× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সিটি নির্বাচন

কঠোর প্রতিকার ভবিষ্যতের প্রয়োজনেই জরুরি

মুনীরা খান

প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৩ ০১:০৮ এএম

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

অলঙ্করন : জয়ন্ত জন

১২ জুন অনুষ্ঠিত বরিশাল ও খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে আয়োজিত হয়েছে। এই দুই সিটি নির্বাচনের ফলাফলও প্রত্যাশিতই ছিল। কারণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন মূলত স্থানীয় সরকার নির্বাচন প্রক্রিয়া। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রক্রিয়ার সঙ্গে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পার্থক্য রয়েছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আমাদের আগ্রহ অনেক থাকলেও এই ধরনের নির্বাচনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। তাই এ ধরনের নির্বাচনের পরিবেশ একটু অন্যরকম। এই নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোটারের চাওয়া-পাওয়া কিংবা চাহিদার জায়গাও ভিন্ন। আগেও প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর একটি লেখায় বলেছি, স্থানীয় উন্নয়নের জন্যই মূলত সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হয়। সিটি করপোরেশনের কাজ অনেক বিস্তৃত। কবরস্থান-শ্মশানের রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণ, মশা নিধন, সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন থেকে শুরু করে জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তাও সিটি করপোরেশনের কাজের আওতায়। অর্থাৎ নগরব্যবস্থায় মানুষের সব সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সিটি করপোরেশন ও কাউন্সিলরদের ওপর বর্তায়। তাই স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা বেশি গুরুত্ব পায়। শুধু তা-ই নয়, ভোটাররা যেন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন তা-ও নিশ্চিত করতে হয় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে।

ভোটারাধিকার এক ধরনের মানবাধিকার। রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্র হবে গণতন্ত্র, যেখানে মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা থাকবে। এমনকি এ কথা স্পষ্ট লেখা আছে, ‘প্রশাসনের সব পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধির মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হইবে।’ সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাটা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ অংশগ্রহণের মাধ্যমে তাদের চাহিদা, উন্নয়ন, অগ্রগতি, স্থানীয় নানা সমস্যার সমাধান ইত্যাদি বিষয়ে সুষ্ঠু করতে পারেÑ এমন প্রতিনিধি নির্বাচন করা সম্ভব হয়। সিটি করপোরেশন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ হলে মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। আর যদি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশন সেই সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে ভোটারদের অধিকার সংরক্ষিত হবে। এসব বিষয় বিবেচনায়, খুলনা ও বরিশাল সিটি নির্বাচন অন্যরকম। এ দুই নির্বাচনের প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টিও জনগণের পছন্দের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল বলেই মনে হয়েছে। নির্বাচনের আগেও মন্তব্য করেছিলাম, নির্বাচনে মনোনয়নের ক্ষেত্রে দূরদর্শিতার পরিচয় দিতে পারলে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব। তাই এই দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফল প্রত্যাশিতই ছিল।

অনুষ্ঠিত দুই সিটির নির্বাচনে ভোটার অংশগ্রহণও বেড়েছে। আমরা দেখেছি, অতীতের নির্বাচনের তুলনায় এই দুই নির্বাচনে ৪২ থেকে ৫০ শতাংশ ভোটার অংশগ্রহণ বেড়েছে। তা ছাড়া আবহাওয়া প্রতিকূল না হওয়ায় ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে পৌঁছুতে পেরেছেন। সব মিলিয়ে একটি ভালো নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হয়েছে। যদিও বরিশালে দু-একটা ছোটখাটো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটার খবর পাওয়া গেছে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী সৈয়দ ফয়জুল করিমের ওপর হামলার ঘটনায় তিনিসহ দলের বেশকিছু নেতাকর্মী আহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কয়েক শ নেতাকর্মী বিক্ষোভ শুরু করেন। এ ছাড়া দলটির পক্ষ থেকে বেশ কিছু অভিযোগ তোলা হয়েছে। অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা-মারধর-হয়রানি, পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়া, কেন্দ্র থেকে এজেন্টদের বের করে দেওয়া, ভোটারদের বাধা দেওয়া, জোরপূর্বক ভোট। কিন্তু প্রার্থী নিজেই স্বীকার করেছেন, ভোট দিতে কাউকে বাধা দেওয়া হয়নি। অর্থাৎ বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা বাদে এই দুই সিটির নির্বাচন সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। ভোটকেন্দ্রগুলোতে নারী ও বয়স্কদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ সারি দেখতে পাওয়া গেছে। এমনকি গণমাধ্যম কিংবা সংবাদমাধ্যমের উপস্থিতিতেও কাউকে ভোট দেওয়ার সময় বাঁধা দেওয়া হচ্ছেÑ এমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

প্রতিটি দেশের মানুষই ভোট দেওয়ার নিশ্চয়তা চান। অর্থাৎ তারা যখন ভোট দিচ্ছেন তখন তা যেন নিশ্চিতভাবে ব্যালটে পৌঁছায়, তার নিশ্চয়তা কামনা করেন। এমন প্রত্যাশা আমাদের দেশের মানুষের মধ্যেও রয়েছে। সেদিক থেকে আমাদের দেশের মানুষ এখনও ইভিএমে ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত নন। নির্বিঘ্ন পরিবেশে ভোট দেওয়ার পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য ভোটারের ভোগান্তি দূর করার বিষয়েও ভাবতে হবে। সেদিক থেকে ইভিএমে ভোটগ্রহণ আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে মানানসই নয়। আমরা দেখেছি, দুই সিটিতে ভোটগ্রহণের সময় ইভিএমে ভোট দিতে অনেকের দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়েছে। কোনো কোনো কেন্দ্রে আধঘণ্টাও অপেক্ষা করতে হয়েছে। অনেকে ইভিএম কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা বুঝতে পারেননি। কারণ ইভিএম ব্যবহারের জন্য ভোটারদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ বা শিক্ষা দেওয়া হয়নি। ইভিএম নিয়ে তরুণদের মধ্যে আগ্রহ থাকলেও অনেকের মধ্যেই নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। বিশেষত, বরিশালের বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে ভোটাররা ইভিএম ব্যবহার করতে না পারায় ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত কর্মকর্তাদের বারবার বুথে গিয়ে তাদের সাহায্য করতে হয়েছে। এমনকি একটি কেন্দ্রে একজন ভোটার ইভিএম মেশিনে জোরে চাপ দেওয়ায় মেশিনটি নষ্ট হয়ে যায়। তখন একজন টেকনিশিয়ান এসে নতুন একটি ইভিএম মেশিন স্থাপন করে যান। তারপর আবার ভোটগ্রহণ শুরু হয়। আমাদের দেশের মানুষ এখনও ইভিএমে ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত নন। সার্বিক দিক বিবেচনায় নির্বাচন কমিশনের উচিত ইভিএম মেশিনে ভোটগ্রহণের বিষয়ে তাদের পুনর্বিবেচনা করা। যদিও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যে শিগগিরই ইভিএম ব্যবহার বন্ধের কোনো আশ্বাস পাওয়া যায়নি।

বিভিন্ন মহলে একটি প্রশ্ন দেখা যাচ্ছে, দেশের প্রধান বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি বলে নির্বাচন কমিশনকে খুব একটা চাপের মুখে পড়তে হয়নি। বিষয়টি আপাতত আমাদের ভাবনার বিষয় নয়। কারণ প্রথমেই বলেছি, স্থানীয় নির্বাচনের ধরন এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ধরন একেবারেই আলাদা। আর স্থানীয় নির্বাচনে প্রার্থীর অংশগ্রহণ থাকলে সবার মধ্যেই প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে। অনুষ্ঠিত দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাই হয়েছে। এই দুই নির্বাচনে প্রার্থী কম ছিল না। তাই ভোটারদের সামনেও সুযোগ ছিল প্রার্থী বেছে নেওয়ার। নির্বাচন কমিশন গত বছর ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, পূর্ববর্তীদের ধারা থেকে বের হয়ে আসবেন তারা। নির্বাচন কমিশন নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। এর আগেও গাজীপুর সিটি নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে আমাদের মনে হয়নি অসময়ে নির্বাচন আয়োজন করা হচ্ছে। এবারও একটি সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে তারা ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা দেখাতে পেরেছে।

তবে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল দেখে নির্বাচন কমিশনের আত্মতুষ্টির কোনো অবকাশ নেই। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। মনে রাখতে হবে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন দলের স্বার্থে অনুষ্ঠিত হয় আর স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয় প্রার্থীর স্বার্থের ভিত্তিতে। তাই দুটির ব্যবস্থাপনা ও নির্বাচনী পরিবেশ আলাদা। নির্বাচন কমিশনকে এ বিষয়টি ভাবতে হবে এবং এজন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিতে হবে আগে থেকেই। সর্বোপরি, গাজীপুরের পর খুলনা ও বরিশালে সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজিত হয়েছে। কিন্তু বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কিছু অভিযোগও এসেছে। এই অভিযোগগুলো নির্বাচন কমিশন যেন ভালোভাবে খতিয়ে দেখে। নির্বাচন কমিশনার যদিও বলেছেন, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। তবে মুখে বললে হবে না। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে যেকোনো অভিযোগকে গুরুত্ব দেওয়ার কাজটি করা না গেলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের পথও কিছুটা বিঘ্নিত হয়। সবমিলিয়ে নির্বাচন কমিশনের সামনে এখনও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। তাদের ঘাটতির জায়গাগুলো স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে শনাক্ত করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে হবে। আমার প্রত্যাশা, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা সমন্বিত পদক্ষেপের মাধ্যমে বিদ্যমান সংকট ও সমস্যাগুলো দূর করবে এবং সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে। আমরা শুধু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজন করে তুষ্ট হতে পারব না। সবার অংশগ্রহণে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে হবে।


  • দেশ-বিদেশে নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও প্রেসিডেন্ট, ফেমা
শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা