× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

বিআরটিসির বাস

কেনাকাটার প্রশ্নবিদ্ধ আয়োজন

মামুন রশীদ

প্রকাশ : ১৬ জুন ২০২৩ ১৩:৪৩ পিএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

আমরা রয়েছি ‘উন্নয়নের দীর্ঘ অগ্রযাত্রা পেরিয়ে স্মার্ট বাংলাদেশের অভিমুখে'। এই অভিমুখে পৌঁছাতে প্রয়োজন যোগাযোগব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও প্রয়োজনে এ খাতের উন্নয়ন জরুরি। সেই বিবেচনায় রাষ্ট্রায়ত্ত পরিবহন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনও (বিআরটিসি) স্মার্ট গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য তারা ভারত থেকে ‘সুইচ ইআইভি ২২' মডেলের বিদ্যুচ্চালিত একশ দ্বিতল বাস কেনার কথা ভেবেছে। শুধু ভাবনাতেই থেমে নেই পরিকল্পনা, ভাবনা বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পনা কমিশনে একটি প্রকল্প প্রস্তাবও পাঠিয়েছে তারা। প্রস্তাব অনুযায়ী প্রতিটি বাসের দাম ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। বাসগুলো কেনা হবে ভারতের অশোক লেল্যান্ডের সাবসিডিয়ারি 'সুইচ মোবিলিটি কোম্পানি' থেকে। সুষ্ঠু গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে নতুন বাস কেনার এই প্রস্তাবটি উত্তম। ভারত থেকে যেসব বাস কেনার প্রস্তাব হয়েছে, সেগুলোও অত্যাধুনিক। কিছু প্রশ্ন উঠেছে বাসের দাম নিয়ে। প্রশ্নটি তুলেছে খোদ পরিকল্পনা কমিশন। আর তা নিয়ে হাটে হাঁড়ি ভেঙেছে সংবাদমাধ্যম।

বাসগুলোর দাম কোনোভাবেই তিন কোটি টাকা নয়। এক্ষেত্রে প্রকৃত দাম আড়াল করার অভিযোগ উঠেছে। বলা হচ্ছে, প্রকৃত দামের চেয়ে অনেক বাড়িয়ে দাম দেখানো হয়েছে। সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, টেনেটুনে এসব বাসের দাম হতে পারে আড়াই কোটি টাকা। অথচ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলরা সেগুলো কিনতে চাইছেন সাড়ে তিন কোটি টাকায়। ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, ‘সুইচ ইআইভি ২২ মডেলের প্রতি ইউনিট দ্বিতল বাসের দাম ২ কোটি রুপির কাছাকাছি। বিনিময় মুদ্রার হার অনুযায়ী এর দাম হয় প্রায় আড়াই কোটি টাকা। এ কারণেই 'প্রকল্প যাচাই কমিটি' অস্পষ্টতা রয়েছে বলে প্রকল্প প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের প্রকল্প যাচাই কমিটি প্রস্তাবিত বাসগুলোর জন্য কোনো রেট শিডিউল না থাকায় কীসের ভিত্তিতে বাসগুলোর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে, তাও জানতে চেয়েছে।

সম্প্রতি প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ, দেশের গণপরিবহনব্যবস্থাকে আরও আধুনিক করতে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে চলাচলের জন্য দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ৩৪০টি সিএনজিচালিত এসি বাস কেনার প্রস্তাব দিয়েছে বিআরটিসি। এও উত্তম প্রস্তাব। কিন্তু এখানেও গোল বেধেছে এর পরবর্তী ধাপ নিয়ে। অত্যাধুনিক এসব বাস পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়টি হাতেকলমে শিখতে ১৩৮ কর্মকর্তাকে বিদেশ পাঠানোর ইচ্ছা ব্যক্ত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৮ কোটি টাকা। প্রতি কর্মকর্তার পেছনে ব্যয় হবে ৫ লাখ ২৯ হাজার টাকা। আর যারা বিদেশে যেতে পারবেন না, যাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা দেশেই করা হবে, তেমন ২২৪ কর্মকর্তার পেছনে ব্যয় হবে ৭২ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে দেশে- বিদেশে ৩৬২ জনের প্রশিক্ষণ বাবদ ৮ কোটি টাকা ব্যয়ের হিসাব পাকা !

অর্থনৈতিক সক্ষমতা অনুযায়ী সকল ক্ষেত্রেই উন্নতির যৌক্তিকতা রয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে প্রেক্ষাপটও বিবেচনায় আনতে হবে। ঢাকা এমনিতেই যানজটের নগরী হিসেবে 'খ্যাত'। ঘণ্টার পর ঘণ্টা একটি পরিবহনকে রাস্তায় বসে থাকতে হয়। নির্ধারিত গন্তব্যে কখন পৌঁছাবে, তা অনিশ্চিত। সেখানে বিদ্যুচ্চালিত বাস কেনার যৌক্তিকতা কতটুকু? বাসগুলোর জন্য চার্জিং পয়েন্ট নির্ধারণ হয়েছে, কিন্তু তাও কি প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট? গাড়িগুলো চলার পথে চার্জ ফুরিয়ে গেলে, পুনরায় সচল হতে সেই চার্জিং পয়েন্ট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারবে? আরও একটি বিষয়ের প্রতিও দৃষ্টিপাত করা জরুরি। সুইচ মোবিলিটি থেকে যে বাসগুলো কেনা হবে, এগুলোর আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছে ১০ বছর। এসব বাস প্রতিদিন গড়ে দুইশ কিলোমিটার দূরত্ব পাড়ি দেবে। প্রতি কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে বিদ্যুৎ খরচ হবে ২ দশমিক ৩৫ কিলোওয়াট। আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং চাহিদার মাঝে যে ফারাক, সেক্ষেত্রেও বৈদ্যুতিক বাসের প্রয়োজনীয়তা কতটুকু? সাম্প্রতিক বিদ্যুৎ সংকটে দেশের আনাচে-কানাচে চলাচলকারী ইজিবাইকের বিদ্যুৎ ব্যবহার নিয়েও কথা উঠতে শুরু হয়েছে। এর মাঝে সরকারের কোরিয়া থেকে ৩৪০টি বৈদ্যুতিক এসি বাস কেনার পরিকল্পনাও নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

বর্তমান সরকার দায়িত্ব নিয়ে বিআরটিসিকে সত্যিকার অর্থে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়। এর অংশ হিসেবে ২০১০ সালে চীন থেকে কেনা হয় ২৭৫টি একতলা সিএনজিচালিত বাস। ২০১১ সালে কোরিয়া থেকে কেনা হয় ১৫৫টি নন-এসি ও ১০০টি এসি একতলা সিএনজিচালিত বাস। আর ভারত থেকে ২০১২ সালে ২৯০টি দ্বিতল এবং ২০১৩ সালে ৫০টি আর্টিকুলেটেড ও ৮৮টি এসি বাস যুক্ত হয় বিআরটিসির বহরে। কিন্তু এর সুফল দৃশ্যমান হয়নি। বরং বাসগুলো যেন হয়ে উঠছে গলার কাঁটা। ডিপোগুলো হয়ে উঠেছে এসব বাসের ডাম্পিং স্টেশন। ২০১৩ সালে ঢাকায় জোড়া লাগানো (আর্টিকুলেটেড) ৫০টি বাস নামানো হলেও সেগুলোর কয়টিকে আজ রাস্তায় দেখা যায়? এমনকি সুইডেনের বিখ্যাত ভলভো কোম্পানির দ্বিতল বাসও কয়েক বছরের মধ্যেই পরিণত হয়েছিল লোহালক্কড়ে! বেসরকারি মালিকানাধীন বাসগুলো যেখানে গড়ে ২০-২৫ বছর রাস্তায় থাকে, সেখানে বিআরটিসির বাসগুলো যে দেশ থেকেই কেনা হোক না কেন, তারা তাদের অর্থনৈতিক বয়সসীমার অনেক আগেই কেন লোহালক্কড়ে পরিণত হয়? অনেক অচল বাস ডিপোগুলোতে পড়ে আছে। সেগুলো সচল করার উদ্যোগ নেই। উদ্যোগ শুধুই যেন নতুন বাস কেনার দিকে!

প্রবাদ আছে, দূরত্বের মাপকাঠিতে ঘোড়ার শক্তিমত্তা যাচাই হয়; আর সময়ের মাপকাঠিতে যাচাই হয় ব্যক্তির নৈতিক চরিত্রের। বিআরটিসির ক্ষেত্রে প্রবাদটির প্রাসঙ্গিকতা মেনে নিয়েই বলতে হয়- কেনাকাটা নিয়ে আমাদের এখানে নয়ছয়ের বহু উদাহরণ রয়েছে। এমনকি পুকুর চুরির উদাহরণও রয়েছে। এ নিয়ে সংবাদমাধ্যমে মাঝে মাঝে হইচই হয়। কিন্তু ঘটনার শেষটা আর জানা হয় না। এক্ষেত্রেও হয়তো আমরা পরবর্তী ধাপ জানার সুযোগ পাব না। কিন্তু এই যে প্রতিনিয়ত এ ধরনের অভিযোগের খবর উঠে আসছে সংবাদমাধ্যমে এর সুরাহা হওয়া জরুরি। যেকোনো প্রকল্প প্রস্তাবের আগে দরকার এর সম্ভাব্যতা যাচাই করা। সরকারি মাল দরিয়ামে ঢাল' নীতি থেকে বেরিয়ে আসাও জরুরি। বিআরটিসির অনিয়ম দুর্নীতি নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের একাধিকবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন সময়ে অনিয়ম- দুর্নীতির প্রসঙ্গ উঠে এসেছে সংবাদমাধ্যমেও। আশার কথা, অসাড় এবং প্রকল্পের ব্যয়বাহুল্য নিয়ে প্রশ্ন তুলছে পরিকল্পনা কমিশনও। তবে শুধু প্রশ্ন তোলাই নয়, সেবা খাতের এই প্রতিষ্ঠানটিতে যদি প্রকৃতই অন্যায়, অনৈতিক এবং স্বেচ্ছাচারিতা জেকে থাকে, তবে সর্বাগ্রে এর নিরসন করাও জরুরি।


  • কবি ও সাংবাদিক
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা