× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

সম্পাদকীয়

খাদ্যের অপচয় বন্ধে সচেতন হোন

সম্পাদক

প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৩ ১৫:১০ পিএম

খাদ্যের অপচয় বন্ধে সচেতন হোন

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ক্ষুধার্ত মানুষের আহাজারির প্রেক্ষাপটে লিখেছিলেন, ‘দারিদ্র্য অসহ/পুত্র হ’য়ে জায়া হয়ে কাঁদে অহরহ/আমার দুয়ার ধরি! মনে পড়ছে কবি সুকান্তের সেই খেদোক্তিও, ‘ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।’ এই গৌরচন্দ্রিকার উপক্রমণ ঘটিয়েছে আকার-আঙ্গিকে ছোট হলেও প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এ প্রকাশিত একটি উদ্বেগজনক প্রতিবেদন। ‘দেশে বছরে দেড় কোটি টন খাবার নষ্ট হয়’ শিরোনামে ১২ জুন প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে প্রতিবছর ১ কোটি ৬৫ লাখ টন খাবার নষ্ট হয়, যা জনপ্রতি ৬৫ কেজি। বিস্ময়কর হলো, এর মধ্যে ৬১ শতাংশ নষ্ট হয় বাসাবাড়িতে, ২৬ শতাংশ খাবার দোকান, পরিবহন ও অন্য জায়গায়। ১১ জুন রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে আইএফসি দশম আন্তর্জাতিক নিরাপদ খাদ্য ফোরামের প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে। আমরা জানি, মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো খাদ্য। অথচ বিশ্বব্যাপী দেখা যাচ্ছে খাদ্য অপচয়ের এক ভয়ঙ্কর চিত্র এবং এর বাইরে আমরাও নই।

গত বছর জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এক প্রতিবেদনে জানা যায়, বিশ্বে প্রতিবছর যে পরিমাণ খাদ্যের অপচয় হয় বা ময়লার ঝুলিতে ছুড়ে ফেলা হয়, এর তিন ভাগের এক ভাগ খাবার দিয়ে ৮৭ কোটি ক্ষুধার্ত মানুষের ক্ষুধা নিবারণ সম্ভব। গত বছরই জাতিসংঘের খাদ্য ও ‍কৃষি সংস্থা এফএওর বাংলাদেশে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা যায়, উচ্চআয়ের পরিবারে প্রতিমাসে মাথাপিছু ২৬ কেজি খাদ্যের অপচয় হয়। কৃষি বিভাগের তথ্যানুযায়ী বর্তমানে দেশে বছরে গড়ে চাল উৎপাদিত হয় প্রায় তিন কোটি নব্বই লাখ মেট্রিক টন। এর মধ্যে মানুষের খাবার হিসেবে ব্যবহৃত হয় প্রায় আড়াই কোটি মেট্রিক টন। খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত এই পরিমাণ চাল থেকে অপচয়ের চিত্র কতটা স্ফীত, তা প্রতিদিনের বাংলাদেশ-এর ওই প্রতিবেদন থেকেই ধারণা করা যায়। বাসাবাড়িতে ৬১ শতাংশ খাদ্য অপচয়ের যে চিত্র উঠে এসেছে, তা এক কথায় বিস্ময়কর, যুগপৎ উদ্বেগজনক। সমাজে বৈষম্যের ছায়া ক্রমবিস্তৃত হওয়ার খবরও সংবাদমাধ্যমে ইতোমধ্যে কম উঠে আসেনি। দেশে উন্নয়ন-অগ্রগতির এত ডামাডোলের মধ্যেও নির্দিষ্ট শ্রেণির হাতে সম্পদ কুক্ষিগত হওয়ার পাশাপাশি মোট জনগোষ্ঠীর একটি উল্লেখযোগ্য অংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে, এই বার্তা নিঃসন্দেহে অপ্রীতিকর। তাতেও প্রতীয়মান হয়, বৈষম্য ব্যবধানের দাগ কতট মোটা করেছে। সম্ভাব্য খাদ্য সংকটজনিত পরিস্থিতিতেই শুধু নয়, খাদ্যের অপচয় কোনোভাবেই স্বস্তির বিষয় হতে পারে না।

খাদ্যশস্য বা খাদ্যপণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের বিস্ময়কর উত্থানের খবরও গত বছরেরই। স্বাধীনতা অর্জনের ৫২ বছর অতিক্রান্তে ২০টি খাতে বিশ্বের শীর্ষ দশে বাংলাদেশের অবস্থান নিঃসন্দেহে সুখকর বার্তা। সীমিত সম্পদ নিয়ে যে দেশটির যাত্রা শুরু হয়েছিল, পাঁচ দশকে সেই প্রেক্ষাপট পাল্টে বাংলাদেশের সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বদলে যাওয়ার এই গল্প আরও সুবিন্যস্ত হতো যদি বৈষম্যের ছায়া সরিয়ে অধিকারের সমতল ভূমি নিশ্চিত করে খাদ্যসহ মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো পরিপূর্ণভাবে ভোগ করার ক্ষেত্রে সমতার আলো ছড়াত। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদেরই জ্ঞাতে-অজ্ঞাতে অপরিণামদর্শী কিছু কর্মকাণ্ডের কারণে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতার দেয়াল কোনো কোনো ক্ষেত্রে অপসারণ করা যাচ্ছে না। এবং এর অধিকাংশের পেছনেই রয়েছে মানবসৃষ্ট কারণ। খাদ্যের অপচয় এ থেকে বিচ্ছিন্ন কিছু নয়।

দুঃখজনক হলেও সত্য, সুষম খাদ্য দূরে থাকÑ দেশে এখনও প্রত্যেক নাগরিকের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সরকার অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু এও মনে রাখা বাঞ্ছনীয়, খাদ্য সহায়তা মানে কেবল চাল নয়, পুষ্টিকর অন্য খাবারও জরুরি। আবার একই সঙ্গে এও সত্য, খাদ্য সহায়তা স্থায়ী কোনো সমাধান নয়। যে পরিমাণ খাবার অপচয়ের পরিসংখ্যান জানা গেল তাতে সঙ্গতই প্রশ্ন জাগে, এমনটি কী আত্মঘাতী নয়? খাদ্যের অপচয় রোধ করতে ব্যক্তির দায় অনেক বেশি, এ কথা ভুলে না গেলেই মঙ্গল। এর জন্য দরকার সচেতনতা, একই সঙ্গে সহমর্মিতাও। মার্কিন চিন্তাবিদ ম্যালকম ফোবর্সের একটি উক্তি স্মরণযোগ্য। তিনি বলেছেন, খাদ্য মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি হতে পারে, কিন্তু ভালো খাদ্য হলো আত্মার জ্বালানিস্বরূপ। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ প্রেক্ষাপটে খাদ্যের অপচয় রোধে সতর্ক হওয়ার বিকল্প নেই। রক্ষা করতে হবে উৎপাদনযোগ্য কৃষিজমিও। হোটেল, রেস্তোরাঁ, যেকোনো অনুষ্ঠানে খাদ্য যেন নষ্ট না হয়, মনোযোগ দিতে হবে সেদিকেও। 

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা