× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

ইরানি নারীদের মুক্তিকামনা শুনতে পাচ্ছি কি

আফরিদা ইফরাত

প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২২ ১৫:৫৭ পিএম

আপডেট : ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০১:৫৭ এএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

ইরানের পথঘাটে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। কোনো হিজাব না পরেই নারীরা পথে-ঘাটে নেমে এসেছে, অধিকার আদায়ের স্লোগান দিচ্ছে। অভূতপূর্বই বটে! ইরানে হিজাব ছাড়া বের হওয়া মানেই রাষ্ট্রের চোখে অপরাধী হওয়া। এমন প্রেক্ষাপটে পুরো ইরানে নারীদের এই বিক্ষোভ সমগ্র বিশ্ববাসীকে যেমন বিস্মিত করেছে, তেমনই আশান্বিতও করেছে।

নারীর মুক্তিকামনার স্লোগান থেকে দ্রুত জন-আন্দোলন গড়ে ওঠার নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে ইরানে! এই আন্দোলনের মশাল জ্বালানোর পেছনে ২২ বছর বয়সি কুর্দিশ তরুণী মাহশা আমিনি পুলিশি হেফাজতে থাকা অবস্থায় মৃত্যুর ঘটনা স্ফুলিঙ্গের ন্যায় কাজ করেছে। রাষ্ট্রীয় দমনপীড়নের সঙ্গে আপস না করার সিদ্ধান্ত নিয়েই এই বিক্ষোভের সূচনা করেন নারীরা। এই আন্দোলনের মাধ্যমে ইরানের মানুষ বিগত পঞ্চাশ বছর ধরে চলমান প্রশাসনিক দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করার সুযোগ পেয়েছেন। সারাবিশ্ব ইরানের মানুষদের নতুন আলোকে দেখার সুযোগ পাচ্ছে। 

অবশেষে ইরানের নৈতিকতা বিষয়ক পুলিশের মতো অদ্ভুত রক্ষীবাহিনীর পতন হয়তো দ্রুতই ঘটতে চলেছে। ইরানে এর আগেও বহুবার আন্দোলন হয়েছে। প্রতিবারই রাষ্ট্রীয় বাহিনীর সহায়তায় বিক্ষোভ দমন করা গেলেও এবার তা কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। ইরানের ধর্মীয় বিধিনিষেধ সম্পর্কে আমাদের কিছু ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। ইরানের নারীরা ঐতিহ্যগত এবং প্রকৃতিগতভাবে বেশ প্রগতিশীল হলেও সেখানে একটি আইন আছে, যা তাদের জন্য অবমাননাজনক ও বিব্রতকর। ওই আইনে নারীদের হিজাব পরার কড়া নির্দেশ রয়েছে। তাই অনেক নারী বাধ্য হয়েই হিজাব কিংবা চাদর গায়ে চাপিয়েছেন। তা না হলে নৈতিকতা বিষয়ক পুলিশের নির্যাতন-নিপীড়ন সহ্য করতে হয়। অনেকে শালীনভাবে এই আইনের বিরুদ্ধাচরণ করেছেন। তারা সারা শরীর ঢেকে রাখলেও নিজের মুখ ঢেকে রাখেননি। 

কিন্তু সম্প্রতি মাহশা আমিনির মৃত্যুর ঘটনায় যেন ইরানের মানুষের বিবেকে প্রচণ্ড আঘাত লেগেছে, অন্তত বিভিন্ন মতামত ও ছড়িয়ে পড়া বিক্ষোভ থেকে এমনটাই মনে হচ্ছে। প্রথমে এই আন্দোলন নারীমুক্তি ও স্বাধীনতার আন্দোলন হিসেবে পরিচিত হলেও ক্রমেই তা রাজনৈতিক সংস্কারের আওয়াজ তুলছে। নিপীড়নমূলক শাসনব্যবস্থার অপসারণের দাবিতে ইরানের পুরুষ-নারী একজোট হতে শুরু করেছেন। কারণ ইরানের রাজনৈতিক নিপীড়নের কারণে অনেকেই মর্যাদাপূর্ণ জীবনযাত্রার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। 

পশ্চাৎপদ রাজনৈতিক ও রাষ্ট্রীয় আদর্শের বেড়াজালে আটকে থাকায় ইরান তার জনসম্পদের একটি বড় অংশের প্রতি বরাবরই উদাসীন। বিগত কয়েক দশক ধরে সেখানে নারীদের নানাভাবে দমন-পীড়ন করা হচ্ছে। বলাবাহুল্য, দেশটির জনসম্পদের প্রায় অর্ধেক নারী। এমন নয় সামাজিক প্রেক্ষাপট কিংবা ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণে সেখানে নারীকে প্রতিনিয়ত দমন-পীড়নের শিকার হতে হচ্ছে, মূলত রাষ্ট্রীয় আদর্শকে সুদৃঢ় রাখতেই ইরানের রাষ্ট্রনায়করা নিপীড়নমূলক শাসনব্যবস্থা জিইয়ে রেখেছে। 

আমরা জানি, ইরান বরাবরই পশ্চিমা শক্তির সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংঘাত-বিরোধিতায় জড়িয়ে পড়েছে। বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের দ্বন্দ্ব অমীমাংসেয় হয়ে উঠেছে। পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার জন্য শুধু সামরিক শক্তি যথেষ্ট নয়- এ কথা ইরানের নেতৃবৃন্দ ভালোমতোই বোঝেন। যুদ্ধ পরিচালনার জন্য সুনির্দিষ্ট আদর্শিক ভিত থাকা জরুরি। পশ্চিমা সংস্কৃতিতে নারীকে যেভাবে পণ্যের মতো উপস্থাপন করা হয়, তার বিপরীত অবস্থান নিয়ে সামাজিক নৈরাজ্য থামানোর কথাই বারবার নেতারা বলেন। অথচ এখানে যে নীতি-পদ্ধতি ব্যবহার করছেন, তা জন্ম দিয়েছে আরও বড় নৈরাজ্য। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বিশ্বাস করেন ইরান রাষ্ট্রের পতন ঠেকাতেই দেশটির আদর্শগত ভিত্তি সুদৃঢ় করা জরুরি। তিনি একবার বলেছিলেন, রাষ্ট্রীয় আদর্শ কিংবা আইনের ক্ষেত্রে কোনো সমঝোতা কিংবা আপস নয়। বলে দিতে হবে না, এই সমঝোতা না করার ক্ষেত্রে হিজাবের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত। 

আদর্শে সমঝোতা না করার নীতিমালার কারণে ইরানের নারীরা দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকদের মতোই জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন। শিক্ষা কিংবা দক্ষতায় ইরানের নারী পিছিয়ে- এমন কোনো উল্লেখযোগ্য পরিসংখ্যান কিংবা গবেষণা এখনও দেখা যায়নি; বরং অনেক সমীক্ষায়ই দেখা যায়- নারীর দেহের সীমারেখা নির্ণয়ের, মানবাধিকার লঙ্ঘনের পাশাপাশি নারীর উন্নয়নের পথে প্রতিবন্ধকতা তৈরি ও প্রশাসনিক নিপীড়নের নিষ্ঠুর চিত্র। প্রতিবছর ইরানের মানবাধিকার সংগঠন ও অন্যান্য সংস্থা মৃত্যুদণ্ডের পরিসংখ্যান প্রকাশ করে। এসব পরিসংখ্যানে প্রাতিষ্ঠানিক আইনের দৈন্য দশার চিত্র প্রকট। 

সম্প্রতি এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে- চীনের পর ইরানেই সবচেয়ে বেশি নারীমৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়। জানুয়ারি ২০১০ সাল থেকে অক্টোবর ২০২১ সাল পর্যন্ত অন্তত ১৬৪ জন নারীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন বিচার বিভাগ থাকার পরও ইরান সবসময় নারীদের ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। আমাদের হয়তো মনে আছে,রিহানিহ জাবারি নামে ইরানের এক গৃহসজ্জাকারী ধর্ষণ প্রচেষ্টার শিকার হন। আত্মরক্ষার্থে তিনি অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন এবং ওই ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেন। ২০০৯ সাল থেকে এই মামলা চলতে থাকে এবং অবশেষে ২০১৪ সালে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। পশ্চিমা গণমাধ্যমে এ ঘটনা ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। যা হোক, ইরানে খুন করলে সোজাসুজি মৃত্যুদণ্ড রায় দেওয়া হয়। কিন্তু ইরানে নারীদের মৃত্যুদণ্ডের এই পরিসংখ্যান নিঃসন্দেহে অস্বাভাবিক। আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষ বৈষম্যের এসব তথ্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বহুবার উঠে এসেছে। ওইসব সংবাদেই আমরা জানতে পারি, অভিযুক্ত নারী অধিকাংশ সময়েই আইনি সহায়তা পান না। শুধু নারীরাই নন, ইরানে আইনি কাঠামো যথাযথভাবে অনুসরণ না করে সাজানো বিচারপ্রক্রিয়ার ভুক্তভোগী অনেকেই।

লেখাই বাহুল্য, ইরানের এই আন্দোলন থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়ার অনেক কিছুই আছে। একটি রাষ্ট্র যখন তার মোট জনসম্পদের অর্ধেককে দমিয়ে রাখে, তখন সে দেশে নানা সমস্যা দেখা দেয়। ইরানে দরিদ্রতা একটি বড় সমস্যা। আর দারিদ্র্যপীড়িত রাষ্ট্রে মৃত্যুদণ্ড এবং সামাজিক নৈরাজ্যের হার বেশি- এমনটা সমাজবিজ্ঞানীরা প্রায়ই বলেন। ইরানে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু ইরানে সবচেয়ে বড় পার্থক্যের বিষয় হলো, দারিদ্র্য, প্রশাসনিক বৈষম্য, সুযোগ-সুবিধার অভাব এবং বিশেষত নারীর জন্য ন্যায়বিচারহীনতা। অনেক নারী নির্যাতিত হয়ে গৃহহীন হয়ে পড়েন এবং সেজন্য আইনের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবতে পারেন না। ইরানের এমন নিপীড়নমূলক রাষ্ট্রীয় প্রেক্ষাপটেও বহু নারী স্বাবলম্বী হয়ে উঠতে পেরেছেন। নিজ উদ্যম ও উৎসাহে তারা সমাজে বিভিন্ন অবদান রেখে চলেছেন। কিন্তু তাদের এত অবদান থাকার পরও নৈতিকতা পুলিশের লাঞ্ছনা, অপমানের শিকার হতে হচ্ছে। বিষয়টি এতটাই মাত্রাছাড়া হয়ে উঠেছে যে, প্রতিবাদের স্ফূলিঙ্গ থেকে সেখানে গণ-আন্দোলনের দাবানল জ্বলে উঠেছে।

ইসলামি প্রজাতন্ত্রের সঙ্গে নারীর শরীর ও অধিকারসংক্রান্ত শাসন জড়িত থাকলেও ইরানে তা ক্রমেই দুঃশাসনে রূপ নিয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক অস্পষ্টতা এবং মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষায় শাসকরা পুরোপুরি ব্যর্থ। ইরানের তেলখনির শ্রমিকরাও সম্প্রতি বিক্ষোভের ঘোষণা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, যদি সত্যিই এমন কিছু হয়, তবে তেলনির্ভর এই রাষ্ট্রের অর্থনীতি ব্যাপক ক্ষতির মুখোমুখি হবে। এমন অবস্থায় ইরানের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বড়সড় পরিবর্তনের আশা দেখা যাচ্ছে। 

পরিস্থিতি যেমনই হোক, ইরানের সামগ্রিক ব্যবস্থায় আমূল বদল যে আসবে না তা নিশ্চিত। কিন্তু রাজনৈতিক পালাবদলের সুবাতাস টের পাচ্ছে সবাই। এর আগেও ইরানে বহুবার বিক্ষোভ হয়েছে। ফের দীর্ঘ বিরতির পর অর্থাৎ ২০১৯ সালের পর আবারও বড় কোনো বিক্ষোভের মুখোমুখি ইরান। বিক্ষোভকারীরা সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া হচ্ছে। অনেক বিদেশি গণমাধ্যম ইরানের এই আন্দোলনকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রারম্ভবিন্দু হিসেবে ঘোষণা দিয়ে বসেছে। আপাতদৃষ্টে এমন আশ্বাসে স্বস্তি পেলেও ইরানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথ এত সহজ হবে তা আশা করা বোকামির নামান্তর। ইরান বর্তমানে বিরাট নেতৃত্বশূন্যতায় আক্রান্ত। দেশটির প্রধান নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি শারীরিক কারণে রাজনীতি থেকে অনেকটাই দূরে। এ সময় নেতৃত্ব কার হাতে যাবে তা নিয়ে রাষ্ট্রনেতাদের মধ্যে যে দ্বন্দ্ব রয়েছে তা বোঝা কঠিন কিছু নয়। ইরানে খামেনির সঙ্গে আদর্শের সমঝোতা কিংবা আপস না করার আদর্শিক ঝান্ডা বহন করার মানুষ কোথায়? আপাতত বিশ্বমোড়লদের প্রতিনিধি বাইডেন প্রশাসন ইরানের বিক্ষোভের প্রেক্ষাপটে দেশটির বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেবে তাও দেখার বিষয়। 

ভূ-রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করলে আমাদের দেশের সঙ্গে এই আন্দোলনের সম্পর্ক কম। ইরানের এই বিক্ষোভ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে হলেও সামাজিক প্রেক্ষাপটের দায় কিছুটা হলেও আছে। তাই এই স্থবিরতা এবং জটিলতাগুলোকে চিহ্নিত করার মাধ্যমে এদেশের সমাজের জটিলতা তুলনামূলকভাবে চিহ্নিত করার সুযোগ রয়েছে। কারণ প্রাচ্যের রাজনৈতিক আবহ এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আমাদের দেশের মানুষকে স্বভাবতই প্রভাবিত করে। তাই এখানেও যেন এমন রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং নারীর প্রতি সহিংসতামূলক ভাবনা দেখা দিতে কিংবা বাড়তে না পারে সে বিষয়ে নজর তীক্ষ্ণ করতে হবে। সবশেষে একটি কথা বলতে ইচ্ছা করছে। বহু আগে একটি লেখায় পড়েছিলাম (লেখকের নাম ঠিক মনে পড়ছে না), ইরানের কাছে যদি তেলসম্পদ না থাকতো, এই রাষ্ট্র অনেকদূর এগিয়ে যেতে পারতো। ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে বিচার করলে এমন মন্তব্যের গভীরতা এড়িয়ে যাওয়ার কোনো অবকাশ নেই। 

লেখক : সাংবাদিক 


প্রবা/ইউরি/টিই


শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা