× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সাংবাদিক হত্যা

নিরাপত্তাহীনতা নিয়তি হতে পারে না

মোস্তফা হোসেইন

প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৩ ০০:৪৫ এএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

দেশে সাংবাদিক নির্যাতনের খতিয়ান কী বলে? হইচই পড়ে যাওয়া সাগর-রুনি হত্যার বিচার হয়েছে কি? বিচার পাওয়ার সম্ভাবনাই বা কতটুকু? এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতেই ৯৮ বার সময় চাওয়া হয়েছে! সাগর-রুনি ঢাকায় দুটি বড় মিডিয়া প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। ঘটনাক্রমে দুনিয়াজোড়া ঝাঁকুনি দিয়েছিল সাগর-রুনির হত্যাকাণ্ড। চাঞ্চল্যকর সেই হত্যার বিচারেরই যদি এমন হাল হয়, তাহলে মফস্বলের সাংবাদিকদের অবস্থাটা কী হতে পারে? প্রশ্নটা ফের সামনে আসে জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জের গোলাম রাব্বানী নাদিমের হত্যাকাণ্ডের পর। ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় প্রভাবশালী নেতা বাবু চেয়ারম্যানকে অভিযুক্ত করা হয়েছে এই হত্যাকাণ্ডে। পুলিশের দ্রুত পদক্ষেপের কারণে তার গ্রেপ্তার হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। সেসহ অন্য আসামীদের নেওয়া হয়েছে রিমান্ডে। কিন্তু তারপর? সবই অজানা। সেই তালিকায় যুক্ত হতে পারে যে কোনো সাংবাদিকের নাম। সংবাদমাধ্যম সোচ্চার হবে বিচার চেয়ে। ওইটুকুই।

কারণ স্পষ্ট। বিচার না হওয়া। খুনিদের শক্তি এতই বেশি যে, তাদের টিকির নাগালও পায় না কেউ! সাংবাদিক শামসুর রহমান হত্যার বিচার হয়নি ২২ বছরেও। হুমায়ুন কবির বালু হত্যার বিচার হতে সময় নিয়েছে ১৭ বছর। ১৭ বছর যদি বয়ে যায় বিচার হতে, অপরাধীদের কি আর সেই শাস্তিকে ভয় পাওয়ার কথা? অপশক্তি যে ভয় পায় না, তারই প্রমাণ আবার পাওয়া গেল জামালপুরের নাদিম হত্যার মধ্য দিয়ে। একের পর এক সাংবাদিক নির্যাতন ও হত্যাকাণ্ডের পর প্রশ্ন আসতে পারে, রাষ্ট্রের জন্য গণমাধ্যম কি অপ্রয়োজনীয়? না হলে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসেই ৫৬ জন সাংবাদিককে নির্যাতনের শিকার হতে হবে কেন? কেন নাদিমকে জীবন দিতে হবে? তার অপরাধ ছিল কি? প্রাপ্ত তথ্যমতে, নাদিম স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কিছু কাজের দুর্নীতির বিষয়ে রিপোর্ট করেছিলেন। বলবান জনপ্রতিনিধি কিংবা প্রভাবশালী হওয়ার সুবাদে সাংবাদিকদের মৃত্যুর এলান দেওয়া কি চলতেই থাকবে? বারবার সাংবাদিকদের এমন পরিণতি বরণ করতে হবে কেন? শুধু কি বিচারহীনতাই এর মূল কারণ? সাংবাদিকদের হত্যার পেছনে বড় কারণ হিসেবে কাজ করে প্রভাবশালীদের স্বার্থে আঘাত লাগা। রাজনৈতিক কিংবা বিত্তশালীদের অবৈধ ব্যবসায় কিংবা স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় ফাঁস হয়ে গেলে টার্গেট হন সাংবাদিকরা। অন্যদিকে হলুদ সাংবাদিকতা বলতে যে গালি প্রচলিত আছে, সেই বিষয়টিও লক্ষণীয়। জামালপুর জেলার বকশীগঞ্জ সদর উপজেলার সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম বাবু শুধু ক্ষমতাসীন স্থানীয় আওয়ামী লীগেরই নেতা নন, নিকট অতীতে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতা হিসেবে সেসব দলের ছায়াতলেও তার দাপট লক্ষ্য করা গেছে। তবে এই আমলে বাবুর দাপটটা একটু বেশিই ছিল। ভুক্তভোগীরা সুযোগ বুঝে মুখ খুলেছে। একের পর এক বেরিয়ে আসছে বাবু চেয়ারম্যানের কীর্তিকলাপ।

রাজনৈতিক প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে সাংবাদিক নির্যাতন যার একটি উদাহরণ এটি। আমাদের দুর্ভাগ্য, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সরকার হোক আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার হোক, সাংবাদিকদের জীবন কখনোই নিরাপদ থাকে না। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে ২৩ জন সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন সংবাদসংশ্লিষ্ট কারণে। এর মধ্যে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি শাসনামলেই হত্যা করা হয়েছে ১৪ জনকে! সাংবাদিকদের অপঘাতে মৃত্যু এতটাই মামুলি বিষয়Ñ এ নিয়ে কারও মাথাব্যথা আছে বলেও মনে হয় না। বিরোধী দলে থাকাকালে যারা সাংবাদিকদের সহানুভূতি কামনা করেনÑ এ অভিযোগ নতুন নয়। তারাই ক্ষমতায় যাওয়ার পর প্রথম টার্গেট হিসেবে এই সাংবাদিকদেরই তালিকাভুক্ত করেন। সঙ্গত কারণেই রাজনৈতিক স্বচ্ছতার বিষয়টিও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে যুক্ত। তথা সাংবাদিকদের নিরাপত্তার সঙ্গে রাজনৈতিক বিষয়ও জড়িত।

সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ না হওয়ার জন্য অনেকেই সাংবাদিকদের অনৈক্যকে দায়ী করেন। হয়তো এ অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। কিন্তু যখন সাংবাদিকদের ঐক্য ছিল, তখনও কি সাংবাদিকরা নিরাপদ ছিলেন? ইতিহাস কিন্তু তা বলে না। সাংবাদিকদের স্বাধীনতা ও কর্মসংস্থানের নিরাপত্তার প্রসঙ্গ এলেই কিছু মানুষ বঙ্গবন্ধু আমলে চারটি পত্রিকা বাদে সব পত্রিকা বন্ধের প্রসঙ্গ আনেন। বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন। ওই সময় কোনো সাংবাদিক নির্যাতিত হয়েছেন এমন নজির নেই। এমনকি পত্রিকা বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে কোনো সাংবাদিককে বেকারও হতে হয়নি। যেসব পত্রিকা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তারা মাসে মাসে বেতন পেতেন সরকারি তহবিল থেকে। শুধু তা-ই নয়, তাদের অপশন দেওয়া হয়েছিল সরকারি চাকরি গ্রহণের। এই সুযোগে অনেক সাংবাদিক সেই সময় সরকারি চাকরিও গ্রহণ করেছিলেন।

সাংবাদিকদের নিরাপত্তাহীনতার জন্য বিদ্যমান আইনকানুনও প্রতিবন্ধক হতে পারে। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের কারণে অনেককে বৈরী পরিস্থিতির মুখে পড়তে হয়েছে। সাংবাদিক সমাজ আইনটি সাংবাদিকদের জন্য খড়্গ হিসেবে চিহ্নিত করে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই আইনের কারণে সাংবাদিকদের ভীত হওয়ার কারণ নেই। এর অপপ্রয়োগ হবে না বলেও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বিভিন্ন সময়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, বাস্তবতা ভিন্ন কথা বলছে। আর্টিকেল ১৯-এর প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০২০ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত দায়ের হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা ৫৮৪টি মামলার ১১৫টিতে ২২৯ জন সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে। সর্বশেষ চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হয়েছে ১৩টি মামলা। আইনের অপপ্রয়োগ বন্ধ হয়নি, অন্যদিকে আইন সংশোধনের আশ্বাসও শোনা যায়।

সাংবাদিকদের প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতার বিষয়টিও নিরাপত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। সাংবাদিক নির্যাতিত হওয়ার পর যদি তার নিজের প্রতিষ্ঠান তার পাশে না দাঁড়ায় তাহলে ওই সাংবাদিক নিজেই যে নিরুৎসাহী হন শুধু তাই নয়, তার অবস্থা দেখে প্রতিশ্রুতিশীল অন্যদেরও উৎসাহে ভাটা পড়ে। মনে পড়ছে নাদিয়া শারমিনের কথা। হেফাজতে ইসলামীর শাপলা চত্বর কর্মসূচির সময় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে নির্যাতিত হয়েছিলেন তিনি। তার অভিযোগ শোনা গিয়েছিল তার প্রতিষ্ঠান তাকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করেনি। প্রসঙ্গত বলতেই হবে, যদি কোনো সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে নির্যাতনের শিকার হন তাহলে প্রতিষ্ঠান তার পাশে না দাঁড়ালে শুধু সেই সাংবাদিকই নন, অন্যরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে পারেন। নিরাপত্তাহীনতা নিয়তি হতে পারে না।

গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশে এমনটি কাম্য হতে পারে না। দেশে সাংবাদিক নির্যাতন বন্ধ করতে হলে চলমান মামলাগুলো দ্রুত শেষ করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতেই হবে। সরকার প্রতিশ্রুত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংস্কারও সময়ের গুরুত্বপূর্ণ দাবি। সাংবাদিক ইউনিয়নগুলোকে কিছু মৌলিক বিষয়ে এক ব্যানারে আসা প্রয়োজন। কারণ এ ধরনের বিপর্যয় দল-মত বিবেচনা করে না। সাংবাদিকদের নিরাপত্তায় সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নেই।

  • সাংবাদিক, মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ও শিশুসাহিত্যিক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা