× ই-পেপার প্রচ্ছদ বাংলাদেশ রাজনীতি দেশজুড়ে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য খেলা বিনোদন মতামত চাকরি ফিচার চট্টগ্রাম ভিডিও সকল বিভাগ ছবি ভিডিও লেখক আর্কাইভ কনভার্টার

আন্তর্জাতিক শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস

শ্রমের চাপে বিপন্ন জীবন

লোপা মমতাজ

প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৩ ১৪:০২ পিএম

আপডেট : ১২ জুন ২০২৩ ১৬:১২ পিএম

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

বেশ ক’বছর আগের কথা, অভাবের তাড়নায় রাজধানীর বনশ্রীর একটি বাসায় কাজ করতে এসেছিল ১২ বছরের শিশু হাওয়া। বাবা শুনু মিয়া অভাব লাঘবের আশায় কিশোরগঞ্জের তাড়াইল উপজেলার নগরকুল গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে শিশুটিকে বনশ্রীর এক বাসায় কাজে দিয়ে যান।কিন্তু ওই বাসায় নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছিল শিশু হাওয়া। বাড়ির লোকেরা তার ওপর চালিয়েছিল অমানবিক নির্যাতন। শরীরে চটের বস্তা জড়িয়ে তাকে মারধর করেছিল। সারা শরীরে কালশিটে দাগ, আঘাতের চোটে একটি চোখে দেখতে পারছিল না, অনবরত নির্যাতনে তার শরীর কঙ্কালসার হয়ে গেছিল। প্রতিবেশীদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে শিশুটিকে উদ্ধার করে ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করেছিল পুলিশ। এত গেল এক হাওয়ার কথা। এমন অনেক হাওয়া অভাবের তাড়নায় নানারকম ঝুঁকিপূর্ণ সেক্টরে কর্মে নিয়োজিত হচ্ছে। আমরা সবার খবর হয়তো জানতেও পারি না।

শিশুশ্রম বিশ্বব্যাপী আলোচিত বিষয়। আমাদের দেশে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ থাকলেও প্রায় ১৩ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। তাদের মধ্যে ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশুই নিয়োজিত ঝুঁকিপূর্ণ কাজে। ২ লাখ ৬০ হাজার শিশু অপেক্ষাকৃত বেশি ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত। এ ছাড়া ৫ থেকে ১৭ বছর বয়সের মধ্যে সব মিলিয়ে সপ্তাহে কমপক্ষে এক ঘণ্টার কর্মে নিয়োজিত থাকে ৩৪ লাখ ৫০ হাজার শিশু। করোনাকালে যা আরও বেড়েছে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের। এই শিশুদের অনেকেই শারীরিক, মানসিক ও যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছে কর্মক্ষেত্রে। একটি উন্নত জাতি গঠনে শিশুশ্রম নিরসনের কোনো বিকল্প নেই। বাংলাদেশে শিশুশ্রম উদ্বেগজনক। যদিও দেশে সরকারি-বেসরকারিভাবে শিশুশ্রম নিরসনে কাজ করে যাচ্ছে তবুও এর ফল এখনও আশানুরূপ নয়।

বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ‘শ্রমে নিয়োজিত শিশুদের সুরক্ষা কর্মসূচি ’– এর আওতায় ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকা (কামরাঙ্গীরচর ও কেরানীগঞ্জ), কুমিল্লা, বরিশাল, যশোর ও খুলনায় একটি জরিপ পরিচালনা করে। জরিপে অংশ নেয় শ্রমে নিয়োজিত ৩৩ হাজার শিশু। জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রাম থেকে শহরে এসে কাজে নতুন যুক্ত হয়েছে ৩ হাজার ২৪০ শিশু। কাজ ছেড়ে স্কুলে ভর্তি হয়েছিলÑ এমন আড়াই হাজার শিশু করোনাকালে পরিবারকে সহায়তা করতে আবার কাজে ফিরে গেছে। আগের চেয়ে কম পারিশ্রমিকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত হয়েছে ২ হাজার ৪০০ শিশু। নতুন করে ৭ হাজার ৮০০ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত হয়েছে। ভিন্ন আরেকটি জরিপে বলা হয়েছে, শিশু শ্রমিকের ৬৬ শতাংশ কৃষিতে, ১৮ শতাংশ শিল্প খাতে, ৪ শতাংশ পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে, ১২ শতাংশ গৃহভৃত্য ও অন্যান্য খাতে নিয়োজিত। বিভিন্ন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য কারণে দীর্ঘদিন ধরেই শিশুশ্রম বাংলাদেশে বিরাজমান। যদিও বাংলাদেশ সরকার ২০২১ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনের ঘোষণা দিয়েছে। ২০২৫ সালের মধ্যে চূড়ান্তভাবে শিশুশ্রম নিরসনের উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে।

আজ বিশ্ব শিশুশ্রম প্রতিরোধ দিবস। ২০০২ সালে, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO) শিশু শ্রমের সমস্যা দূর করার জন্য শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে বিশ্ব দিবসের সূচনা করে। প্রতি বছর ১২ জুন শিশুশ্রম বিরোধী দিবস হিসেবেও পরিচিত। দিবসটির লক্ষ্য শিশুশ্রমের দুর্দশার বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করা এবং তাদের সাহায্য করার জন্য অনেক প্রচারণা চালানো হয়। শিশুশ্রম এমনই একটি সমস্যা, যা লাখ লাখ শিশুর স্বপ্ন কেড়ে নেয়। যদিও আমরা জানি, প্রতিটি শিশুর পড়াশোনা করার এবং তাদের স্বপ্ন পূরণ করার অধিকার রয়েছে।

আমরা এও জানি ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে বাংলাদেশে অনেক ভালো আইন রয়েছে। কিন্তু আইনের কার্যকর প্রয়োগ হয় না বলে সমাজের প্রায় প্রতিটি সেক্টরে অবাধে শিশুশ্রম রয়ে যাচ্ছে। মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ায় একদিকে শিশুর স্বাস্থ্য ভেঙে যাচ্ছে এবং অন্যদিকে আমাদের শিশুরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে আমরা একটি সুশিক্ষিত জাতি গঠনে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ছি। যদিও আমরা কথায় কথায় বলে থাকি আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আর সেই ভবিষ্যতের দিকেই আমাদের নজর সবচেয়ে কম। এ অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। শিশুশ্রম সম্পূর্ণরূপে নিরসনের আগ পর্যন্ত শ্রমের সঙ্গে জড়িত শিশুদের কারিগরি শিক্ষা প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। সমাজে ব্যাপকভাবে সচেতনতা বাড়াতে হবে। শিশুশ্রমের মূল কারণ দারিদ্র্য। শিশুকে দারিদ্র্যমুক্ত করতে হবে। বাবা-মায়ের স্নেহে, আদরে বড় হোক। স্কুলে পড়াশোনা করুক। আমরা চাই পৃথিবীর সব শিশু তার শৈশব উপভোগ করুক।

 

·                    লেখক ও সাংবাদিক

শেয়ার করুন-

মন্তব্য করুন

Protidiner Bangladesh

সম্পাদক : মুস্তাফিজ শফি

প্রকাশক : কাউসার আহমেদ অপু

রংধনু কর্পোরেট, ক- ২৭১ (১০ম তলা) ব্লক-সি, প্রগতি সরণি, কুড়িল (বিশ্বরোড) ঢাকা -১২২৯

যোগাযোগ

প্রধান কার্যালয়: +৮৮০৯৬১১৬৭৭৬৯৬ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (প্রিন্ট): +৮৮০১৯১১০৩০৫৫৭, +৮৮০১৯১৫৬০৮৮১২ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন (অনলাইন): +৮৮০১৭৯৯৪৪৯৫৫৯ । ই-মেইল: [email protected]

সার্কুলেশন: +৮৮০১৭১২০৩৩৭১৫ । ই-মেইল: [email protected]

বিজ্ঞাপন মূল্য তালিকা