× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

কৃষি খাত

অগ্রভাগে থাকুক আমাদের প্রেক্ষাপট, দাতাদের পরামর্শ নয়

এ এম এম শওকত আলী

প্রকাশ : ১৫ জুন ২০২৩ ০৩:৩২ এএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি খাতে বাজেট বরাদ্দ আগামী অর্থবছরে টাকার অঙ্কে বাড়লেও খাতওয়ারি বরাদ্দের নিরিখে এবার এই খাতে বরাদ্দ শতকরা দশমিক ৩৩ ভাগ কমেছে। আগামী অর্থবছরে কৃষি খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩৫ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের শতকরা ৪ দশমিক ৬৪ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে এই বরাদ্দ ছিল ৩৩ হাজার ৬৯৮ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ। যদিও বাজেট প্রস্তাবের আগে অর্থ মন্ত্রণালয় বলে আসছিল মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে বিদ্যুৎ, কৃষি ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি বাড়ানো হবে। কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেট তার প্রতিফলন ঘটায়নি। ইতোমধ্যে অর্থনীতিবিদরা কৃষি খাতে বরাদ্দ কমানোর বিষয়ে তাদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। বৈশ্বিক সংকটের এই সময়ে কৃষি খাতে উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে বরাবরই জোর দেওয়া হচ্ছে। কৃষি খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার এবং উৎপাদন সম্প্রসারণের জন্য বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির গুরুত্ব অপরিসীম। কীভাবে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি এবং কৃষি খাতের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি বাড়ানো যায় তা সরকারকে ভাবতে হবে। এমনকি সে ভাবনার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। অথচ প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য নতুন কোনো পরিকল্পনার কথা বলেননি। এ জন্যই মূলত বাজেটে কৃষির বরাদ্দ কমানোর বিষয়টি নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অর্থনীতিকে সুসংহত রাখতে হলে কৃষি খাতকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। কৃষি উৎপাদনের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর সম্ভাবনা বেশি। এক্ষেত্রে সরকারকে একটি সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নির্ধারণ করতে হবে আমাদের প্রেক্ষাপটে, দাতাদের পরামর্শে নয়। ইতোমধ্যে অর্থনীতিবিদরা এ বিষয়ে তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন। তাদের মতামত কিংবা পর্যালোচনা করে কৃষি খাতকে শক্তিশালী করতে হবে।

কৃষি খাতে খাদ্যশস্যের কথা বিবেচনা করলে বোরো ধানের ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু বোরো ধানের মৌসুম মার্চের পর শেষ হয়ে যায়। বোরো ধানের উৎপাদনের মৌসুমের ক্ষেত্রে সরকারের নিয়ন্ত্রণ নেই। তবে উৎপাদন প্রক্রিয়া নির্বিঘ্নভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। চলতি বছরে বোরোর মৌসুম শেষ। আগামী বছর আউশ, আমন এবং বোরো উৎপাদন প্রক্রিয়া নির্বিঘ্ন রাখার জন্য পর্যাপ্ত সারের জোগান, সেচ ব্যবস্থা, সংরক্ষণ, বিপণন, বাজার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ, উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণের বিকল্প নেই। বরাদ্দের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য এখন থেকেই সরকারকে পরিকল্পনা শুরু করতে হবে।

বিদ্যমান বৈশ্বিক সংকটে মূল্যস্ফীতি একটি বড় সমস্যা। পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে ইতোমধ্যে অনেক দেশ পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। কৃষি উৎপাদনে বরাদ্দ বাড়ানোর পাশাপাশি উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োগে মনোযোগী হয়ে উঠছে অনেক দেশ। তা ছাড়া দেশে মূল্যস্ফীতি ও খাদ্যশস্যের ঘাটতি পূরণে প্রায়ই আমাদের আমদানি করতে হয়। অথচ ডলার সংকটের কারণে অনেক সময় খাদ্যশস্য আমদানি করা যায় না। এ সমস্যার একমাত্র সমাধান উৎপাদন বাড়ানো। কৃষক যাতে সুষ্ঠুভাবে উৎপাদন চালু রাখতে পারে, সে জন্য তাকে পর্যাপ্ত সুযোগসুবিধা ও কৃষিপণ্য কিংবা উপকরণে ভর্তুকি দিতে হবে। অথচ বাজেটে বরাদ্দ কমানো হয়েছে। খাদ্য সংকট ও বিশ্ববাজারের কথা বিবেচনায় রেখে বরাদ্দ বাড়ানোর কথা। বাজারে পণ্যদ্রব্যের দাম কৃষি খাতের ওপরও পড়ে। কৃষি উৎপাদনের কাঁচামালেরও দাম বেড়েছে। সঙ্গত কারণেই কৃষি খাতে বরাদ্দ কমানোর প্রস্তাবনা গ্রহণযোগ্য নয়। কিন্তু এই প্রস্তাবই চূড়ান্ত নয়। যদি বাজেটের প্রস্তাব পাস হয়, তার পরও সম্পূরক বাজেট ও সংশোধিত বাজেটে ঘাটতির জায়গাগুলো পূরণ করে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে। বিশেষত অন্তর্বর্তীকালীন বাজেটে কৃষি খাতে বাড়তি বরাদ্দ নিশ্চিত করা যেতে পারে।

কৃষি খাতে বরাদ্দ সুষ্ঠুভাবে বণ্টনের ক্ষেত্রে আমাদের তুলনামূলক ও পরিসংখ্যানের দিকে একটু নজর দিতে হবে। গত অর্থবছরে কৃষি খাতে বরাদ্দ কত ছিল এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রস্তাবিত বাজেটের পার্থক্য বিবেচনা করে বরাদ্দের যৌক্তিকতা বিচার করা সম্ভব নয়। আমাদের দেখতে হবে, গত অর্থবছরে কৃষি খাতে বরাদ্দকৃত অর্থ সম্পূর্ণ ব্যয় করা গেছে কি-না। শুধু ব্যয়ের বিষয়টি দেখলেই হবে না- কৃষি খাতে বরাদ্দ যথাযথভাবে ব্যবহার করা হয়েছে কি না অথবা কৃষক সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগের সুবিধাভোগী হয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে। এই ধারাবাহিকতার মাধ্যমে আগামী অর্থবছরের পরিকল্পনা সাজাতে হবে। সরকারকে এ বিষয়ে এখন থেকেই ভাবতে হবে এবং পূর্ব অভিজ্ঞতা থেকে সামনের পরিকল্পনা সাজাতে হবে। কৃষি উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি, কৃষকের সুযোগসুবিধা এবং উৎপাদন ব্যবস্থার জন্য পথ সুগম করার কোনো বিকল্প নেই। সরকারকে দেখতে হবে কৃষি মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বরাদ্দকৃত অর্থ কতটা খরচ করতে পারছে। যদি দেখা যায়, বরাদ্দকৃত অর্থ তারা খরচ করতে পারছে না তাহলে প্রস্তাবিত বাজেটে বরাদ্দ কমানোর বিষয়টি অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু বিদ্যমান বাস্তবতা বলে কৃষি খাতে বরাদ্দ কমানোর কোনো অবকাশ নেই। চলতি বছর মূল্যস্ফীতি বেড়েছে। তাই আমাদের মুদ্রামানের কথাও বিবেচনায় রাখতে হবে। অর্থাৎ সরকারকে এসব বিষয় মাথায় রেখে কর্মপরিকল্পনা গড়ে নিতে হবে।

বিশ্ববাজারে চাল, গম, ভুট্টাসহ খাদ্যশস্যের দাম কমেছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দাম বাড়তে থাকে। পণ্যের দামের পাশাপাশি পরিবহন ভাড়া আর আমদানি খরচও বেড়ে যায়। এর প্রভাবে দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির হার বৃদ্ধি পেতে থাকে। তবে গত বছরের শেষদিক থেকে কিছু কিছু পণ্যের দাম কমতে শুরু করে। চলতি বছর আবার বিশ্ববাজারে খাদ্যশস্যের দাম বাড়তে শুরু করে। কিন্তু মে মাসেই খাদ্যশস্যের দাম কমে যায়। অথচ আমাদের অভ্যন্তরীণ বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। বরং খাদ্যশস্যের দাম বেড়েছে, যা জনজীবনে বাড়তি চাপ তৈরি করেছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে খাদ্যপণ্য এবং খাদ্যশস্যের দাম বাড়ছে আমদানি না হওয়ায়। বিশেষত বেসরকারি খাত আমদানি করতে পারছে না ডলার সংকটের কারণে। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার সরবরাহ করতে পারছে না এবং এলসি খোলার ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। আগে বেসরকারি খাত ইচ্ছেমতো আমদানি করতে পারত। এখন আর তাদের পক্ষে তেমনটি সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু সরকারকে অন্তত কৃষি খাতে বাড়তি গুরুত্ব দিতে হবে। কৃষি খাতে ডলারের চাহিদার দুটো দিক রয়েছে : খাদ্যপণ্য কিংবা খাদ্যশস্য আমদানি এবং উৎপাদনের সহায়ক উপকরণ কেনা। কৃষি উৎপাদনের মূল উপকরণ সার। সরকার অবশ্য সারের জোগান দিচ্ছে এবং এই জোগানের ধারাবাহিকতা যেন থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বব্যাপী সম্ভাব্য খাদ্য সংকটের কথা বারবার আন্তর্জাতিক মহল থেকে বলা হচ্ছে। বিষয়টি আমাদেরও আমলে রাখতে হবে।

কৃষি খাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ। এসব প্রতিষ্ঠান যেন এলসি খুলতে কোনো প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি না হয় তা নিশ্চিত করতে হবে। যে পণ্যের চাহিদা রয়েছে সে পণ্য আমদানি করা যেতেই পারে। অনেকে তর্ক করেন, আমাদের বিদেশ থেকে আপেল আমদানি করতে হয়। ডলার সংকটের সময় আপেল আমদানি বন্ধ করলে ভালো। কারণ ক'দিন আপেল না খেলে ক্ষতিবৃদ্ধি হবে না। কিন্তু বিষয়টি আপেল খাওয়ার উপকারিতার নয়। দেশে আপেলের চাহিদা আছে তাই বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তা আমদানি করে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকেও ব্যবসার সুযোগ করে দিতে হবে। কারণ কৃষি খাত শুধু খাদ্যশস্যনির্ভর নয়। কৃষি খাতে ফল, শাকসবজি ইত্যাদিও রয়েছে। বলা হচ্ছে, প্রস্তাবিত বাজেটে ছাদকৃষির মাধ্যমে উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে পরিকল্পনা রয়েছে। ছাদকৃষির মাধ্যমে শহরে কারও গৃহস্থালি প্রয়োজন হয়তো মিটবে। কিন্তু জাতীয় পরিসরে ছাদকৃষি উৎপাদন ব্যবস্থায় বড় অবদান রাখতে পারবে না। খাদ্য সংকট চোখ রাঙাচ্ছে। এই সময় সামনে উৎপাদন বাড়ানোই একমাত্র পথ। দাতাদের পরামর্শ নয়, সব কিছু বিবেচিত হোক আমাদের প্রেক্ষাপটে। উৎপাদন বাড়াতে হলে এর জন্য বাড়তি জোগানও প্রয়োজন। এই বাস্তবতা অস্বীকার করার মানে কি কৃষি খাতের উন্নতিকল্পে সব আশাই দুরাশার নামান্তর নয়! করোনাকালে কৃষি খাতের ক্ষয়ক্ষতিসহ নানারকম অভিঘাত লাগলেও এ খাতই বিদ্যমান সংকট মোকাবিলায় ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল। কৃষিনির্ভর অর্থনীতির এই দেশে কৃষি খাতের গুরুত্ব উপেক্ষার মোটেও অবকাশ নেই।

  • সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা