× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

কৃষককে এনজিওর ফাঁদমুক্ত করুন

সম্পাদক

প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৩ ১৪:১৯ পিএম

কৃষককে এনজিওর ফাঁদমুক্ত করুন

কৃষিনির্ভর অর্থনীতির এই দেশে কৃষক কৃষি খাতের মেরুদণ্ডÑ এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, কৃষকের বঞ্চনা যেন অন্তহীন। দেশের কৃষি উৎপাদনব্যবস্থায় যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে, এর পেছনে কৃষিবিজ্ঞানীদের পাশাপাশি অগ্রগণ্য ভূমিকা রয়েছে কৃষকের। কিন্তু কৃষক তার উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য যেমন পায় না, তেমনি তাদের সামনে উৎপাদনের পথও মসৃণ নয়। ‘এনজিওর জালে বন্দি কৃষক’ শিরোনামে ২ আগস্ট প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনটি এ থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুড়িগ্রাম জেলার কৃষকরা একটি এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নিয়ে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। মাত্রাতিরিক্ত সুদে ঋণ পরিশোধ করেও মামলার হুমকি এবং ঋণ গ্রহণকালে জমা দেওয়া জমির দলিল, ব্লাঙ্ক চেক ও স্ট্যাম্প না পেয়ে আই ফার্মার লিমিটেড নামে একটি এনজিওর চরম হেনস্থার শিকার হচ্ছেন। এ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা হয়রানির হাত থেকে বাঁচতে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসকসহ এনজিওব্যুরো বরাবর অভিযোগ দায়ের করেও পরিত্রাণ পাচ্ছেন না। কুড়িগ্রামে ওই এনজিওর কৌশলী ফাঁদে কৃষক নিতান্ত অসহায় হয়েই পা দিয়েছেন। আমরা জানি, ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে কিংবা ন্যায্য সুদে কৃষক ঋণ পাওয়ার কথা থাকলেও দেশের অনেক অঞ্চলের কৃষকই তা থেকে বঞ্চিত।

শুধু কুড়িগ্রামেই নয়, এরকম নজির দেশের আরও অনেক এলাকায়ই রয়েছে। অসাধু ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং স্থানীয় দালালদের অপকৌশলের কারণে কৃষক ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে গিয়ে নানানরকম বিড়ম্বনার শিকার হন, এও সংবাদমাধ্যমের পুরোনো খবর। অসহায় কৃষক বাধ্য হয়ে হাত বাড়ান এনজিওর দিকে। এনজিওগুলো কৃষকের অসহায়ত্ব পুঁজি করে ফায়দা লুটে নেয় এবং কুড়িগ্রামে তা-ই দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। আমরা জানি, দেশের সর্বোচ্চ দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে কুড়িগ্রাম। ধরলা ও তিস্তা নদীর ভাঙনের অভিঘাত ওই অঞ্চলের কৃষকের জীবনযাত্রা হুমকির মুখে ফেলেছে। ইতোমধ্যে অনেক কৃষক ভিটেমাটি-ছাড়া হয়ে গেছেন। এ দুরবস্থার মধ্যে আই ফার্মার লিমিটেড নামে এনজিওর কৌশলী ফাঁদে কুড়িগ্রাম জেলার চরাঞ্চলের প্রান্তিক কৃষক, খামারি ও উদ্যোক্তারা এখন তাদের শেষ সম্বলটুকুও খোয়ানোর পথে। ওই অঞ্চলে গবাদি পশুর প্রাণঘাতী রোগ লাম্পি স্ক্রিন-আক্রান্ত হয়ে ইতোমধ্যে অনেক গরু মারা যাওয়ায় কৃষক আরও বিপাকে পড়েছেন। কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক প্রতিদিনের বাংলাদেশকে জানিয়েছেন, আই ফার্মার লিমিটেডের বিরুদ্ধে তিনি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন এবং একটি তদন্ত কমিটিও গঠন করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশনকেও বিষয়টি দেখার জন্য বলা হয়েছে। ওই এনজিওটি ঋণ দিয়ে কৃষককে বর্গা চাষে প্রলুব্ধ করে কথা তো রাখেইনি, উল্টো ২০ শতাংশ হারে ঋণের সুদ আদায় করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ২০ শতাংশ হারে ঋণের সুদ আদায় কতটা অস্বাভাবিক এবং অচিন্তনীয় ব্যাপার, এর ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নিষ্প্রয়োজন।

আমরা মনে করি, কুড়িগ্রামের ভুক্তভোগী কৃষকের অভিযোগ আমলে নিয়ে যেসব এনজিও লোভনীয় আশ্বাস দিয়ে ঋণের ফাঁদ পেতে মাত্রাতিরিক্ত সুদ আদায় করছে এবং ঋণ পরিশোধের পরও জমাকৃত কাগজপত্র আটকে রাখছে, এর সত্যাসত্য নির্ণয়ক্রমে কঠোর প্রতিকার নিশ্চিত করা জরুরি। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, এনজিও ব্যুরোসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপও সমভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। দেশের ব্যাংক ব্যবস্থার জটিলতা ও অসাধুদের দৌরাত্ম্যের কারণে কৃষক সরকারের কল্যাণকামী কর্মসূচির সুফল ভোগ করতে না পারার দায় সংশ্লিষ্ট কোনো পক্ষই এড়াতে পারে না। আমরা জানি, এরই মধ্যে রয়েছে মহাজনি ঋণের ফাঁদও। এ সবকিছুই কৃষক তথা দরিদ্রদের জন্য মরার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এনজিওগুলোর কৌশলী ঋণ দান ও আদায়ের জাল গোটাতে অবশ্যই কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে কালক্ষেপণ না করে। ব্যাংক থেকে ন্যায্য সুদে কৃষকের ঋণ প্রাপ্তির পথ মসৃণ করতে হবে। শত শত কোটি টাকা ঋণ নিয়ে ক্ষমতার জোরে ‘ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি’রা আরামে-আয়েশে জীবনযাপন করবেন আর এর বিপরীতে দেশের অর্থনীতির অন্যতম শক্তি কৃষক বিড়ম্বনা পোহাবেন তা হতে পারে না। কৃষক ঋণ নিয়ে ঋণখেলাপির তালিকায় নাম লিখিয়েছেন, এ নজির বলতে গেলে প্রায় বিরল। কোনো কারণে ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহীতা বিপর্যস্ত হয়ে সময়মতো ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে তাকে পুলিশের হাতে আটক হতে হয়েছে এমন দৃষ্টান্তও কম নেই। অধিকারের ক্ষেত্রে বিদ্যমান এ বৈষম্যের নিরসন ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের স্বার্থেই জরুরি। খাদ্যশস্য উৎপাদনে দেশের আজকের যে অবস্থা এর কৃতিত্ব যাদের তারা বিড়ম্বিত জীবনযাপন করবেন, তা হতে পারে না।

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা