× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সুদান

যুদ্ধ কারও কাঙ্ক্ষিত নয়

ইয়াসির আরমান

প্রকাশ : ১৪ জুন ২০২৩ ০১:০০ এএম

অলঙ্করন : প্রবা

অলঙ্করন : প্রবা

সুদান ধীরে-ধীরে নিজেদের পুনর্গঠিত করছিল। এমন সময়ে এক ভয়াবহ যুদ্ধ দেশটিকে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। ছয় বছর ধরে গোপনে পুঞ্জীভূত ন্যাশনাল কংগ্রেস পার্টি ও ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ এবার দুপুরের তপ্ত সূর্যের মতো সুদানবাসীর মাথার ওপর জ্বলজ্বল করছে। এই যুদ্ধ অনেক কিছু বদলে দিয়েছে। অতীতে কী ঘটেছিল এবং সামনে কী ঘটতে চলেছে, তার সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছে। ১৯৫৬ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর দেশটি অনেক বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয়েছে। কিন্তু অতীতে বিপর্যয় যেমনই হোক না কেন তারা দেশ পুনর্গঠনের আশা হারায়নি। বরং প্রতিবারই বৈষম্যহীন, শান্তিপূর্ণ ও উন্নত একটি রাষ্ট্র গড়ার প্রত্যয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছ।

এপ্রিলের যুদ্ধ সুদানের গ্রামীণ অঞ্চল টরিটে ১৯৫৫ সালে সংঘটিত যুদ্ধের কথাই মনে করিয়ে দেয়। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় সুদানের বর্তমান অবস্থা কেন এমন। অতীতে দক্ষিণ সুদানে গৃহযুদ্ধ সংগঠিত করতে ব্যর্থ হওয়া, দারফুরে গণহত্যা এবং ক্ষমতার যুদ্ধ খার্তুম পর্যন্ত পৌঁছেছে। সুদানের সচেতন মহল বহু আগেই এমন কিছুর আশঙ্কা করছিল। এই মুহূর্তে সুদানে যে ভয়াবহ অবস্থা চলছে, তা দেখে হতাশ না হয়ে বরং আবার পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এপ্রিলে অসংখ্য মানুষের তাজা রক্তে ভেসেছে সুদান। এমন অমানবিক সংঘর্ষ মেনে নেওয়ার নয়। কিন্তু সংকটের প্রশ্নে সুদানের মানুষের দিশেহারা ভাব থেকে বের হয়ে আসতে হবে। মূলত রাষ্ট্রের মানুষের মধ্যে আস্থার জায়গাটি আবার পুনর্গঠন করতে হবে। এই যুদ্ধ আমাদের সামনে অনেক প্রশ্ন দাঁড় করিয়েছে। কিন্তু সুদানের মানুষ এই যুদ্ধের সময় নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার যে প্রত্যয় দেখিয়েছে তা কোনো অংশেই কম নয়।

সুদানে সংকটাবস্থার পর আন্তর্জাতিক মহল সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু এই সাহায্যের সামান্যই দেশটিতে পৌঁছেছে। এই সময় সুদানের মানুষ একে অপরের সাহায্যে এগিয়ে না এলে সম্ভবত মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ত। সুদানের মানুষ মানবিকতার পরিচয় দিয়েছে। কারণ অধিকাংশ মানুষই এই যুদ্ধ থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে। ধর্মান্ধতার নামে কিংবা ভৌগোলিক বিভক্তির দোহাই তাদের যুদ্ধে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করাতে পারেনি।

তারা পিছিয়ে আসায় এই যুদ্ধ গতি পায়নি। যেকোনো যুদ্ধের ক্ষেত্রে একটি রাষ্ট্রের মানুষের এমন মনোভাব ইতিবাচক। এ কথা সত্য, সুদানে এই যুদ্ধ আচমকা সংঘটিত হয়নি। সামরিক বাহিনীর মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছায় এমন অবস্থা হয়েছে। সামরিক বাহিনীর মূল উদ্দেশ্য ছিল সিভিলিয়ান ফোর্সকে দুর্বল করে দেওয়া। এই প্রক্রিয়া এখনও সুদানে চলমান।

প্রশ্ন হচ্ছে, আরএসএফের কারণে সুদানে যে ধ্বংসযজ্ঞ পরিচালিত হয়েছে, সে বিষয়ে কি আমরা চুপ থাকব? আপাতত এই প্রশ্নের চেয়েও বড় বিষয় হলো এই যুদ্ধ পুরোপুরি থামা দরকার। খার্তুম থেকে যুদ্ধ যেন কোনোভাবেই দারফুরে পৌঁছুতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে। কারণ কিছু কিছু ক্ষেত্রে দারফুর অনেক নাজুক অবস্থায় রয়েছে। এই নাজুক অবস্থা বিবেচনায় সেখানে যুদ্ধাবস্থা আরও খারাপ পরিণতি ডেকে আনবে। এনসিপি সব সময়ই ধর্মকে ব্যবহার করে প্রোপাগান্ডা তৈরি করেছে। অন্যান্য দলও যে পদক্ষেপ নিচ্ছে তা কোনো মতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এফএসসি এবং অন্যান্য দল গণতন্ত্র বা গণতন্ত্রের আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে যথেষ্ট নয়। এই মুহূর্তে জনগণের একটি সরকার প্রয়োজন এবং এসএএফ ও আরএসএফকে ব্যারাকে ফিরে যেতে হবে। অতীতে ঘানা, দক্ষিণ আফ্রিকা, সেনেগাল, বতসোয়ানা এবং কেনিয়া সামরিক ও সিভিলিয়ান প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতামূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যুদ্ধাবস্থাকে দূর করতে পেরেছিল। এভাবে রাষ্ট্রের নিয়মিত বাহিনী তাদের ক্ষমতা হারায় না, বরং রাষ্ট্রের উন্নতি হয়। ডিসেম্বর রেভল্যুশন চলছে। তা বন্ধ করতে দেওয়া যাবে না।

সুদানে এই মুহূর্তে যারা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে এবং নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার বিষয়ে যথেষ্ট প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তাদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ডিসেম্বর রেভল্যুশনে যারা অংশ নিয়েছে তাদের সবাইকে নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে ভাবতে হবে। এই মুহূর্তে সুদানের সামনে একাধিক সমস্যা রয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে সামরিক, বেসামরিক, রাষ্ট্রের জনগণ এমনকি আন্দোলনকারীদের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এই সংকটাবস্থা থেকে বের হতে হলে আবার সবাইকে একত্রিত হতে হবে। বিশেষত নিজস্ব আদর্শের ভিত্তিতে যারা যুদ্ধ শুরু করেছে, তাদের ভাবতে হবে কীভাবে এই অবস্থা থেকে বের হওয়া যায়। বিপ্লব কখনও কোনো সামরিক বাহিনী করতে পারে না। বিপ্লব সংঘটিত হয় সাধারণ মানুষের মাধ্যমে। সামরিক বাহিনী কোনো অভ্যুত্থান চালিয়ে কোনো দিন পরিবর্তন আনতে পারবে না। বরং তারা সুদানের এই সংকটাবস্থা আরও তীব্র করে তুলবে।

সুদানের যুদ্ধের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সামান্য নয়। মানুষের প্রাণ, রাজনীতি, রাষ্ট্রীয় সম্পদসহ আরও অনেক কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, যারা অভ্যুত্থান পরিচালনা করছে এবং এই মুহূর্তে বিভিন্ন স্থান থেকে আন্দোলন চলছে, তাদের মধ্যে আলোচনা প্রয়োজন। তাদের সরাসরি সাক্ষাৎ ও মতামতের পরিপ্রেক্ষিতে একটি সমন্বয়মূলক নিয়ম তৈরি করতে হবে। কারণ রাষ্ট্র অচল হয়ে থাকতে পারে না। আবার দীর্ঘ সময় ধরে একটি রাষ্ট্রের কার্যনির্বাহী ক্ষমতা রাজনৈতিক জটিলতার ঘূর্ণাবর্তে আটকে থাকতে পারে না। আমাদের আবার পুনর্গঠিত হতে হবে। থেমে থাকলে চলবে না। সুদানের মানুষ দেখিয়েছে, তারা শান্তির পক্ষে। যুদ্ধ তাদের কাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নয়।


  • চেয়ারম্যান, এসপিএলএম-এন রেভল্যুশনারি ডেমোক্র্যাটিক

 

সুদান ট্রিবিউন থেকে ঈষৎ সংক্ষেপিত ভাষান্তর : আমিরুল আবেদিন

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা