দিবস
চাঁদ নিয়ে গল্প কবিতা উপন্যাস কম হয়নি মানব ইতিহাসে। তুমি চাঁদের চেয়েও সুন্দর- এমন উক্তি এই মহাবিশ্বে অসংখ্যবার উচ্চারিত হয়েছে পুরুষের মুখ থেকে তার প্রেয়সীর জন্য। আজ ২০ জুলাই। ১৯৬৯ সালের এই দিনে সেই অধরা অলীক রহস্যময় মনে হওয়া উপগ্রহটিতে প্রথম পা রাখল পৃথিবীর মানুষ।
আজ থেকে ৫৪ বছর আগে চাঁদের বুকে নেমে পৃথিবীর মানুষকে অবাক করে দিয়েছিলেন অ্যাপোলো- ১১ চন্দ্রযানে যাওয়া এই অভিযাত্রীরা। মানবজাতির ইতিহাসে এটি এক অবিস্মরণীয় ঘটনা। ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে উৎক্ষেপণ হয়েছিল। অ্যাপোলো ১১। তিনজন মার্কিন মহাকাশচারী সেদিন চাঁদের উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। নিল আর্মস্ট্রং, এডউইন (বাজ) অলড্রিন এবং পাইলট মাইকেল কলিন্স। চাঁদের মাটিতে প্রথম মানুষ হিসেবে পা রাখেন নিল আর্মস্ট্রং। তারপরে নামেন এডউইন অলড্রিন। কলিন্স মহাকাশযানেই ছিলেন। চাঁদে নামেননি। কারণ তিনি চাঁদের কক্ষপথে কমান্ড মডিউলের দায়িত্বে ছিলেন। পৃথিবী থেকে প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার মাইল দূরে অবস্থিত চাঁদের বুকে নিম্ন আসমা ও প্রহাজার মানুষের জন্য এটি ছোট একটি পদক্ষেপ, কিন্তু মানবজাতির জন্য এক বিরাট ঘটনা। চাঁদ জয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের হিরো হিসেবে মর্যাদা পান আর্মস্ট্রং। কিন্তু তিনি নিজেকে কখনও আমেরিকান হিরো ভাবতে পছন্দ করতেন না। তার কাছে চন্দ্রজয় ছিল গোটা মানবজাতির অর্জন। নভোযান অ্যাপোলো ইলেভেনের দলনেতা আর্মস্ট্রং যখন চাঁদের বুকে পা রাখেন তখন পৃথিবীজুড়ে ৫০ কোটি মানুষ টেলিভিশনের পর্দায় সে দৃশ্য দেখে অভিভূত হয়ে পড়েন। নিল আর্মস্ট্রং এবং তার সহযোগী নভোচারী এডউইন অলড্রিন চাঁদের বুকে প্রায় তিন ঘণ্টা হেঁটে বিভিন্ন ধরনের নমুনা সংগ্রহ করেন এবং ছবি তোলেন। তারপর থেকে একাধিকবার চাঁদে পাড়ি দিয়েছে মানুষ। আর প্রতিবারই নতুন নতুন তথ্য এসেছে চাঁদ থেকে। চাঁদ নামক এই সুন্দর উপগ্রহটি জয়ের মধ্য দিয়েই সৌরজগৎ নিয়ে পৃথিবীর মানুষের ধারণা আমূল বদলে যায়। অবসান হয় চাঁদ নিয়ে মানুষের প্রাগৈতিহাসিক কালের সব কল্পনার। সেদিন চাঁদে মানুষের সেই প্রথম পদার্পণের ঘটনা বিশ্বজুড়ে টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়েছিল।
প্রযুক্তিবিদ্যা ও প্রকৌশলের জন্যও এটি অনন্য এক অর্জন ছিল। অ্যাপোলো-১১কে চাঁদে নিয়ে যেতে তৈরি হয়েছে এ পর্যন্ত নির্মিত পৃথিবীর সবচেয়ে বড় রকেট স্যাটার্ন-৫। ১৯৬৯ সালের ১৬ জুলাই উৎক্ষেপণের পর পুরো চন্দ্রযাত্রার দৃশ্য ধারণে অ্যাপোলো-১১-এর ঈগল মডিউলে বাজ অলড্রিনের জানালায় স্থাপন করা হয়েছিল। একটি ১৬ মিলিমিটার টাইম-ল্যাপস ক্যামেরা। এতে ধারণ করা সাদা-কালো ভিডিওতে দেখেছে পৃথিবীবাসী, নিল ও অলড্রিন চাঁদের সি অব ট্রাঙ্কুইলিটি অঞ্চলে ২১ ঘণ্টা ২৬ মিনিট হেঁটে বেড়িয়েছিলেন।
এবার চাঁদে যাওয়ার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটটাও আমাদের জানা প্রয়োজন। সে সময় মহাকাশ গবেষণা নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে স্নায়ুযুদ্ধ চলছিল। চাঁদের বুকে সবার আগে পা রাখার জন্য ঠান্ডাযুদ্ধ বেধে গিয়েছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে। ১৯৬১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের ইউরি গ্যাগারিন পৃথিবীর চারপাশ থেকে ঘুরে আসে। তার কিছুদিন পর প্রথম নারী হিসেবে মহাকাশ চক্কর দিয়ে আসেন ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা। শুধু মানুষ নয়, লাইকা নামের এক কুকুরও পাঠায় সোভিয়েত ইউনিয়ন। এসব ঘটনায় তখন আমেরিকা মরিয়া হয়ে ওঠে চন্দ্র বিজয়ের জন্য। তখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ কেনেডি ঘোষণা দেন, যুক্তরাষ্ট্র শুধু পৃথিবীর চারপাশে মানুষ পাঠিয়ে বসে থাকবে না, চাঁদেও মানুষ পাঠাবে। কেনেডির ঘোষণা বাস্তবে রূপান্তর করে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। ১৯৬৯ সালের ২০ জুলাই চাঁদের মাটিতে প্রথম পা রাখেন মার্কিন নভোচারী নিল আর্মস্ট্রং। চন্দ্র অভিজানের পেছনে গল্প ঘটনা যাই থাকুক না কেন, নিঃসন্দেহে এটা বলা যায়, চন্দ্রাভিযান ঘটনাটি মানবজাতির ইতিহাসে এক বিস্ময়কর অর্জন।