× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চল

নিরপেক্ষ ভূ-রাজনৈতিক উত্থান

ফরিদ জাকারিয়া

প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৩ ০০:৩১ এএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

সৌদি আরবের ডি ফ্যাক্টো শাসন যখন পেশাদারি গলফ অধিগ্রহণের ঘোষণা দিয়েছিল তখন খুব বেশি অবাক হওয়ার কিছু ছিল না। আগামীতে এমন বিস্ময়কর অনেক ঘোষণাই তাদের পক্ষ থেকে পাওয়া যাবে। পারস্য উপসাগর বিশেষত সৌদি আরবের উত্থানে মধ্যপ্রাচ্য যেভাবে পুনর্গঠিত হচ্ছে, তাতে পুরো পৃথিবীর ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়বে এমনটিই অনুমেয়। কিন্তু প্রথমেই একটি সহজ প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে নেওয়া যাক। গত বছর সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ কোনটি? আপনি যদি ভারত, চীন কিংবা এশিয়ার অন্য কোনো ‘বাঘ’-এর নাম উল্লেখ করেন তাহলে ভুল করবেন। সঠিক উত্তর হলো, সৌদি আরব। তাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ৭ শতাংশ। সৌদি আরবের পাশাপাশি কুয়েত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতও অর্থনীতিতে অনেক এগিয়েছে। 

অর্থনৈতিক অগ্রগতির বিস্ফোরণ বলতে আসলে কী বোঝায়? প্রতিনিয়ত উদ্ভাবনের কথা ভাবলেও আমরা এখনও শক্তির উৎস হিসেবে জীবাশ্ম জ্বালানির ওপর নির্ভরশীল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর রাশিয়ার ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয় এবং আন্তর্জাতিক তেল ও গ্যাসের বাজারে মস্কোর গুরুত্ব কিছুটা হলেও কমতে শুরু করে। উল্লেখ্য, বর্তমানে তেল ও গ্যাস সরবরাহে শীর্ষ দুই দেশ ইরান ও ভেনিজুয়েলার ওপরও আন্তর্জাতিক মহলের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তা ছাড়া তাদের পুরোনো ও বিপর্যস্ত তেল-গ্যাসক্ষেত্রও নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়েছে। 

যুক্তরাষ্ট্রও প্রচুর তেল ও গ্যাস উত্তোলন করে। কিন্তু এখনও তাদের জ্বালানি প্রচুর পরিমাণে আমদানি করতে হয়। ফলে পুরো বিশ্ব এখন পারস্য উপসাগরের কয়েকটি দেশের ওপর তেল-গ্যাসের স্বাভাবিক সরবরাহের জন্য নির্ভরশীল হয়ে উঠেছে। এই নির্ভরশীলতা আগামী কয়েক যুগ থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদি তা হয় তাহলে ওই অঞ্চলের ইতিহাসে এই প্রথম প্রচুর সম্পদ পুঞ্জীভূত হবে। ইতোমধ্যে এই অঞ্চলের চারটি সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রায় ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সম্পদ আহরণ করেছে, যা কিনা গত দুই বছরের তুলনায় ৪২ শতাংশ বেড়েছে। সৌদি আরব বর্তমানে তাদের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ডকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তাদের প্রত্যাশা, ২০২৩ সালে এই ফান্ডে ২ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার সম্পদ হবে। আপাতত পুরো পৃথিবীতে এত সম্পদ অন্য কেউ আহরণ করতে পারবে বলে ধারণা করা যায় না। আর এত সম্পদ একটি অঞ্চলে পুঞ্জীভূত হওয়ার অর্থনৈতিক প্রভাব কেমন হতে পারে তা আমাদের অজানা নয়। 

প্রথমেই বলেছি, সৌদি আরব পেশাদারি গলফ ব্যবসার মালিকানা নিয়েছে। জানুয়ারিতে ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সৌদি আরব এবার ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচে ফরমুলা ওয়ানের রেসিং ফ্রেঞ্চাইজ কেনার তোড়জোড় করছে। ইতোমধ্যে তারা পৃথিবীর অন্যতম জনপ্রিয় ফুটবল তারকাকে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বার্ষিক বেতনে তাদের একটি ফুটবল ক্লাবে যুক্ত করেছে। এমনকি অনলাইন গেমিং ইন্ডাস্ট্রিতেও তারা বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। এই খাতে বড় অংশীদার হওয়ার লক্ষ্য আছে দেশটির। একবার ইউরোপের খ্যাতনামা বিলাসবহুল হোটেল আর বড় ব্র্যান্ডগুলোর দিকে তাকান। অধিকাংশই পারস্য উপসাগরে অবস্থিত রাষ্ট্রের নাগরিকদের মালিকানায়। 

আরব উপসাগরেরই একজন মন্ত্রী আমাকে বলেছেন, ‘আমাদের দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এবার বিনিয়োগের পালা।’ সম্পদের প্রবাহ মধ্যপ্রাচ্যকে বদলে দিয়েছে। মিশর, ইরাক, সিরিয়া এককালে এই অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক নেতৃত্ব ধরে রাখলেও এখন দারিদ্র্য, অপরাজনীতি ও বিভক্তির কারণে তারা পুরোপুরি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না। পারস্য উপসাগর অঞ্চলেই মূলত ভূ-রাজনৈতিক প্রক্রিয়া চলমান। ইতোমধ্যে তারা বৈদেশিক সম্পর্কের নীতিতেও কৌশলগত পরিবর্তন এনেছে। শুরুতে সৌদি আরবের ডি ফ্যাক্টো শাসক যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান তার রাষ্ট্রের সম্পদ একটু ভিন্নভাবেই ব্যবহার করেছিলেন। স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্তের মাধ্যমে তিনি ইয়েমেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া এবং ইরানের সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন। এভাবে তিনি কাতার, লেবানন এবং জর্ডানকে টেক্কা দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। স্বেচ্ছাচারী এসব সিদ্ধান্ত কোনো কাজে আসেনি। কিন্তু বিগত কয়েক বছর ধরে তার নেতৃত্বে পরিবর্তন এসেছে এবং তিনি এখন পরিণত সিদ্ধান্ত নিতে শুরু করেছেন। কাতার ও জর্ডানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন হয়েছে এবং ইরানের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কও জোরদার করেছেন। আপাতত ইয়েমেনের সঙ্গে শান্তিচুক্তি স্থাপনের প্রচেষ্টাও চলমান। 

পারস্য উপসাগরের প্রতিটি রাষ্ট্রই চীনের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করে চলেছে। বলা বাহুল্য, চীন এই অঞ্চলের প্রধান ক্রেতা রাষ্ট্র। ২০০১ সালে চীনের সঙ্গে সৌদি আরবের বাণিজ্যিক লেনদেনের পরিমাণ ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে একটু বেশি ছিল। ওই সময় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্যিক লেনদেনের সঙ্গে তুলনা করলে তা এক-দশমাংশ হবে। কিন্তু ২০২১ সালে এই বাণিজ্যিক লেনদেনের পরিমাণ ৮৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা কিনা যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পন্ন করা বাণিজ্যিক লেনদেনের চেয়ে অনেক বেশি। অর্থাৎ এই অঞ্চলের সঙ্গে চীনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক গভীর হচ্ছে। এমনকি ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীন সংযুক্ত আরব আমিরাতে একটি সামরিক প্রতিষ্ঠান গড়ার কাজ শুরু করেছে। 

সৌদি আরব কিংবা পারস্য উপসাগরের অন্যান্য রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কোচ্ছেদের কথা ভাবছে এমন কিছু বলা যাবে না। তারা চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার রাখতে চায়। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা বিষয়ে নিজেদের সম্পর্ক বাড়াতেই মনোযোগ বেশি তাদের। যেকোনো রাষ্ট্রের সঙ্গে অবাধে সম্পর্ক গড়ার জন্যই তারা তাদের বৈদেশিক নীতিতে এত পরিবর্তন এনেছে। (মজার একটি তথ্য দেই, রাশিয়ানরা পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে কোথায় গিয়ে জড়ো হয়েছে জানেন? একবার দুবাই ঘুরে আসুন। সেখানে আরবির তুলনায় রাশিয়ান ভাষাই বেশি শোনা যাবে।) এই অঞ্চলের রাষ্ট্রগুলো ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলেছে এবং ইসরায়েলের সঙ্গেও সমঝোতার পথ খুঁজে চলেছে। 

অধিকাংশ রাষ্ট্রই এখন এমন একটি পররাষ্ট্রনীতি তৈরি করতে চায়, যেখানে রাষ্ট্রগুলো নিজেদের স্বাধীনভাবে কার্যক্রম পরিচালনার সক্ষমতা দিতে পারে। অর্থাৎ পূর্ব-পশ্চিম এ দুই ভূভাগেই তারা কাদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়বে তার স্বাধীনতা থাকবে। জাতীয় স্বার্থই সর্বাগ্রে। সৌদি যুবরাজ যদি তার এই পরিণত নেতৃত্ব অব্যাহত রাখতে পারেন, তাহলে সৌদি আরব নিজেদের একটি নিরপেক্ষ ভূ-রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারবে। এখানে সৌদি আরব সবার সঙ্গেই বন্ধুত্ব গড়তে পারে। কারও সঙ্গে তাদের বৈরিতা নেই। 

  • লেখক ও কলামিস্ট, ওয়াশিংটন পোস্ট


ওয়াশিংটন পোস্ট থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত অনুবাদ : আমিরুল আবেদিন

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা