× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

জলবায়ু পরিবর্তন

এশিয়ার পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হচ্ছে

আন্দ্রে চেরকভস্কি ও পল মরিওট

প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২৩ ১৪:২১ পিএম

অলঙ্করন : প্রবা

অলঙ্করন : প্রবা

বৈশ্বিক অর্থনীতিতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ক্রমান্বয়ে বড় হচ্ছে। বিগত এক দশকে এ অঞ্চলের গড় জাতীয় উৎপাদন ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। উৎপাদনের হারের বৃদ্ধির জন্য অঞ্চলটিকে বড় মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছে। দ্রুত নগরায়ণ এবং শক্তির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গতের মাত্রাও বেড়েছে। ২০২০ সালে দক্ষিণ এশিয়ার জ্বালানি খাত থেকে বিশ্বের ৬ দশমিক ৫ শতাংশ কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গত হয়েছে। অথচ ১৯৯০ সালে এর পরিমাণ ছিল ২ দশমিক ৮ শতাংশ। ক্ষতিকর গ্যাস নিঃসরণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় বৈশ্বিক তাপমাত্রা ৩ দশমিক ২ সেলসিয়াস বেড়েছে। সুইস রে ইনস্টিটিউটের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে এ অঞ্চলের গড় জাতীয় উৎপাদন অন্তত ৩৭ শতাংশ কমবে। তাপমাত্রা পরিবর্তনের ফলে শুধু অর্থনৈতিক ক্ষতিই হবে এমন নয়; বরং সামাজিক ও স্বাস্থ্যেও বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করবে। এ দুই পর্যায়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়লে মানুষের আয়ও প্রভাবিত হবে। আরও শঙ্কা রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় অন্তত ১২ শতাংশ মানুষ ভূমিহীন হয়ে পড়তে পারে।

এ অঞ্চলের মানুষের বিপদাশঙ্কা কাটাতে নতুন কৌশল নিতে হবে। তা ছাড়া এ অঞ্চলের জাতিগত বৈচিত্র্যের পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চলে শক্তির সঠিক ব্যবহার, সুষ্ঠু সরবরাহ এবং প্রাপ্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বহুমুখী প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে। কোনো গোত্রই যেন এ সুবিধা থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্য সঠিক পরিকল্পনা নিতে হবে। বলা বাহুল্য, এ সমস্যা সমাধানের সহজ পথ নেই। বিশেষত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অবস্থানই এ সমস্যা বাড়ানোর ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করতে পারে।

শিল্পপ্রতিষ্ঠান এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনে ভূমিকা রাখলে শেষ পর্যন্ত তারাই বেশি লাভবান হবে। কারণ জলবায়ু পরিবর্তন বিশ্ববাজারে যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে সেখানে তাদের ইতিবাচক ভূমিকার কারণে সরবরাহ ব্যবস্থায় নিয়ন্ত্রণ আনা সম্ভব। নতুন একটি ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম বস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ এবং এসএপির সঙ্গে সম্মিলিতভাবে একটি গবেষণাপত্র তৈরি করেছে। ‘এক্সেলেরেটিং এশিয়াজ অ্যাডভান্টেজ : এ গাইড টু করপোরেট ক্লাইমেট অ্যাকশন’ শিরোনামের এ গবেষণাপত্রে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপের বিষয়ে বিস্তারিত বলা হয়েছে। গবেষণাপত্রটি মূলত শিল্প খাত কীভাবে এ প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করবে এবং সেজন্য কেমন অবকাঠামো প্রয়োজন তার একটি চিত্র তুলে ধরেছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানটিই সবুজায়নকে প্রাধান্য দিয়েও নিজস্ব ব্যবসায়িক পরিকল্পনা সফলভাবে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে কী করতে পারে সে বিষয়ে কিছু প্রস্তাবও তুলে ধরা হয়েছে। এ কথা নিশ্চিত, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার জন্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে। এ ক্ষেত্রে অপেক্ষা করার অবকাশ নেই। বরং জলবায়ু যে হারে পরিবর্তিত হচ্ছে তার সঙ্গে সমন্বয় করেই এগিয়ে যেতে হবে। প্রতিষ্ঠানের পরিচালককে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়কে প্রাধান্য দিতে হবে। তাদের উদ্যোগই এ ক্ষেত্রে ক্ষতি এবং সম্ভাবনার পথ উন্মুক্ত করে দিতে পারে। প্রথমেই আমাদের ডিকার্বনাইজেশনের পথে যেতে হবে।

শুধু উদ্যোগ নিলে হবে না। সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপও নিতে হবে। ২০২১ সাল নাগাদ ৪ হাজার এশিয়ান কোম্পানির মধ্যে মাত্র ৯০০ প্রতিষ্ঠান কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ শূন্যের কোঠায় নামিয়ে এনেছে। কার্বন নিঃসরণ কমানোর ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আরও দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। কীভাবে তারা কার্বন নিঃসরণ কমানোর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে এবং উৎপাদন খরচ হ্রাস করতে পারবে তার একটি পরিকল্পিত এবং বাস্তবায়নযোগ্য পদক্ষেপের বিকল্প নেই। এ অঞ্চলে কার্বন নিঃসরণ না করেও উৎপাদন নানাভাবে বাড়ানো যেতে পারে। পদ্ধতিগতভাবে প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে যেতে হবে। নীতিনির্ধারক পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ছাড়া এমন কাজ সম্ভব নয়। এ অঞ্চলের অভ্যন্তরে কার্বনের দাম ও জলবায়ু পরিবর্তনগত ক্ষতির পরিমাণ ব্যবসা খাতে কেমন নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে তা যাচাই করতে হবে। শুধু তাই নয়, এ নেতিবাচক প্রভাব বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কতটা ক্ষতিকর তাও এড়িয়ে যাওয়া চলবে না। এসব যাচাই করে জলবায়ু পরিবর্তনের পরিকল্পনা এবং যারা বিভিন্ন খাতের সঙ্গে জড়িত তাদের এগিয়ে আসতে হবে। প্রথাগত পদ্ধতিতে শিল্প খাত পরিচালনা করলে হবে না। সমন্বিত পদ্ধতিতে এগিয়ে গেলে ব্যবসার ক্ষতি হবে না। বরং ব্যবসায় লাভবান হওয়ার বড় সুযোগ বাড়বে।

এশিয়ার যেকোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান জলবায়ু পরিবর্তনকে কীভাবে দেখে তা বোঝা জরুরি। জলবায়ু পরিবর্তন শুধু পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর মনুষ্যসৃষ্ট কাজ কমানো নয়; বরং কীভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব এড়িয়ে লাভের নতুন সম্ভাবনা খুঁজে পাওয়া যায় সে প্রচেষ্টাও। যেকোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠান নতুন মূল্যবোধ ও চিন্তার মাধ্যমে নতুন সমাধান বের করতে চায়। পরিবর্তনই একসময় এ প্রতিষ্ঠানকে বিস্তৃত পরিসরে ছড়াতে সাহায্য করেছে। অবশ্য অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। ক্রেতাদের চাহিদা বিবেচনায় প্রতিষ্ঠানগুলো এখন পরিবেশ রক্ষার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ পণ্য উৎপাদনের দিকেও মনোযোগী হয়ে উঠছে। প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। কিন্তু এ প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি অসংখ্য সম্ভাবনাও রয়েছে; যা প্রতিষ্ঠানগুলো অনুধাবন করতে পারছে না।

২০৩০ সাল নাগাদ এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলে নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে আনুমানিক ৪ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন মুনাফা অর্জনের সম্ভাবনা রয়েছে। নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহার অবকাঠামো, গণপরিবহন এবং কৃষি খাতে নিশ্চিত করার পাশাপাশি শিল্প খাতেও নিতে হবে। বিশেষত নতুন এ পরিবর্তনের ফলে নতুন কর্মসংস্থানও গড়ে উঠবে। পরিবেশ উপযোগী এ নতুন শিল্পব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে ২৩২ মিলিয়ন নতুন কর্মী নিয়োগ দিতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তনকে সরাসরি মোকাবিলা না করাই শিল্প খাত ও বিভিন্ন রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। সঠিক সময়ে জলবায়ু পরিবর্তনকে মোকাবিলা করলে অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি হবে এবং এ সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে অর্থনীতিও চাঙা হবে। নিজেদের ব্যবসার স্বার্থেই এ অঞ্চলের শিল্প খাতের নীতিনির্ধারকদের পদক্ষেপ নিতে হবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রাকৃতিক ও জাতিগত বৈচিত্র্য একটি বড় সম্পদ। তাই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলার পথও হতে হবে অভিনব।


  • লেখকদ্বয় যথাক্রমে সহযোগী পরিচালক, বস্টন কনসাল্টিং গ্রুপ এবং এশিয়া প্যাসিফিক অ্যান্ড জাপান প্রেসিডেন্ট, এসএপি


এশিয়া নিক্কেই থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা