সম্পাদকীয়
সম্পাদক
প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২৩ ১৩:৩৩ পিএম
দেশের প্রাণিসম্পদ
খাত অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন বিকশিত। প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়নের ছোঁয়া দেশের
অর্থনীতিতেও লেগেছে। আমরা দেখছি, নতুন নতুন উদ্যোক্তা এ খাতের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছেন।
আত্মকর্মসংস্থানমূলক কর্মকাণ্ডের পরিসর ক্রমেই বাড়ছে। বড় বিনিয়োগকারীরা তো বটেই, ক্ষুদ্র
বিনিয়োগকারীরাও জীবিকার অবলম্বন হিসেবে এ ক্ষেত্রে তাদের বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন। কিন্তু
উদ্বেগজনক হলো, খাতটি যখন ক্রমেই সম্প্রসারিত হচ্ছিল তখন গবাদি পশু লাম্পি স্কিন নামের
জটিল চর্মরোগে আক্রান্ত হয়ে কৃষক ও খামারিদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। ২৯ জুলাই
প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা যায়, উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে
ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে গবাদি পশুর লাম্পি স্কিন রোগ। এর আগে দেশের আরও কয়েকটি জেলায়
এই রোগে গবাদিপশু আক্রান্ত হওয়ার খবর সংবাদমাধ্যমেই জানা গিয়েছিল। গত কোরবানির ঈদে
এ রোগে গবাদিপশু আক্রান্ত হওয়ার কারণে অনেক খামারিই গবাদিপশু বিক্রি করতে না পারার
খবরও প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর ওই প্রতিবেদনেই মিলেছে।
প্রাণিসম্পদ বিভাগ
থেকে বলা হয়েছে, কৃষক ও খামারিদের অনেকেরই অসচেতনতার কারণে যথাসময়ে চিকিৎসার আওতায়
আক্রান্ত পশুকে না আনায় পরিস্থিতি জটিল হচ্ছে। লাম্পি স্কিন রোগ এক ধরনের সংক্রামক
ব্যাধি। এই ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে ইতোমধ্যে কয়েকশ গরুর প্রাণহানি ঘটেছে।
আমরা জানি, শুধু দেশেই নয়, বিদেশ থেকেও উচ্চশিক্ষা নিয়ে তরুণদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ
গবাদিপশুর খামার গড়ে আত্মকর্মসংস্থানে বিশেষ মনোযোগ দিয়েছেন। এমতাবস্থায় দেশে গরু-মহিষের
মধ্যে এই রোগটি যাতে মহামারি আকারে ছড়িয়ে না পড়ে, এ জন্য সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি
প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে প্রাণিসম্পদ বিভাগকেই। আমরা জানি, প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধই
উত্তম। লাম্পি স্কিন রোগ প্রতিরোধে প্রাণিসম্পদ বিভাগ ভেটেরিনারি হাসপাতালগুলোর মাধ্যমে
ভ্যাকসিন দিয়ে থাকে। এর আগে এই ভ্যাকসিন প্রয়োগের সাফল্য দৃশ্যমানও হয়েছে। তাই যেসব
এলাকায় লাম্পি স্কিন রোগ ছড়িয়ে পড়েছে, সেসব এলাকার পাশাপাশি সারা দেশে ভ্যাকসিন প্রদান
কার্যক্রম জোরদার করা জরুরি বলে আমরা মনে করি।
দেশে যখন বেকারের
তালিকা ক্রম দীর্ঘ হচ্ছে তখন আত্মকর্মসংস্থানমূলক কর্মকাণ্ডের প্রসার নিশ্চয় জরুরি।
আমরা অতীতে দেখেছি, কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর যারা কর্মহীন তারা পোলট্রি-মৎস্য হ্যাচারিসহ
উপার্জনের নানাপথ নিজেরাই খুঁজে নিয়েছেন। স্বাবলম্বী হয়ে জীবনের গতিপথ পাল্টে দিয়েছেন,
এমন তরুণ-যুবকের সংখ্যাও কম নয়। কিন্তু পোলট্রি-মৎস্য হ্যাচারিশিল্পে এর আগে নানা কারণে
অভিঘাত লাগায় এর বিরূপ প্রভাব বহুমুখী হয়ে উঠেছিল। গবাদিপশুর লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত
হওয়ার যে বার্তা মিলছে, তা প্রতিরোধে যদি যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া না যায়, তাহলে ক্ষতির
চিত্র যে ক্রমেই স্ফীত হয়ে উঠবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। লাম্পি স্কিন নামক সংক্রামক
ব্যাধি দেশে নতুন কিছু নয়। এর আগেও লাম্পি স্কিনে গবাদিপশু আক্রান্ত হওয়ার নজির আছে।
কিন্তু যথাসময়ে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা জোরদার করায় ক্ষতির ছায়া প্রলম্বিত হতে পারেনি।
এর বিস্তার ঠেকাতে
যূথবদ্ধ প্রয়াস জরুরি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শক্রমে। কৃষক ও খামারিদের আতঙ্ক দূর করতে তাদের
পাশে দাঁড়াতে হবে। অনতিবিলম্বে প্রাণিসম্পদ বিভাগসহ স্থানীয় ভেটেরিনারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের
কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। গত বছরের সেপ্টেম্বরে কমপক্ষে দেশের ৫০টি জেলায় এ রোগের
ব্যাপক বিস্তার ঘটেছিল, এই তথ্য জানা যায় বাংলাদেশ ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সূত্রে।
দেশে দুধের চাহিদা মেটাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে গরুর খামারগুলো। ভাইরাসজনিত এ রোগটি
মশা-মাছি এবং খাবারের মাধ্যমে এক গবাদি পশু থেকে আরেক গবাদি পশুতে ছড়াচ্ছে অনেক কৃষক
ও খামারির অসচেতনতার কারণে। পশুর শরীরজুড়ে ছোট ছোট মাংসপিণ্ডের মতো ফুলে ওঠা কিংবা
ফোসকা পড়া এই রোগের মূল লক্ষণ, তা অনেক কৃষক ও খামারি জানলেও আধুনিক চিকিৎসাপদ্ধতি
এড়িয়ে তারা গ্রামের হাতুড়ে পশুচিকিৎসক কিংবা কবিরাজের দারস্থ হচ্ছেনÑ এমন অভিযোগ উঠেছে
খোদ প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও স্থানীয় ভেটেরিনারি হাসপাতালগুলোর কর্তৃপক্ষের। আমরা মনে করি,
এই অভিযোগ দাঁড় করিয়ে তারা তাদের দায় এড়াতে পারেন না। যেসব এলাকা এই রোগের হটস্পট
সেসব এলাকায় বিশেষ কর্মসূচি নিয়ে কৃষক ও খামারিদের দিকে প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতা নিশ্চিত
করতে হবে। আমরা এও মনে করি, এলাকাভিত্তিক ক্যাম্প করেও ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম জোরদার
করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে
প্রয়োজনীয় ওষুধ ও ভ্যাকসিন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।