বাবা দিবস
ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ
প্রকাশ : ১৮ জুন ২০২৩ ০০:২৬ এএম
অলঙ্করন : প্রবা
পৃথিবীর সব ধরনের বিপদ থেকে পরম যত্নে আমাদের আগলে রাখেন বাবা-মা।পৃথিবীর ছোট ও মধুর শব্দগুলোর মধ্যে বাবা ডাকটি অন্যতম। এ শব্দটির সঙ্গেই যেন জড়িয়ে আছে ভালোবাসা, নির্ভরতা আর ভরসার ছায়া। মাকে ভালোবাসার জন্য যেমন আলাদা দিনের প্রয়োজন হয় না, তেমনি বাবাকেও ভালোবাসার জন্য বিশেষ দিনের প্রয়োজন নেই। তবু বছরের একটি দিন তো বিশেষ করে তাদের জন্য বরাদ্দ রাখা যেতেই পারে। তাই বাবার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে প্রতি বছর জুন মাসের তৃতীয় রবিবার বিশ্বব্যাপী পালন করা হয় বিশ্ব বাবা দিবস।
আজ রবিবার, ১৮ জুন ২০২৩। বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে বাবা দিবস। এ দিবসের ধারণাটি পশ্চিমা বিশ্বের হলেও, দিবসটি এখন বাংলাদেশসহ প্রায় সব দেশেই উদযাপন করা হয়। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৯০৮ সালের ৫ জুলাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভার্জিনিয়ার ফেয়ারমন্ট এলাকার এক গির্জায় ‘বাবা দিবস’ প্রথম পালিত হয়। পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে বা যেকোনো সমস্যায় বাবা সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে ভূমিকা পালন করেন। তার মধ্যে কোনো ক্লান্তি বা অবসাদ দেখা যায় না। বাবার কাছে কোনো কিছু চাইলে তিনি কখনও না করেন না। পরিবারে বাবার অসীম স্নেহ ও ভালোবাসায় সন্তান বেড়ে ওঠে। তার ধৈর্য ও পরিশ্রম দেখে মনে হয় তিনি এক জড়ো পদার্থ। সন্তানের কাছ থেকে কষ্ট পেলেও তিনি রাগ কিংবা অভিমান করেন না।
সন্তান যখন উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণে, কাজে কিংবা চাকরির সুবাদে বাড়ির বাইরে যায় তখন বাবার মন বাধা দেয়। তার পরও বৃহৎ স্বার্থে মেনে নিতে বাধ্য হন। সন্তানের লেখাপড়ার খরচ জোগানে অনেক বাবা খুব কষ্ট করেন। নতুন চাকরি বা কাজ পেলে সন্তানের কাছে বাবার অর্থপ্রাপ্তির চিন্তা থাকে না। ভালো কিছু করলে গর্বে বাবার বুক ভরে। তিনি যেন সন্তানের জন্য এক বটবৃক্ষ। তবু আধুনিক ও ডিজিটাল সমাজে আজও সংবাদমাধ্যমে দেখা যায় বৃদ্ধ বাবাকে ফেলে পালিয়েছেন নিজ সন্তান। এমন খবর নিশ্চয় দুঃখজনক। সন্তানের শত দুঃখ-কষ্টে বাবা কিন্তু ফেলে যায় না। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে বাবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক যেন ফিকে হতে চলেছে।
‘পিতা স্বর্গ, পিতা ধর্ম, পিতাহী পরমং তপঃ, পিতরী প্রিতিমাপন্নে প্রিয়ন্তে সর্বদেবতা’Ñ সনাতন ধর্মাবলম্বীরা এই মন্ত্র জপে বাবাকে দেবতাজ্ঞান করে শ্রদ্ধা করেন। কুরআনে পিতা-মাতার সম্মান প্রসঙ্গে বলা আছে, তাদের সঙ্গে ‘উহ!’ শব্দ পর্যন্ত করো না। পিতা সন্তানের মাথার ওপর বটবৃক্ষের ছায়ার মতো, যার স্নেহ অবারিত ধারায় শুধু ঝরতেই থাকে। শিশুসন্তানের কচি হাতটি যখন বাবার হাতটি আঁকড়ে ধরে হাঁটতে থাকে তখন তাদের মধ্যে অটুট সম্পর্কের বন্ধন সৃষ্টি হয়।
একটি ব্যাপার লক্ষণীয়, বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মা-বাবার সঙ্গে একটা দূরত্ব সৃষ্টি হতে থাকে। আমরা ছেলেমেয়েরা মা-বাবাকে প্রচণ্ড ভালোবাসলেও তা খুব সহজে প্রকাশ করি না। মায়ের সঙ্গে যদিওবা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকে, কিন্তু বাবার সঙ্গে বন্ধুত্ব খুব কম সন্তানেরই হয়ে ওঠে। কেন এই দূরত্ব থাকবে সবচেয়ে কাছের মানুষটির সঙ্গে? আসুন সব জড়তা কাটিয়ে একটি দিন না হয় বাবার আনন্দের জন্য কিছু করি। তাই আজ পৃথিবীর সব বাবার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। বাবার সঙ্গে প্রতিদিনই যেন ভালোভাবে কাটে, তাদের মতামত যেন পরিবারে প্রাধান্য দিতে পারি এবং একই সঙ্গে কাম্য তাদের জন্য নিরাপদ হোক পরিবার ও দেশ। পরিবারে সবচেয়ে ভালোটা যেন হয় বাবার জন্য। সুখে-দুঃখে সর্বদা বাবার প্রতি আমাদের আচরণ যেন কোমল হয়।