নয়ন প্রকল্প ঘিরে অসাধুদের হীনস্বার্থ চরিতার্থকরণের এমন উৎকট নজির হয়তো পরিলক্ষিত হতো না। ‘বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি’ এই শব্দযুগল আমাদের সামাজ বাস্তবতার নানা প্রেক্ষাপটে ফিরে ফিরে উচ্চারিত হয়। অনেক ক্ষেত্রেই দুষ্কর্মের প্রতিকারহীনতা ক্রমাগত যে ক্ষত সৃষ্টি করে চলেছে, তা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা জানি, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের ‘শূন্য সহিষ্ণুতা’র অঙ্গীকার রয়েছে। এক্ষেত্রে অনমনীয় থাকার বিকল্প নেই।

প্রকল্পের মেয়াদ ফুরায় কিংবা দফায় দফায় বাড়ে, কিন্তু এরপরও প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় নাÑ এমন নজিরও আমাদের সামনে আছে। এর ফলে শুধু জনভোগান্তিই বাড়ে তা নয়, একই সঙ্গে বাড়ে প্রকল্পের ব্যয় এবং অর্থেরও অপচয়। যাচাই-বাছাই কিংবা পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে বিদ্যমান বাস্তবতা আমলে না রেখে প্রকল্প হাতে নেওয়ার দায় কার? অনেক প্রকল্পেই দেখা যায়, সমন্বয়নহীনতা কিংবা সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কারও কারও অদক্ষতা এবং যথাযথ তদারকি কিংবা নজরদারির অভাবের কারণে প্রকল্প ভেস্তে যায় কিংবা দুর্নীতিবাজরা বরাদ্দের সিংহভাগই নিজেদের উদরে ভরেও পার পেয়ে যান। রাষ্ট্রীয় অর্থের লুটপাট একই সঙ্গে জনদুর্ভোগের যারা হোতা, তাদের আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা না গেলে প্রকল্পের ব্যাধির উপশম দুরূহ।

রাষ্ট্রীয় অর্থ অর্থাৎ যে অর্থের মালিক জনগণ এর অপচয় কিংবা তছরুপ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা জানি, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে এলজিইডি দায়িত্ব পালন করে থাকে। কিন্তু দেশের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে প্রয়োজনীয় সেতু কিংবা সেতুর অ্যাপ্রোচ রোড নির্মাণ করতে গিয়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তাতে বলতে হয়, এই সেতু কিংবা কালভার্ট ও অ্যাপ্রোচ রোডগুলো যেন উন্নয়নের ‘সাক্ষীস্তম্ভ’ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। জনগণের করের টাকায় প্রকল্পের ব্যয় নির্বাহ করা হয়। এ নিয়ে তুঘলকি কাণ্ড থামাতেই হবে। সরকারের অসাধু কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের স্বেচ্ছাচারিতায় ক্ষতির চিত্র ক্রমেই যেভাবে স্ফীত হয়ে উঠছে, তা-ও মেনে নেওয়া যায় না। আমরা মনে করি, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এর দায় এড়াতে পারে না। বাঙালির কথা ও কাজে অমিলের বর্ণনা দিতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, ‘আমরা আরম্ভ করি, শেষ করি না; আড়ম্বর করি, কাজ করি না।’ ভবিষ্যদ্রষ্টা কবির এই অমূল্য বক্তব্যের সঙ্গে আমরা যোগ করতে চাই, অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের আরম্ভটাই যেন হয় অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে। এই বক্তব্যের যথাযথ প্রতিফলনই যেন ঘটল গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত অসাধু দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের আমলনামায়। আমরা প্রত্যাশা করি, প্রকল্প নিয়ে যে অরাজকতা চলছে, এর যথাযথ প্রতিবিধান নিশ্চিত এবং জনপ্রশাসনে মন্দ কাজের তিরস্কার বা শাস্তি নিশ্চিত করে উন্নয়ন প্রকল্পের স্বচ্ছতা দৃশ্যমান করা হবে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা