প্রেক্ষাপট
ছবি: সংগৃহীত
বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণা বলছে, মানুষের শরীর দৌড়ের উপযুক্ত নয়। কিন্তু অদম্য মানুষ সব সময় অস্বীকার করতে চেয়েছেন এই তথ্য। বিশ্বের জনসংখ্যার বিরাট একটি অংশ এই তথ্য ভুল প্রমাণ করে লম্বা দূরত্বের দৌড় অর্থাৎ ম্যারাথনে নিজেকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। তারা নিজেদের এতটাই উচ্চপর্যায়ে নিয়ে গেছেন যে, ৪২.২ কিলোমিটার টানা দৌড়ানোর মতো যন্ত্রণাদায়ক কাজটি করে যাচ্ছেন আনন্দে সঙ্গে। কেউ কেউ আবার এই দূরত্ব টপকিয়ে নাম লেখাচ্ছেন ৫০ কিলোমিটারের ঘরে, কেউ আবার ১০০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে ১০০ মাইল, এমনকি ৪৮ ঘণ্টা থেকে ছয় দিনের দৌড়ে অংশগ্রহণ করে পাড়ি দিচ্ছেন শত শত মাইল। কিন্তু এই অভিযাত্রার অমসৃণ পথে বয়স, শারীরিক সক্ষমতার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে প্রথমেই বলেছি, অদম্য মানুষ সব সময় অনেক কিছু ছেঁটে ফেলেন। ম্যারাথনের অঙ্গনে সে কাজটি করলেন মো. মনিরুজ্জামান। ৫৪ বছর বয়সে তার অদম্যতা আমাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। গত ২৯ মে এভারেস্ট ম্যারাথনে অংশ নিয়ে পূর্ণ দূরত্বের পুরো পর্ব সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন।
এভারেস্ট ম্যারাথনে
এ বছর ২৯টি দেশের মোট ২০৫ জন অংশ নিয়েছিলেন। সেখানে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন পঞ্চাশোর্ধ্ব
মনিরুজ্জামান। এভারেস্ট পর্বতের বিরূপ আবহাওয়া, উচ্চতা এবং শ্বাস-প্রশ্বাসের অস্বাভাবিকতার
জন্য দুদিন বেজক্যাম্পে অবস্থান করেন। তিনি এভারেস্টে সম্পূর্ণ একা এক বাংলাদেশি, নিজের
দেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন। মনে এক ধরনের শঙ্কা। ম্যারাথনে তিনটি দূরত্বÑ ২১, ৪২ ও ৮০
কিলোমিটার। অলিম্পিক ম্যারাথনের সমান দূরত্ব তাকে অতিক্রম করতে হয় সম্পূর্ণ বিপদসঙ্কুল
এক পরিবেশে। সকাল ৭টায় ম্যারাথন শুরু হয়। কিন্তু সেখানেও প্রতিবন্ধকতা হয়ে দেখা দেয়
কুয়াশা। সূর্যের আলো দেখা দেওয়ার আগে ম্যারাথন শুরু করা যাবে না। অগত্যা অপেক্ষা করতেই
হলো। একপর্যায়ে যথারীতি ম্যারাথন শুরু হলো।
পর্বতে ওঠার চেয়ে
নামা বেশি কঠিন। বেজক্যাম্প থেকে বাজার নিচের দিকে হলেও সেই ট্রেইলে চড়াই-উতরাই দুটিই
আছে। চড়াই-উতরাই দৌড়ে পাড়ি দিতে হয়। একবার পাহাড়ে আরোহণ করতে হয় তো আরেকবার অবরোহণ।
৪২ কিলোমিটারের এই দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার সময় মনিরুজ্জামানের মনে অন্য কোনো ভাবনা ছিল
না। তিনি শুধু ভাবছিলেন, নিরাপদে তাকে এই পথ পাড়ি দিতে হবে। একটু ভুল হলেই ভবলীলা সাঙ্গ।
তখন তাকে সঙ্গ দিয়েছিলেন আরও দুই বয়স্ক। একজন কোরিয়ার, অন্যজন কানাডার। দুজনই তাকে
‘বাঙালি বাবু’ বলে ডাকতেন। মনিরুজ্জামান জানান, তাদের একজন বললেনÑ ‘তাড়াহুড়ো করো না।
আস্তে ধীরে আগাও। ভুল করা যাবে না।’ ৪২ কিলোমিটারের ম্যারাথন শেষ করতে মনিরুজ্জামানের
১০ ঘণ্টা ৩৬ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড সময় লাগে। সম্পূর্ণ নতুন এক আত্মবিশ্বাস অর্জনের জন্যই
তিনি এই ম্যারাথনে অংশ নিয়েছিলেন এবং অদম্য ইচ্ছা পূরণ করতে পেরেছেন ৫৪ বছর বয়সে।
মনিরুজ্জামান
এবারই প্রথম তার অর্জনের খাতা খুললেন এমন নয়। এর আগে ১২ বার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন।
দৌড়ের প্রতি তার ঝোঁক একটু বেশি। নিয়মিত অনুশীলন করেন। প্রাণবন্ত থাকতে পছন্দ করেন।
গৌরবের কথা নয়, অকপটে বলে গেলেন কতটা আতঙ্কিত ছিলেন এভারেস্ট ম্যারাথনের সময়, সেই অধ্যায়।
আবার একই সঙ্গে অর্জনের স্বস্তির কথাও বললেন। মনিরুজ্জামান দৃঢ়ভাবে বললেন, মানুষ বাঁচে
তার সক্ষমতা, প্রচেষ্টা ও ইচ্ছাশক্তির জোরে। পরিসংখ্যান কিংবা বয়সের ভার কখনও বাধা
হয়ে দাঁড়াতে পারে না কারও জীবনে যদি ইচ্ছা থাকে অদম্য।
·
সাংবাদিক
ও অনুবাদক