পরিপার্শ্ব
মো. আব্দুল আজিজ
প্রকাশ : ১৫ জুলাই ২০২৩ ১১:৩৫ এএম
আন্তর্জাতিক আর্ট সিম্পোজিয়াম বিশ্বব্যাপী শিল্পকলার সম্প্রসারণ, শিল্পীদের সাংস্কৃতিক অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি, বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের সাংস্কৃতিক বিনিময়, সৃজনশীল শিল্প মিশ্রণ তৈরি ও বোঝাপড়া গভীর করার মাধ্যমে বিশ্ব শিল্পী সম্প্রদায়ের মধ্যে এক নিবিড় সম্পর্ক তৈরি করে। আন্তর্জাতিক শিল্প বিনিময় সকল নাগরিকের শিক্ষাকে উন্নত করে। দেশের মাঝে বিভিন্ন সংস্কৃতির সহনশীলতাকে উৎসাহিত করে, দায়িত্বশীল করে আমাদেরকে বৈশ্বিক সমাজে শৈল্পিক ও অর্থনৈতিকভাবে অবদান রাখতে।
২০২৩ সালের মে মাসে ইউনেস্কো আর্ট ক্লাব এবং ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব জারভাস ক্লাব আমেরিকার নিউইয়র্কে ইন্টারন্যাশনাল আর্ট সিম্পোজিয়াম আয়োজন করে। যা বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ সৃজনী আয়োজন। জারভাস আর্ট প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৯ সালে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছর ১২-১৫টি শৈল্পিক ও বৈজ্ঞানিক ইভেন্টের আয়োজন করে। ২০০২ সালে আন্তর্জাতিক পেইন্টিং সিম্পোজিয়ামের শৈল্পিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করে, যেখানে আজ পর্যন্ত সারা বিশ্বের ১০ হাজারের বেশি শিল্পী অংশগ্রহণ করেছেন। ২০১৭ সালে জারভাস আর্ট ক্লাবগুলোর ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন তৈরি হয়। বর্তমানে ৪০টি দেশে প্রায় ৬০টি জারভাস ক্লাব রয়েছে।
জারভাস আর্ট ক্লাব ২৫ মে থেকে ৩১ মে পর্যন্ত ছয় দিনব্যাপী আমেরিকার নিয়ইয়র্কে যে ইন্টারন্যাশনাল পেইন্টিং সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করে সেখানে বিশ্বের ১৫টি দেশের প্রায় ২৫ শিল্পী অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশ থেকে আমরা তিনজন শিল্পী যোগদান করি প্রথম নিউইয়র্ক আর্ট সিম্পোজিয়ামে। আমার সঙ্গে ছিলেন শিল্পী সাইদুর রহমান, ফ্রিল্যান্স আর্টিস্ট (জাপান মনোবসু স্কলারশিপপ্রাপ্ত) ও শিল্পী গোলাম ফারুক খণ্ডকালীন শিক্ষক, ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটি। নিউইয়র্ক আর্ট সিম্পোজিয়ামের ছয় দিনের প্রোগ্রামে ছবি আঁকা, ওয়ার্কশপ এবং চিত্রপ্রদর্শনীর মাধ্যমে শিল্পীরা পরস্পরের কাছ থেকে শিল্প শিক্ষা বিনিময়ের সুযোগ পান। এ সময় আমরা নিউইয়র্কের বিভিন্ন মিউজিয়াম ও মনুমেন্ট পরিদর্শন করি, যা এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। ওখানে চিত্রপ্রদর্শনী ছাড়াও ছিল আন্তর্জাতিক সেমিনার। এতে অংশ নেন বিভিন্ন শিল্পী ও সমালোচক। আমরা সেখানে সফলভাবে বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতি সম্পর্কে স্ব-স্ব চিন্তাভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করি। চারুশিল্পীদের আন্তর্জাতিক এই মিলনমেলায় বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের শিল্পকর্ম দেখতে পাই এবং চারুকলার বিভিন্ন সৃজনী কৌশলের সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাই। এর পাশাপাশি এশীয় সৃজনশীলতাকে বিশ্বমঞ্চে উন্মোচিত করা এবং দেশীয় শিল্প সংস্কৃতি তুলে ধরতে সক্ষম হই। অনুষ্ঠানের সমাপ্তি দিবসে জারভাস আর্ট ক্লাবসের পক্ষ থেকে উপস্থিত শিল্পীদের সম্মানসূচক সার্টিফিকেট, ক্রেস্ট ও মেডেল প্রদান করা হয়। এভাবেই একটি আন্তর্জাতিক আর্ট সিম্পোজিয়ামের সুন্দর ও সফল পরিসমাপ্তি ঘটে।
প্রকৃতপক্ষে আর্ট সিম্পোজিয়াম হলো সৃজনীর পাশাপাশি বুদ্ধিবৃত্তি চর্চার একটি বৃহৎ ক্ষেত্র। এর মাধ্যমে চারুশিল্পীরা নিবিড়ভাবে বিশ্ব সংস্কৃতি ও সৃজনশীল ধারাকে চিনতে পারে। তথ্য ও ভাবের আদান-প্রদানের মাধ্যমে নব নব শিল্পবোধের উন্মেষ ঘটে এখানে এবং স্বদেশীয় শিল্প-সংস্কৃতিকে ব্যাপক পরিসরে উন্মোচন করার সুযোগ পাওয়া যায়। তাই বলা যায়, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি দেশের স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক পরিচয় তৈরি এবং তার শিল্প-সংস্কৃতিকে প্রকাশ করা ও সংযুক্ত করার ক্ষেত্রে আর্ট সিম্পোজিয়ামের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।