× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

স্মরণ

একজন শহীদজননী

রুবিনা হোসেন

প্রকাশ : ২৬ জুন ২০২৩ ০০:২২ এএম

আপডেট : ২৬ জুন ২০২৩ ১৩:৩২ পিএম

ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

পঞ্চাশের দশকে তিনি ছিলেন দুই পুত্রসন্তানের আম্মা সত্তর দশকের শুরুতে এসে হলেন দেশের জন্য জীবনবাজি রেখে যুদ্ধ করা তরুণদের আম্মা এবং নব্বই দশকে জীবনসায়াহ্নে এসে পরিচিতি পেলেন সব প্রজন্মের আম্মা হিসেবে। সর্বজনীন মাতৃরূপী এই মহীয়সী জননী জাহানারা ইমামের আজ ২৯তম প্রয়াণ দিবস। ব্যক্তিজীবনে জাহানারা ইমাম ছিলেন আদর্শ স্ত্রী ও স্নেহময়ী মা, পেশাগত জীবনে অনুকরণীয় শিক্ষিকা, একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং সর্বোপরি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির আন্দোলনের আপসহীন নেত্রী।

৩ মে, ১৯২৯ মুর্শিদাবাদ জেলার সুন্দরপুর গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জাহানারা ইমামের জন্ম ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট পিতা সৈয়দ আব্দুল আলীর তত্ত্বাবধানে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত জাহানারা ইমাম ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড এবং ১৯৬৫ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এমএ ডিগ্রি নেন। কর্মজীবন ছিল মূলত শিক্ষকতাকেন্দ্রিক। তিনি সিদ্ধেশ্বরী গার্লস স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিলেন পরবর্তীকালে ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজে প্রভাষক হিসেবে দুই বছর কর্মরত ছিলেন। জাহানারা ইমাম ১৯৪৮ সালের ৯ আগস্ট প্রকৌশলী শরীফুল আলম ইমাম আহমেদের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে জাহানারা ইমামের পুরো পরিবার প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে। মুক্তিযুদ্ধের প্রারম্ভেই রুমীর জন্মদিনে (২৯ মার্চ) তিনি ছেলেকে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গের আশীর্বাণী জানান।

আমেরিকায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে যাওয়ার পরিবর্তে রুমী বাবা-মায়ের অনুমতি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। রুমীকে মুক্তিযুদ্ধে পাঠিয়ে দিয়েই ক্ষান্ত ছিলেন না জাহানারা ইমাম অবরুদ্ধ ঢাকা শহরে স্বামীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় মুক্তিযোদ্ধাদের সম্ভাব্য সব ধরনের সহযোগিতা করেন। মুক্তিসেনাদের নিজ গৃহে আশ্রয় দেওয়া, খাবার ও আর্থিক সহযোগিতা প্রদান, পানির ট্যাংকে অস্ত্র লুকিয়ে রাখা, খবর আদান-প্রদান, ওষুধ, শীতের সময় গরম কাপড় সরবরাহÑ এসব দায়িত্ব তারা অসীম সাহসের সঙ্গে পালন করেন সেই ভয়াবহ দিনগুলোতে। ১৯৭১-এর ২৯ আগস্ট মধ্যরাতে দুই পুত্র এবং স্বামী শরীফ ইমামকে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। দুই দিন পর অমানুষিক নির্যাতন শেষে স্বামী ও ছোট ছেলে ফিরে এলেও মুক্তিযোদ্ধা পুত্র রুমী ফিরে আসেননি। পাকিস্তানি বাহিনীর অত্যাচার, চরম অপমান এবং পুত্র হারানোর শোক সইতে না পেরে বিজয়ের মাত্র তিনদিন পূর্বে ১৩ ডিসেম্বর পরলোকে পাড়ি জমান শরীফ ইমাম। পাকি বাহিনীর হাতে তরুণ মুক্তিযোদ্ধা পুত্রের মৃত্যু এবং স্বামীর জীবনাবসান তাকে নিঃসঙ্গ করে ফেললেও প্রবল জীবনবাদের কারণেই তিনি ভেঙে পড়েননি বরং স্বাধীনতাপরবর্তীতে বাংলাদেশে আবির্ভূত হন মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণাদাত্রী হিসেবে। তরুণ প্রজন্মর সামনে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার জন্য হৃদয়কে পাথর করে রচনা করেন মুক্তিযুদ্ধের অমূল্য দলিল একাত্তরের দিনগুলিতার উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো হলো : অন্যজীবন, ক্যান্সারের সাথে বসবাস, বীরশ্রেষ্ঠ, বুকের ভিতর আগুন, নিঃসঙ্গ পাইন, নাটকের অবসানে, দুই মেরু।

১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর একাত্তরের চিহ্নিত নরঘাতক গোলাম আযমকে জামায়াতে ইসলামী তাদের দলের আমির ঘোষণা করলে সচেতন দেশবাসী বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। মৌলবাদী, ধর্মান্ধ ও সাম্প্রদায়িক অশুভ গোষ্ঠী এবং স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি যখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠল, ঠিক তখনই জাহানারা ইমাম তার আশ্চর্য সাংগঠনিক ক্ষমতাবলে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করে তাদের অগ্রযাত্রাকে প্রতিহত করা শুরু করেন সোচ্চার হন একাত্তরের চিহ্নিত ঘাতক এদেশীয় দালালদের বিচার করতে। মাত্র আড়াই বছরের মধ্যে তিনি একজন দক্ষ সংগঠক ও নেত্রী হিসেবে তার যোগ্যতার স্বীকৃতি অর্জন করেছিলেন সংগঠিত করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তিকে। আন্দোলনকালীন তৎকালীন সরকারের বৈরী আচরণ, রাজাকারদের আস্ফালন, দুরারোগ্য ব্যাধির যন্ত্রণা কোনো কিছুই তাকে তার অভীষ্ট লক্ষ্য হতে বিচ্যুত করতে পারেনি। অবশেষে ২৬ জুন, ১৯৯৪Ñ দেশ যখন একাত্তরের ঘাতক-দালালদের বিচারের দাবিতে উত্তাল, সে সময় ঘাতকদের বিচারের দায়িত্বভার জনগণের ওপর অর্পণ করে তিনি পাড়ি জমান না-ফেরার দেশে। গভীর শ্রদ্ধা তাঁর স্মৃতির প্রতি

  •  সাবেক কিউরেটরজাহানারা ইমাম স্মৃতি জাদুঘর
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা