প্রেক্ষাপট
আব্দুল হাই বাবু
প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৩ ১৩:২০ পিএম
বাংলাদেশের একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল প্রথমবারের মতো সংবাদ পাঠে এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে। ১৯ জুলাই সন্ধ্যায় 'অপরাজিতা' নামের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা খবর পাঠ করে। গাঢ় নীল শার্ট ও কোট পরা অপরাজিতার সংবাদ পাঠ দেখে বোঝার উপায় ছির না, যে সে কোনো মানবী নয়। 'অপরাজিতা'র মাধ্যমে বাংলাদেশও প্রবেশ করেছে এআইয়ের সীমান্তে। ভারতের ওড়িশার টিভি চ্যানেল ওটিভি প্রথমবারের মতো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দ্বারা পরিচালিত সংবাদ উপস্থাপিকা ‘লিসা'কে অন- এয়ারে আনে, যা ভারতের ওই রাজ্যে প্রথম। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সংবাদ উপস্থাপন মানুষের উপস্থাপনার মতো ততটা সাবলীল নয়। ইতোমধ্যে মানুষের আদলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তৈরি করে তাকে দিয়ে সংবাদ পাঠ করানোর নৈতিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। এ বিষয়ে সুষ্ঠু নীতিমালা তৈরির দাবিও এসেছে সাংবাদিকতা গবেষণার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মহল থেকে। তবে এসব বিতর্ক সত্ত্বেও এ খাতে বিনিয়োগ কমার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। সিলিকন ভ্যালির অনেকেই ইতোমধ্যে এই খাতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছেন। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগও তৈরি হচ্ছে। কন্টেন্ট রাইটিং, মার্কেটিং, গবেষণাসহ নানা ক্ষেত্রেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে নতুন কাজের ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে। যদিও আমরা অনেকেই সচেতন নই এ ব্যাপারে। তবে এ কথা সত্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রচলিত অনেক ফ্রিল্যান্সিং যেমন ডাটা এন্ট্রি, ই-মেইল লিখন, কমেন্ট লিখনের মতো ফ্রিল্যান্সিং কাজ যারা করতেন, তাদের কর্মসংস্থান নষ্ট করেছে।
চলতি বছরে বিনিয়োগকারী ব্যাংক গোল্ডম্যান স্যাকসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভবিষ্যতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তিটি ৩০ কোটি চাকরি প্রতিস্থাপন করতে পারে। তবে শুধু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কারণেই বেকারত্ব বাড়ছে, এমনটিই নয়। নতুন এ প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মেলাতে না পারাটাও এজন্য অনেকটা দায়ী। তাই আগামী দিনগুলোতে আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ হবে, নতুন প্রযুক্তি উপযোগী পরিবেশ ও প্রস্তুতি তৈরি করে এর সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেওয়া। পাশাপাশি এর পরিচালনা, নিয়ন্ত্রণ, দক্ষতা ও ক্ষমতা নিয়ে সচেতন থাকা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়েই হয়তো ভবিষ্যতে কল সেন্টার, পোশাক কারখানা, গাড়ি চালানো, বাসাবাড়ির কাজগুলো নিয়ন্ত্রিত হবে। ফলে এসব কাজে নিয়োজিত মধ্যম ও স্বল্পোন্নত দেশগুলোর লাখ লাখ কর্মী কর্মহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হবে। কাজেই ভবিষ্যতে হয়তো ক্লিনার কিংবা কলকারখানায় শ্রমিক লাগবে না; কিন্তু ক্লিনিং ও শিল্পের যন্ত্র তৈরি, উন্নয়নে ও অপারেশনে দক্ষ জনশক্তি লাগবে। উন্নত দেশে ট্রাফিক সিগন্যাল নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে এআই দিয়ে। আবহাওয়া কেমন থাকবে, বৃষ্টি, গরম নাকি ঠান্ডা- এমন এক সপ্তাহের আগাম বার্তা সার্বক্ষণিক প্রচার করা হয়। গণপরিবহনে সংযুক্ত টিভি মনিটরে। এভাবে আগামী দশকের মধ্যেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এমন অপরিহার্য অংশ হিসেবে আবির্ভূত হবে যে এআইয়ের ব্যবহার ছাড়া আমরা এক দিনও হয়তো চলতে পারব না। স্বাস্থ্যসেবা, জটিল অস্ত্রোপচার কিংবা বৈজ্ঞানিক গবেষণার তথ্য বিশ্লেষণ করে জটিল সিদ্ধান্ত দেওয়া, শিল্পদ্রব্যের ডিজাইন ও উৎপাদন, গ্রাহকসেবা, ব্যাংকিং ইত্যাদি ক্ষেত্রে এই নতুন প্রযুক্তি হয়ে উঠবে সুস্পষ্ট ও সর্বব্যাপী। তাই ভবিষ্যতে বেকারত্বের লাগাম টানতে এসব কাজ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে সৃজনশীল, নান্দনিক এবং জাতীয় সুরক্ষার উপযোগী করার লক্ষ্যে কী ধরনের প্রশিক্ষণ, শিক্ষা, প্রস্তুতি ও অবকাঠামো দরকার, তা নিরূপণ করার এখনই সময়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আর যাই হোক তা মানুষের নির্দেশনার ভিত্তিতেই কাজ করে। তাই অনেক খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার অপরিহার্য হলেও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে নতুন কর্মসংস্থানও গড়ার সুযোগ রয়েছে।
. তথ্য ও গণসংযোগ বিভাগ বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়