× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

সাদিয়াদের থামানোর অপচেষ্টা রোধ করতেই হবে

সম্পাদক

প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৩ ১৪:২৫ পিএম

সাদিয়াদের থামানোর অপচেষ্টা রোধ করতেই হবে

সেই কবে আমাদের জাতীয় কবি বিদ্রোহী কাজী নজরুল ইসলাম জাগরণের, বিশেষ করে নারীজাগরণের কথা উচ্চারণ করেছিলেন তৎকালীন সমাজ বাস্তবতার প্রেক্ষাপটে। তিনি লিখেছিলেন, ‘জাগো নারী জাগো বহ্নি-শিখা/জাগো স্বাহা সীমন্তে রক্ত-টিকা.../মেঘে আনো বালা বজ্রের জ্বালা/চির-বিজয়িনী জাগো জয়ন্তিকা।’ সেই প্রেক্ষাপট পেছনে ফেলে আজকের সমাজ বাস্তবতা অনেক বিকশিত হলেও অন্ধকার যে এখনও সর্বাংশে কাটেনি, এ সত্য অনস্বীকার্য। এরই সাক্ষ্য দিচ্ছে ২৯ জুলাই খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলায় ফুটবল খেলা কেন্দ্র করে কয়েকজন নারী খেলোয়াড়ের ওপর হামলার ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি। বটিয়াঘাটার তেঁতুলতলা এলাকার একটি মাঠে মেয়েদের ফুটবল খেলা কেন্দ্র করে এ ঘটনার সূত্রপাত। তেঁতুলতলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে বেশ কয়েক বছর ধরে ‘সুপার কুইন ফুটবল একাডেমি’ নামে মেয়েদের একটি ফুটবল ক্লাব পরিচালনা করছেন ওই স্কুলের শিক্ষক এবং স্থানীয় কয়েকজন ক্রীড়া সংগঠক। বরাবরের মতো ক্লাবে প্র্যাকটিস করতে গিয়ে হামলার শিকার হন বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা অনূর্ধ্ব-১৭ চ্যাম্পিয়ন দলের নারী ফুটবলার সাদিয়া নাসরিন, মঙ্গলী বাগচী, হাজেরা খাতুন ও জুঁই মণ্ডল। আক্রান্তদের পক্ষে সাদিয়া মামলা দায়ের করার পর, যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তারা ফোন করে হুমকি দিচ্ছেন মামলা তুলে নিতে। এ বার্তা মিলেছে ৩ আগস্ট প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে। এও জানা গেছে, তাদের ওপর এসিড নিক্ষেপের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। সচেতন যে-কোনো কারোরই অজানা নয়, একজন খেলোয়াড় তার খেলার উপযোগী পোশাক পরেই প্র্যাকটিস করবেন কিংবা খেলবেন। তার পোশাককে কেন্দ্র করে যে-কারও হীনমন্যতা প্রকাশ নিঃসন্দেহে ঘৃণ্য।

বৈষম্যের ছায়া সরিয়ে লিঙ্গ সমতার মানবিক আন্দোলনের আলো যখন সমাজে ভিন্নমাত্রা যোগ করেছে, তখন এ ধরনের ঘটনা নারীসমাজকে পেছনে টেনে নেওয়ার কিংবা অবরুদ্ধ করে রাখার অপপ্রয়াসের নিন্দা জানাই। সমাজের নানা ক্ষেত্রে নারীর সাফল্য জাতীয় উন্নয়ন-অগ্রগতির স্মারক। আমরা জানি, বাংলাদেশের নারীরা ফুটবলে মাঠ কাঁপাচ্ছেন, ক্রিকেটে ব্যাট-বল হাতে দ্যুতি ছড়াচ্ছেন, ভারোত্তোলনসহ নানা ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আসর থেকে মুকুট অর্জন করে জাতিকে গৌরবান্বিত করছেন। আজ থেকে প্রায় দুই দশক আগেও এমনটি আমাদের সমাজে অকল্পনীয় ছিল। সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশের নারীদের সাফল্য দেশের ভাবমূর্তি কতটা উজ্জ্বল করেছে, এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নতুন করে নিষ্প্রয়োজন। নারী শুধু এখন সেই প্রচলিত ধারণার বিষয়বস্তু নয়, নারী এখন অগ্রগতি-সাফল্যের ভিত রচনাকারীও। ফুটবল কিংবা ক্রিকেট খেলা মেয়েদের মানায় নাÑএ সংকীর্ণ ধারণা থেকে দেশবাসীর মানসিকতা তারা তাদের কৃতিত্বের আলোয় মুছে দিয়েছেন। যাদের সাফল্যের হাত ধরে অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো ক্রীড়াঙ্গনেও নারীজাগরণের সম্ভাবনা ব্যাপৃত এবং অনুপ্রেরণার ক্ষেত্র প্রসারিত করেছে, সেই নারী খেলোয়াড়রা আমাদের বহুরৈখিক সংগ্রাম-ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবেন। এ অগ্রযাত্রার পথে যে বা যারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবেন, তারা দেশ-জাতির মিত্র নন। কারণ সমগ্র বিশ্ব এখন ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ কিংবা সরলভাবে বলা যায়, ‘ভুবন গ্রাম’-এর ধারণা নিয়ে এগিয়ে চলেছে। আমরা এ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকতে পারি না। আমরা জানি, এটুকু পথ আমাদের নারীদের পাড়ি দিয়ে আসতে নানানরকম সামাজিক তাচ্ছিল্যের শিকার হওয়ার পাশাপাশি প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতার দেয়ালও ডিঙাতে হয়েছে। সব বাধা ডিঙিয়ে সাফল্যের মুকুট ছিনিয়ে আনার নজির তারা স্থাপন করেছেন। কলসিন্ধুর নারী ক্রীড়াযোদ্ধারা জয়ের মুকুট ছিনিয়ে এনে অগ্রযাত্রার যে সড়ক চওড়া করেছেন, তা মহলবিশেষের অপতৎপরতায় কিংবা কূপমণ্ডূকদের কারণে কণ্টকাকীর্ণ হতে পারে না। দেশে তো বটেই, আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনেও আমাদের নারী খেলোয়াড়দের এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন এখন আর কোনোভাবেই দিবাস্বপ্ন নয়।

আমরা অবশ্যই প্রত্যাশা করি, ক্রীড়াঙ্গনে নারীর সাফল্যের তালিকা ক্রম দীর্ঘ হবে এবং তাদের ছিনিয়ে আনা মুকুট দেশ-জাতির ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করবে। আশার কথা, সরকারের দিক থেকে নারী খেলোয়াড়দের সুযোগসুবিধা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে অনেক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ধারা আরও এগিয়ে নেওয়া জরুরি। নারীর মধ্যে যে ‘বহ্নিশিখা’ রয়েছে তা আরও ব্যাপকভাবে প্রমাণ করা আমাদের আকাঙ্ক্ষা। সংশয় নেই, সময় সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণের ডাক দিয়েছে এবং সময়ের এই ডাকে এগিয়ে যেতে হবে। খুলনার বটিয়াঘাটায় যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে এর দৃষ্টান্তযোগ্য প্রতিকার নিশ্চিত করতেই হবে। অদম্য সাদিয়াদের অগ্রগতির পথে বিদ্যমান বাধা অপসারণ করার পাশাপাশি তাদের নিরাপত্তাসহ সব ধরনের পৃষ্ঠপোষকতা আরও বাড়াতে হবে। অন্ধকার যাতে না ছড়ায় এজন্য প্রশাসনকেও সতর্ক নজর রাখতে হবে। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা