× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ

শস্যচুক্তি ভেস্তে যাওয়ায় বাড়ছে খাদ্যসংকটের আশংকা

আন্না নাগুর্নি

প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৩ ১৩:২০ পিএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

সারা বিশ্বে খাদ্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখার জন্য রাশিয়া-ইউক্রেন শস্যচুক্তির ভূমিকা ছিল অপরিসীম। ১৭ জুলাই রাশিয়া দীর্ঘমেয়াদি এই চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পরিস্থিতি এখানেই খারাপ হয়েছে তা নয়। চুক্তি স্থগিত করার পরের দুই দিনে তারা রাশিয়ার ওডেসা শস্যবন্দরে বোমা হামলা চালিয়ে প্রায় ৬০ হাজার টন খাদ্যশস্য জ্বালিয়ে দিয়েছে। ফলে খাদ্যশস্যের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে গম, ভুট্টা ও সয়াবিনের দাম ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। ইউরোপের গুদাম বলে পরিচিত ইউক্রেন ওই অঞ্চলে গম, বার্লি, সূর্যমুখী থেকে উৎপাদিত পণ্য এবং ভুট্টার প্রধান সরবরাহকারী দেশ। শুধু ইউরোপই মধ্যপ্রাচ্যের উন্নয়নশীল অনেক দেশ, উত্তর আফ্রিকা এমনকি চীনেও তারা খাদ্যশস্য সরবরাহ করে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার ওপর আক্রমণের আগে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন মানুষ খাদ্যের জন্য ইউক্রেনের ওপর নির্ভরশীল ছিল। মনে রাখতে হবে, পৃথিবীর এক-তৃতীয়াংশ উর্বর জমি ইউক্রেনে, যাকে সচরাচর ‘ব্ল্যাক সয়েল’ বলে অভিহিত করা হয়। রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার আগে ইউক্রেন কৃষ্ণসাগরের বরফমুক্ত বন্দরের সহায়তায় মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকায়ও খাদ্যশস্য সরবরাহ করতে শুরু করে।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগেও খাদ্যসংকট সারা বিশ্বে একটি বড় সমস্যা ছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত জলবায়ু পরিবর্তনগত কারণে খাদ্যসংকট প্রকট আকার ধারণ করে। প্রায় ১২২ মিলিয়ন মানুষ অনাহারে মৃত্যুবরণ করে। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত প্রায় ২৫ মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য ইউক্রেনেই আটকা পড়ে। এই খাদ্যশস্য বিশ্ববাজারে সরবরাহ করার কথা ছিল। রাশিয়ার নেভাল ব্লকেডের কারণে তা সম্ভব হয়নি এবং ওই সময় বিশ্ববাজারে খাদ্যশস্যের দাম হুট করে বেড়ে যায়। ২০২২ সালের জুলাইয়ে জাতিসংঘ ও তুরস্কের বদৌলতে কৃষ্ণসাগর শস্যচুক্তি বাস্তবায়িত হয়। এই চুক্তির ফলে কৃষ্ণসাগরের তিনটি বন্দর থেকে কৃষিপণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত হয়। যদিও মূল চুক্তি মাত্র ১২০ দিনের জন্য করা হলেও এই চুক্তির সময় বাড়ানো হতে থাকে প্রতিবার। চুক্তির পর থেকে ইউক্রেন প্রায় ৩২ মিলিয়ন টন খাদ্যশস্য রপ্তানি করেছে। ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম তাদের চাহিদার ৮০ শতাংশ গম ইউক্রেন থেকে কিনে নেয়। এই প্রোগ্রামের আওতায় ইথিওপিয়া, ইয়েমেন, আফগানিস্তান ও তুরস্ক গমের সরবরাহ পায়। জাতিসংঘের মতে, এই চুক্তি ২০২২ সালের মার্চ থেকে বিশ্ববাজারে খাদ্যশস্যের দাম অন্তত ২৩ শতাংশ কমিয়েছে।

চলতি বছরের জুলাই থেকেই খাদ্যশস্য সরবরাহ কমতে শুরু করে। গত বছরের অক্টোবরে খাদ্যশস্য সরবরাহ ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন মেট্রিক টন হলেও চলতি বছরের জুনে তা ২ মিলিয়ন মেট্রিক টনে নেমে এসেছে। কৃষ্ণসাগর থেকে বের হওয়ার আগে রাশিয়া জাহাজগুলোতে তল্লাশি চালানোয় সরবরাহ গতি কমেছে। তা ছাড়া খাদ্য উৎপাদনও কমেছে। চলতি বছর ইউক্রেনে খাদ্যশস্য অন্তত ৩১ শতাংশ কম হওয়ার কথা।

গবেষণায় দেখা গেছে, ইউক্রেন থেকে শস্য বিশ্ববাজারে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে কৃষ্ণসাগরের বন্দরগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যুদ্ধের আগেও ইউক্রেনে উৎপাদিত ৯০ শতাংশ খাদ্যশস্য কৃষ্ণসাগরের মাধ্যমে অন্যান্য জায়গায় সরবরাহ করা হতো। তাদের রপ্তানি টিকিয়ে রাখার স্বার্থেই এই বন্দরগুলো জরুরি ছিল। হ্যাঁ, ইউক্রেন স্থলপথে তাদের খাদ্যশস্য ইউরোপে সরবরাহ করতে পারে। কিন্তু প্রক্রিয়াটি ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। তাই কৃষ্ণসাগরের মাধ্যমে খাদ্যশস্য পাঠাতে পারলেই লাভের পাল্লা ভারী হবে বেশি। স্থলপথে সরবরাহ ব্যয় অনেক বাড়তে শুরু করেছে। যুদ্ধাবস্থা একটি বড় কারণ অবশ্যই। তা ছাড়া কৃষিব্যবস্থার ধস এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা ইউক্রেনের পীঠ অনেকটাই ঠেকিয়ে রেখেছে।

প্রশ্ন হচ্ছে, রাশিয়া এই চুক্তি থেকে নিজেদের কেন সরিয়ে আনল? আগেও রাশিয়া একাধিকবার নিজেদের এই চুক্তি থেকে সরিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই তারা এই চুক্তিতে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০২৩ সালের ১৭ জুলাই তারা বলেছে, তাদের চুক্তির বিষয়গুলো মেনে নিলেই তারা খাদ্যশস্য এবং সার সরবরাহ করবে। পরবর্তী দুই দিনে ওডেসা বন্দরে হামলা পরিচালনা করেছে এবং ইউক্রেনের বন্দরগুলোর ওপর তীক্ষ্ণ নজর রেখে চলেছে রাশিয়া। তাদের সন্দেহ এই বন্দর ব্যবহার করে আরও তীব্র সামরিক আগ্রাসন পরিচালিত হতে পারে। তাদের এই অবস্থান বিশ্ববাজারে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। গম ও ভুট্টার মতো খাদ্যশস্যের দাম বেড়েছে। এমনকি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অনাহার ও খাদ্যসংকটের সম্ভাবনা বাড়িয়ে তুলেছে।

অতীতে রাশিয়া একাধিকবার নিজেদের এই চুক্তি থেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু এবার পরিস্থিতি একটু ভিন্ন। রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন ওডেসা বন্দরে ব্যাপক ক্ষতি করেছে। এই আক্রমণের মাধ্যমে ওডেসা বন্দর থেকে খাদ্যশস্য সরবরাহের পথ অনেকটাই সংকুচিত করে ফেলা হয়েছে। ভবিষ্যতে কোনো চালানের সম্ভাবনাও হয়তো চিরতরে বন্ধ হয়ে গেছে। সম্ভবত রাশিয়ার শীর্ষ নেতা খাদ্যকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছেন। সারা বিশ্বেই খাদ্যসংকট একটি বড় সমস্যা হিসেবে জিইয়ে আছে। এই সময়ে খাদ্য সরবরাহের পথ বন্ধ করে দেওয়াও একটি বড় কৌশল হতে পারে। তবে বিশ্বের শান্তিপ্রিয় সবার প্রত্যাশা, এই যুদ্ধের সময়েও অন্তত নেতৃস্থানীয়রা বিশ্বের মঙ্গলের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেবেন। অন্তত ইউক্রেন থেকে গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহগুলো তারা চালু রাখবেন।


  • অধ্যাপক, ইনটিগ্রেটিভ স্টাডিজ, কিয়েভ স্কুল অব ইকোনমিক্স 

দ্য কনভারসেশন থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা