× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্মরণ

মানবমনের চিত্রক

মামুন রশীদ

প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২৩ ২৩:৪৩ পিএম

আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২৩ ১৪:৫৩ পিএম

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

‘স্মৃতির মিনার ভেঙেছে তোমার?/ভয় কি বন্ধু, আমরা এখনো/চার কোটি পরিবার/খাড়া রয়েছি তো!/ যে-ভিত কখনো কোনো রাজন্য পারেনি ভাঙতে।’ কবিতাটির রচয়িতা ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী আলাউদ্দিন আল আজাদ। তিনি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। মাতৃভাষার অধিকার রক্ষার সংগ্রামে রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে দেওয়া সালাম-বরকত-রফিক-জব্বারÑ বাংলার অবিনাশী সব নাম। তাঁদের স্মৃতির পথ ধরে নির্মিত একুশের প্রথম শহীদ মিনার ভাঙার প্রতিবাদে কবিতা লিখেছিলেন আলাউদ্দিন আল আজাদ। পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত্যের অন্যতম দিগপাল হয়ে ওঠা আলাউদ্দিন আল আজাদ পরিচিত হন ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, কবি, নাট্যকার এবং গবেষক হিসেবে। তাঁর জন্ম নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার রামনগর গ্রামে ১৯৩২ সালের ৬ মে।

বাঙালির সাহিত্যচর্চা অধিকাংশ সময়ই প্রথমে কবিতা দিয়ে শুরু হলেও আলাউদ্দিন আল আজাদ তাঁর সাহিত্যচর্চা শুরু করেছিলেন প্রবন্ধ রচনার মধ্য দিয়ে। ১৯৪৬ তথা বাংলা ১৩৫৪ সালে মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন সম্পাদিত ‘সওগাত’ পত্রিকার শ্রাবণ সংখ্যায় প্রকাশিত হয় তাঁর প্রবন্ধ ‘আবেগ’ ও গল্প ‘জানোয়ার’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ১৯৫০ সালে প্রকাশ পায় তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ। ‘ জেগে আছি’ শিরোনামে গল্পগ্রন্থটি পাঠকের নজর কাড়ে। ১৯৫১ সালে প্রকাশ পায় গল্পগ্রন্থ ‘ধানকন্যা’। ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী হিসেবে ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি পুলিশের গুলিতে প্রথম শহীদ রফিকউদ্দিনের নির্মম মৃত্যু প্রত্যক্ষ করেন। তাঁরই চোখের সামনে গুলিবিদ্ধ হন আবদুল জব্বার ও আবুল বরকত। ভাষাশহীদদের স্মরণে গড়ে ওঠা স্মৃতিস্তম্ভ আবুল কালাম শামসুদ্দিন কর্তৃক ২৬ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধনের পরই বিকালে ভেঙে ফেলে পুলিশ। এ রাতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ইকবাল হলে বসে ‘স্মৃতিস্তম্ভ’ শিরোনামে কবিতাটি তিনি লেখেন। একুশের প্রথম বুলেটিন ‘বিপ্লবের কোদাল দিয়ে আমরা অত্যাচারী শাসকগোষ্ঠীর কবর রচনা করি’তে ছাপা হয় তাঁর স্মৃতিস্তম্ভ কবিতাটি।

১৯৫৮ সালে প্রকাশ পায় তাঁর প্রথম নাটক ‘মরক্কোর জাদুকর’। একই বছর প্রকাশ পায় প্রথম প্রবন্ধ সংকলন ‘শিল্পীর সাধনা’। আলাউদ্দিন আল আজাদ রচিত প্রথম উপন্যাস ‘ তেইশ নম্বর তৈলচিত্র’ প্রকাশ পায় ১৯৬০ সালে। তিনি প্রথম উপন্যাসেই পাঠকশ্রেণির তো বটেই, দৃষ্টি কাড়েন সমালোচকদেরও। এ উপন্যাসের কাহিনী নিয়ে পরবর্তীতে নির্মিত হয় চলচ্চিত্র ‘বসুন্ধরা’। পরের বছর প্রকাশ পায় তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘মানচিত্র’। আলাউদ্দিন আল আজাদের সৃষ্টিসম্ভার যেমন বৈচিত্র্যময়তায় ভরা, তেমনি বিপুল তাঁর রচনাসম্ভার। তাঁর রচিত উপন্যাসের সংখ্যা ২৪। এ ছাড়া রচিত গল্প ১১৮টি, নাটক ১২টি, কবিতাগ্রন্থ ১১টি, ৫টি প্রবন্ধ সংকলন এবং কুড়ির অধিক অনুবাদিত বইয়ের পাশাপাশি রয়েছে অসংখ্য সাহিত্য সমালোচনা। তিনি তাঁর লেখায় বরাবরই তুলে ধরেছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জীবন। তিনি জীবনের সংগ্রাম এবং যাতনাকে খুব গভীরভাবে উপলব্ধি করেছেন। সেই উপলব্ধির ভাষারূপ তাঁকে দিয়েছে পাঠকপ্রিয়তা। তাঁর গল্প-উপন্যাসে উঠে এসেছে নাগরিক জীবনে মানুষের নগ্নমনের বহিঃপ্রকাশ, মানবমনের বিকার ও বিকৃতি। তবে সেখানেও তিনি সব সময় বাস্তব জীবনেরই অনুসন্ধান করেছেন। নগরজীবনের কৃত্রিমতাকে যেমন তিনি তুলে এনেছেন অকপটে, তেমনি রাজনৈতিক সংগ্রাম, নিপীড়ন ও প্রতারণাও তাঁর সাহিত্যের বিষয়বস্তু হয়েছে। আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহারে তাঁর দক্ষতা অনস্বীকার্য। ‘কর্ণফুলী’ উপন্যাসে তিনি যে দক্ষতায় আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহারের মধ্য দিয়ে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী মানুষের জীবনকথা তুলে ধরেছেন, তা একদিকে যেমন ভাষাদক্ষতার উদাহরণ, তেমনি তাঁর দেখা ও বর্ণনার কৌশলেরও দক্ষতা। ২০০৯ সালের ৩ জুলাই এই কীর্তিমান পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। তাঁর প্রয়াণ দিবসে জানাই শ্রদ্ধা।

 

  • সাংবাদিক ও কবি
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা